ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

প্রণব মুখার্জি : জীবন্ত কিংবদন্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2017


Thumbnail

ষাটের দশকের শেষের দিকে কোনো একদিন। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের সাউথ অ্যাভিনিউতে সরকারি বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজ্যসভার একজন সদস্য। চোখ ছিল সামনের রাষ্ট্রপতি ভবনের আস্তাবলে ঘোড়াগুলোর দিকে। পাশে দাঁড়ানো দিদিকে ঘোড়াগুলো দেখিয়ে তিনি বললেন, দেখেছো দিদি, রাষ্ট্রপতি ভবনের ঘোড়াগুলো কী সুন্দর। কত আদরযত্ন করা হয় ওদের। কত আরামে আছে। খাচ্ছে-দাচ্ছে, কোনো চিন্তা নেই। পরজন্মে আমি যদি রাষ্ট্রপতি ভবনের ঘোড়া হয়ে জন্মাতাম! ছোট ভাইয়ের মুখে ওই কথা শুনে দিদি বলেছিলেন, বালাই-ষাট, পল্টু তুই রাষ্ট্রপতি ভবনের ঘোড়া হবি কেন, তুই তো হবি রাষ্ট্রপতি।

দিদির কথা এমন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে কে ভেবেছিল? এ ঘটনার চার দশক পরেই সেই পাতিনেতাই যে রাষ্ট্রপতি হবেন তা যেন জানতেন তাঁর দিদি অন্নপূর্ণা দেবী। সেই কংগ্রেস নেতা আর কেউ নন। স্বয়ং প্রণব মুখার্জি।

ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি এবং রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র প্রণব মুখার্জি। রাজনীতিবিদ হিসাবে প্রণব মুখার্জি জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে আছেন। রাজনীতিতে তাঁর দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার জন্য সবার কাছে চাণক্য নামে পরিচিত ছিলেন। সাদামাটা জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মনও জয় করে নিয়েছিলেন তিনি।

১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেন প্রণব মুখার্জি। তাঁর বাবা কামদাকিংকরও ছিলেন রাজনীতিবিদ। তিনি কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। প্রণব মুখার্জি ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

ভারতের রাজনীতিতে একজন বাঙালির গুরুত্ব খুব বেশি ছিল না। কিন্তু প্রণব মুখার্জি বাঙালি হয়েও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিতে সক্ষম হন। ভারতের রাজনীতিতে তাঁর জনপ্রিয়তা এতো বেশিই ছিল যে রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর সকল রাজ্য থেকে সমর্থন পান। ৭১ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচনে জয়ী হন।

প্রণব মুখার্জির ছয় দশকের রাজনীতিতে দুইবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, রাজস্ব, জাহাজ চলাচল, পরিবহন, যোগাযোগ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন।

১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন প্রণব মুখার্জি। অর্থনীতিবিদ না হয়েও তিনি দুইবার অর্থমন্ত্রী হন। তিনি ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইনে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। অর্থনীতি বিষয়ে তাঁর কোনো কেতাবি জ্ঞান নেই। কিন্তু তারপরও ১৯৮৪ সালে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘ইউরোমানি’ বিশ্বের সেরা পাঁচ অর্থমন্ত্রীর তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করে।

দেশের প্রতি অবদান রাখার জন্য তাঁকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পদ্মবিভূষণ ও শ্রেষ্ঠ সাংসদ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক পরমাণু চুক্তি সই করেন। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের প্রতি তাঁর অনুভূতি রয়েছে অন্যরকম। স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির গ্রামের বাড়ি নড়াইলের ভদ্রবিলায়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অসামান্য অবদান রাখায় ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ’ সম্মাননা পান। সেসময় তিনি ভারতের রাজ্যসভায় মুজিবনগর সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের কথা প্রণব মুখার্জি সবসময়ই স্মরণ করেন। এমনকি তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে বিবাদ চলছে তা নিরসনে আলোচনায় বসার উদ্যোগও নিয়েছিলেন।

মহান এ নেতার রাষ্ট্রপতি হিসাবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ জুলাই। নতুন রাষ্ট্রপতি ২৫ জুলাই শপথ নেবেন। সারাবিশ্ব তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে যাবে। তিনি একজন অসাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ছিল না। রাজনীতিতে তিনি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

চলবে…

(রাষ্ট্রপতির দায়িত্বকাল শেষ হওয়ায় মহান এ রাজনীতিবিদের প্রতি বাংলা ইনসাইডারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে ধারাবাহিক এ আয়োজন)


বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭