ইনসাইড ইকোনমি

করোনায় ভাঙছে বাংলাদেশের শিরদাঁড়া?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/05/2020


Thumbnail

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস হানা দেওয়ার অর্থাৎ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ২ মাস হলো আজ। এই দুই মাসের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে দেশে চলছে সাধারণ ছুটি বা লকডাউন। যেকোনো দেশে এক দু’দিন সবকিছু বন্ধ থাকলেই বিশাল আর্থিক ক্ষতি হয়ে যায়, আর এত সময় ধরে সেটা চললে ক্ষতির পরিমাণটা যে আকাশচুম্বী হবে, তা খুব সহজেই অনুমান করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, অর্থনীতি হলো একটা দেশের শিরদাঁড়ার মতো। যে দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী, সে দেশের শিরদাঁড়া তত মজবুত। আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও সে দেশ সহজে মাথানত করে না। আর বিশ্ব পরাশক্তিগুলোও সেই দেশকে সমঝে চলে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের এই শিরদাঁড়াটাই একটু একটু করে মজবুত হচ্ছিল। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তড়তড় করে এগিয়ে যাচ্ছিল এদেশ। আর বিশ্ব নতুনভাবে বাংলাদেশকে চিনতে বাধ্য হচ্ছিল। কিন্তু করোনার আঘাতে বাংলাদেশের সেই শিরদাঁড়াটাই কি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে? হলে সেটা কতটা, সেটাই একটু দেখে নেওয়া যাক-

কৃষি, সেবা ও শিল্প খাত

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাত গত দু মাসে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মোটা দাগে- কৃষি, সেবা এবং শিল্প খাতে ভাগ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে এখন সেবা খাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া শিল্পখাত ৩৫ শতাংশ এবং কৃষির অবদান এখন ১৪ শতাংশের মতো।

কৃষি মৎস ও প্রাণিসম্পদ খাতে অর্থনৈতিক অবরুদ্ধ অবস্থার কারণে প্রতিদিন ২শ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, শিল্প খাতে অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ১শ ৩১ কোটি টাকা। আর সেবা খাতে, প্রতিদিনের ক্ষতি হচ্ছে ২০০০ কোটি টাকা।

ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের বেহাল দশা

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৮০ লক্ষ শিল্প উদ্যোগ আছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই হচ্ছে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নিজস্ব হিসেবে সারাদেশে ৫৬ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।

পোশাক রপ্তানি

বাংলাদেশে করোনা হানা দেওয়ায়র পর যেই খাতটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে সেটা হলো তৈরি পোশাক শিল্প খাত। তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, করোনাভাইরাস বিস্তারের সময় থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত, অর্থাৎ গত দুইমাসে তাদের তিনশ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বাংলাদেশ এই খাতে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনায় ভিয়েতনাম অনেক ভালো অবস্থানে আছে। আর চীনেরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, এরকম অবস্থায় বাংলাদেশের অনেক বড় ক্রেতারা ভিয়েতনাম, চীন এমনকি ভারতেও চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রবাসী আয়

করোনায় গার্মেন্টস শিল্পের ক্ষতি নিয়ে অনেক কথাবার্তা হলেও প্রবাসী আয় নিয়ে তেমন কোনো কথা হচ্ছে না। কিন্তু এই খাতটি করোনার ফলে মহাসংকটে পড়তে যাচ্ছে বলের মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এপ্রিলে বাংলাদেশে প্রবাসীরা টাকা পাঠিয়েছেন গেলো বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ ভাগ কম। ফলে প্রায় আড়াই বছর পর প্রবাসী আয় নেমে আসে বিলিয়ন ডলারের নিচে। দেশের আমদানি, রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়েছে আরো আগেই। সাম্প্রতিক তথ্য উপাত্ত বলছে, আশংকাজনক ভাবে কমছে অর্থনীতির বড় শক্তি প্রবাসী আয়ও। করোনার কারণে এ বছরের প্রথম ৩ মাসে দেশে ফিরে এসেছিলেন প্রায় ৭ লাখ বাংলাদেশি। হিসাব বলছে, বাকি যে ৯৩ লাখের মত প্রবাসী বিভিন্ন দেশে রয়ে গিয়েছেন, কমেছে দেশে তাদের টাকা পাঠানোর পরিমাণও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এ বছরের প্রথম ২ মাসেও প্রবাসী আয় এসেছিল গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি। তবে এপ্রিলে যা কমেছে প্রায় ৩৫ ভাগ। এসেছে ৯৫ কোটি ডলারের মতো। গেল বছরের একই সময়ে যা ছিলো ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

বেকার হবে দেড় কোটি

করোনার কারণে অভ্যন্তরীণ ও রফতানিমুখী দুই ধরনের অর্থনীতিতেই স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। এই স্থবিরতার প্রভাব অচিরেই গিয়ে পড়বে চাকরির বাজারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস কারণে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। আর বাংলাদেশে এই সংখ্যাটা দেড় কোটি হতে পারে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এই দেড় কোটি মানুষ চাকরি হারালেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে অন্তত ৫ কোটি মানুষ (প্রতি পরিবারে গড়ে ৪ জন করে সদস্য)।

করোনায় বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতির হিসেব দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের জানিয়েছে সাধারণ ছুটির প্রথম একমাসে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ১ লাখ ২ হাজার ৩শ কোটি টাকা। যা দৈনিক কমপক্ষে ৩৩০০ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে প্রবৃদ্ধি কমে ২-৩ শতাংশে নেমে আসবে। তারা বলছে, এই মহামারি যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলে এবং সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে যায় তাহলে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হবে যা বাংলাদেশে -৫.২ পর্যন্ত হতে পারে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭