ইনসাইড বাংলাদেশ

মধ্যবিত্তের জন্য কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/05/2020


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে ২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মোট ১৮টি প্যাকেজে ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেন। এসব প্যাকেজে একেবারে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য যেমন সহায়তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, ঠিক তেমনি উঁচুতলার শিল্পপতিদের জন্যেও বরাদ্দ করা হয়েছে লক্ষ কোটি টাকা। প্যাকেজগুলোতে প্রবাসীদের কথা ভাবা হয়েছে, গার্মেন্টস কর্মীদের কথা ভাবা হয়েছে, কৃষিজীবি, স্বাস্থ্যকর্মী, কৃষক, ক্ষুদ্র মাঝারি বা বৃহৎ ব্যবসায়ী- সবার কথা ভাবা হয়েছে। শুধু সেখানে জায়গা হয়নি মধ্যবিত্তদের, আরও স্পষ্ট করে বললে বেসরকারি চাকরিজীবিদের। যেই অংশটা হয়তো ঘুষের টাকা দিতে না পারায় সরকারি চাকরি জোটাতে পারেনি। যেই মানুষগুলো রিকশা-ভ্যানচালকদের মতো রাস্তায় নেমে কাজ করতে পারে না, কিন্তু চাকরিটা বাঁচাতে ঠিকই মুখ বুজে দিন রাত খেটে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজের বিশাল তালিকায় সবার জায়গা হয়েছে। শুধু এই মানুষগুলোই উপেক্ষিত থেকে গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে, প্রবাসীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, বেকারদের জন্য ৫০০ কোটি, পল্লি উন্নয়নে ৫০০ কোটি, ক্ষুদ্র মাঝারি বিভিন্ন শিল্পের জন্য ২০০০ হাজার কোটিসহ বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে ভাল এবং প্রশংসনীয়। এর ফলে গরীব মানুষ একটা অনিশ্চয়তার জীবন থেকে মুক্তি পেল। এটা নিঃসংকোচে বলা যায়। কিন্তু আমাদের সরকার বা পৃথিবীর কোনো সরকারই এই দুর্যোগ, সংকটে বা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মধ্যবিত্তের কথা ভাবে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজেও মধ্যবিত্তের জন্য কিছু নেই। অথচ করোনা সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেনীটা হলো মধ্যবিত্ত শ্রেণী।

বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেনী এমনই একটা অবস্থায় আছে, যাদের ধনীদের মতো অঢেল সম্পদ নেই। যারা চাইলেই ৬/৭ মাস কোনো কিছু উপার্জন না করেই চলতে পারে না। আবার নিম্নবিত্ত, গরীব মানুষের মতো তারা হাত পাততে জানে না। তারা লাইনে যেতে পারে না। এমনকি যখন ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ, আটা বিক্রি হয়, তখনো তারা ট্রাকের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে লজ্জাবোধ করে। নৈতিক মূল্যবোধ, কিন্তু আদর্শ এবং সামাজিক নীতি-নৈতিকতার কারণে মধ্যবিত্ত সবসময় নিজেকে গুটিয়ে রাখে। হাত পাততে ভয় পায়। নিজের অভাব, নিজের অনটন, নিজের সমস্যা নিজের মধ্যেই রেখে গুমড়ে থাকে। আর এ কারণেই আমরা দেখি যে, সমাজে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্র-সরকার সবসময় গরীবদের অনেককিছু করে। বড়লোকদের জন্যও ব্যাংকে ঋণ মওকুফ করে দেয়। তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য টাকা দেওয়া হয়। এককালীন অর্থ অনুদানও দেওয়া হয়। কিন্তু মধ্যবিত্তের জন্য কে করবে? কে ভাববে? মধ্যবিত্তের পাশে কী কেউ আছে?

করোনা সংকটে আমাদের দেশে চাকরি হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বহু কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তারা এখন জীবিকাহীন হয়ে পড়েছে। চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছে আরও অন্তত ৫০ লাখ মানুষ। এই মানুষগুলো না পারবে পথে নেমে কারও কাছে হাত পাততে না পারবে চুরি ছিনতাই করতে। সবচেয়ে বড় কথা হলো তাদের তেমন কোনো সঞ্চয়ও নেই যেটা দিয়ে তারা আপাতত চালিয়ে নিতে পারবে। যাদের যতসামান্য আছে সেটাও যথেষ্ঠ নয়। প্রতিদিনকার বা মাসের আয় থেকে টুকটাক যুতটুকু সঞ্চয় সেটা এই সংকটে খরচ হয়ে যাবে। ফলে একেবারে কপর্দকশূন্য হয়ে পড়বে তারা। করোনার এই সংকটে এই মানুষগুলোর কী হবে?

মধ্যবিত্তের যে স্বাস্থ্যঝুঁকি সেটাও একটা বড় সমস্যা। এই সময় যে মধ্যবিত্তরা বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল বা কম মূল্যের হাসপাতালে যে সুযোগ সুবিধা নিতো তা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই সময় মধ্যবিত্তরা বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।

মধ্যবিত্তের যে সামগ্রিক অনটন এবং সামগ্রিক শঙ্কা তা নিয়ে রাষ্ট্রের মাথাব্যাথা কতটুকু সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তার থেকেও বড় প্রশ্ন হলো, করোনার আগ্রাসনে যদি দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তাহলে খেটে খাওয়া মানুষ কোনোভাবে প্রাণটুকু বাঁচাতে পারলেও এই মধ্যবিত্ত শ্রেনী তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে তো?

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭