ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

এখনো ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2017


Thumbnail

ছয় সন্তানের মা তবারুকের মৃত্যু রহস্য ঘোলাটে রয়ে গেছে সবার কাছে। আফগানিস্তানের পশ্চিমে ঘোর নামক গ্রামে তবারুকের মৃত্যু নিয়ে চলছে কানাঘুষা। কেউ বলছে ঘোড়া থেকে পড়ে তিনি মারা গেছেন, কেউ বলছে তাঁকে ঘোড়া দিয়ে টেনে নিয়ে মারা হয়েছে আবার কেউ বলছে তাঁকে গুলি করে মারা হয়েছে।

তবারুকের মেয়েকে গত বছর প্রতিবেশি সাঈদ আহমেদ নিপীড়ন করেন। এতে সে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে গর্ভপাত করায় তাঁর মা। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে দেখেন গ্রামের মুরুব্বিরা এক সভার আহ্বান করেছে। সভায় সাঈদ নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করেন। মুরুব্বিরা তবারুকের পরিবারকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে।

সেদিন রাতেই তাঁরা গ্রাম ছেড়ে রওনা হয় নতুন আবাসের সন্ধানে। তবারুক ছিলেন ঘোড়ার পিঠে আর তাঁর মেয়েকে ওঠানো হয় মোটরসাইকেলে। এসময় তবারুকের স্বামী, ভাইরা ও গ্রামের দুইজন মুরুব্বি তাঁদের অনুসরণ করছিল। এসময় আচমকা তবারুক পেছনে পড়েন। তাঁর ছেলেদেরকে বাবা কিছুক্ষণ পর এসে বলেন তবারুক মারা গেছেন ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে।

তবারুকের মেয়েকে ভাইয়েরা শোনায় ভিন্ন কথা, তাদের বাবা হঠাৎ তবারুক নিয়ে দূরে সরে যান। সঙ্গে ছিল গ্রামের দুই মুরুব্বি। কিছুক্ষণ পর তারা বন্দুকের গুলির আওয়াজ শুনতে পায়।

তবারুকের গল্প আফগানিস্তানে খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। নারীরা এখানে এখনো চরমভাবে নিগৃহীত। কম বয়সী মেয়েদের এখানে বিপুল পরিমাণ যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে দেওয়া হয়। নারীদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। অধিকাংশ নারীদের স্বামীরা ইরানে বা দূরে কোথাও চলে যান কাজের উদ্দেশ্যে। দিন দিন এ নারীরা যখন বড় হতে থাকে অন্য পুরুষের প্রতি অনুভূতি তৈরি হতে থাকে।

নারীরা যখন নিজেদের জীবনসঙ্গী পছন্দ করে নেন তখন তাঁদের সম্মান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়। ১৯ বছর বয়সী আজিজ গুলকে এক রাতেই হত্যা করে মাটিতে পুতে ফেলা হয়। পুলিশের নথির তথ্য অনুযায়ী, গুল তাঁর ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রাস্তায় ডাকাত দল তাঁদেরকে ধরে লুট করে এরপর হত্যা করে। কিন্তু তাঁর বাবা-মা শোনায় ভিন্ন গল্প। গুলকে তাঁর চাচার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যাভিচারের দায়ে গ্রামবাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

ঘোরে গত এক বছরে পুলিশের কাছে ১১৮টা মামলা জমা হয়। কিন্তু এ মামলার কোনো আসামি এখনো পর্যন্ত ধরা পড়েনি। সপ্তাহের পর সপ্তাহ মামলা জমা হচ্ছে কিন্তু অপরাধীদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না।

আফগানিস্তানে পশ্চিমাঞ্চলে ঘোর সবচেয়ে বঞ্চিত এলাকা যেখানে নারীরা সঠিক বিচার পায় না। নারীর ওপর নির্বিচারে অত্যাচার করে যাচ্ছে স্থানীয়রা। মুক্তি বা স্বাধীনতা কাকে বলে জানে না সে এলাকার নারীরা। এক অন্ধকার কূপের মধ্যেই চলছে তাঁদের জীবন। সরকার আফগানিস্তানকে তালেবান শাসন মুক্ত ঘোষণা করলেও নারীরা রয়ে গেছে সেই অনুশাসনেই। এ যেন মধ্যপ্রাচ্যের সেই অন্ধকার যুগ আইয়ামে জাহেলিয়া।


বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি     




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭