ইনসাইড গ্রাউন্ড

টাইগার ‘লিটল মাস্টার’ মমিনুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2017


Thumbnail

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ৬৭ তম টেস্ট ও ১০৪ তম ওয়ানডে ক্রিকেটার তিনি। এই বা-হাতি ব্যাটসম্যান ১৯৯১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৈকত সম্বলিত সমুদ্রস্নাত জেলা কক্সবাজারে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা মা হয়তো চেয়েছিলেন তাদের আদরের সন্তানটি পৃথিবীব্যাপী তাঁর সৌরভ ছড়াক! তাই নামটাও ঠিক করা হলো সৌরভ। ভাল নাম মমিনুল হক। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত জন্মস্থানেই পড়ালেখা করার পর ২০০৪ সালের জুলাই মাসে সৌরভ ভর্তি হন সাভার জিরানীতে অবস্থিত বিকেএসপির (বাংলাদেশ ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ক্রিকেট বিভাগে।

সমুদ্র পাড়ে বেড়ে উঠা এই ছোট খাট আকৃতির ছেলেটি যে একদিন বিশ্বক্রিকেটে নিজের সৌরভ ছড়িয়ে এ দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে সেটাই বা কে ভেবেছিল? ৫ ফিট সাড়ে তিন ইঞ্চি একজন ক্রিকেটারের ব্যাটে যে এতটা ধার থাকতে পারে সেটা এর আগে ক্রিকেট বিশ্বের খুব একটা বেশি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এ যেন ক্রিকেটের গ্রামার মেনে ব্যাট করা এক ক্লাসিকাল ব্যাটসম্যান।

খেলোয়াড়ী জীবনের শুরু থেকেই বয়সভিত্তিক ঘরোয়া ক্রিকেটে নির্ভরযোগ্য বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত মমিনুল । ২০০৮-০৯ মৌসুমে ঢাকা বিভাগীয় ক্রিকেট দলের হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেট দলের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মমিনুল হকের। ২০১০ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রথমে অভিষেক ঘটে একদিনের খেলায়, ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর টেস্টে অভিষেক ঘটে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অভিষেকেই ৫৫ রানের অর্ধ-শতক করেন ও সিরিজে ৫২.০০ রান গড়ে ১৫৬ রান সংগ্রহ করেন।

৮ মার্চ, ২০১৩ শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পর এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত ২২ টি টেস্টে ৪০ বার ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। খেলছেন ১১ টি অর্ধশতক ও ৪ টি অনবদ্য শত রানের ইনিংস। সর্বোচ্চ ১৮১ রান। ৪৬.৮৮ গড়ে ১৬৮৮ রান করা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, বাউন্ডারির বাইরে বল আছড়ে ফেলছেন ২০৫ বার। ওভার বাউন্ডারি মাত্র দুইটি। আরে তাতেই চাপা পড়েছে বিশ্বের নাম করা সব ব্যাটিং কিংবদন্তীদের কীর্তি। টানা ১১ ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ রান করা এই টাইগার ভেঙেছেন শচিন টেন্ডুলকার ও জন এডরিখ এর রেকর্ড, ভাগ বসিয়েছেন বিরেন্দর শেবাগ, গৌতম গম্ভীর ও ভিভ রিচার্ডসের মত ব্যাটসম্যানদের রেকর্ডে। এচাড়াও পেছনে ফেলেছেন গ্যারী সোবার্স, স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের মত ক্রিকেটারদের। 

বাংলাদেশের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করার এক অনন্য কীর্তিও আছে মমিনুলের ঝুলিতে। এর আগে ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা তামিম ২ টেস্টে ২৬৮ রান ছিলো সর্বোচ্চ। সেই সঙ্গে দুই টেস্ট সিরিজের হিসেবে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও এই লিটল টাইগারের দখলে।

মমিনুলের যত কীর্তি সবই টেস্ট ক্রিকেটে। তাই অনেকেই তাকে শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু এই জায়গা থেকে বের হতে চান এই বা-হাতি ব্যাটসম্যান।

সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও প্রমাণ করেছেন, তিনি শুধু টেস্ট ব্যাটসম্যান নন। ১৬ ম্যাচে ৩৮.৯৩ গড়ে করেছেন ৫৮৪ রান। স্ট্রাইক রেট ৩২.৪০। সর্বোচ্চ স্কোর ১৫২ রান। শতক একটি ও অর্ধশতক দুটি।

বিপিএলের ৪র্থ আসরেও ছিলেন সেরা ১০ রান সংগ্রাহকের তালিকায়। ১৫ ম্যাচে ২২.০৬ গড়ে করেছেন ৩৩১ রান। বল খেলেছে ৩০৬টি। স্ট্রাইক রেট ১০৮.১৬। অর্ধশতক ৩টি। সর্বোচ্চ স্কোর ৬৪ রান।

তাই টেস্ট ক্রিকেটের মত ক্রিকেটের অন্য সংস্করণেও মমিনুল ছড়াক তার সৌরভ। সেই সঙ্গে বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত পাড়ের ছেলেটি, টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক রানের মালিকদের একজন হয়ে উঠুক সেই প্রার্থনা এদেশের ১৬ কোটি ক্রিকেট পাগল মানুষের। রেকর্ড বইয়ে লিপিবদ্ধ হোক সৌরভময় সব কীর্তি। রচিত হোক একটি নামকরণের স্বার্থকতার গল্প!

বাংলা ইনসাইডার/ডিআর




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭