ইনসাইড গ্রাউন্ড

লিটন কি পারবে এবার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/07/2017


Thumbnail

দিনাজপুরের মানুষ যাঁকে বলে ‘দিনাজপুরের গিলি’। ব্যাট আর উইকেট এর পিছনে যাঁর দক্ষতা সমান। যাঁর হাত ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন কিছু রেকর্ড দেখেছে টাঈগার সমর্থকরা। তিনি লিটন কুমার দাস, যাঁকে মুশফিকের উত্তরসূরি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

লিটন এর ক্রিকেট জীবন শুরু তাঁর জন্ম শহর দিনাজপুরে। ১৯৯৪ সালে জন্ম নেওয়া এই তরুণ বিকেএসপি এর ছাত্র। পরিবারের বড় ভাই বাপ্পি দাসও ২য় বিভাগের ক্রিকেটার। হয়তো ক্রিকেটার হওয়ার অনুপ্রেরণা খুঁজে নিয়েছিলেন বড় ভাই এর কাছ থেকেই। কিন্তু পরিবার কিংবা বিকেএসপির ছায়া ছাড়িয়ে লিটন কুমার দাসের ক্রিকেটার হওয়ার পেছনের কারিগর আবু সামাদ মিঠু। দিনাজপুর জেলা ক্রিকেট টিমের কোচ আবু সামাদ মিঠু অনেকের কাছে একজন সাধারণ কোচ এর নাম। কিন্তু লিটন দাসের কাছে এই নামের মাহাত্ম্য একটু বেশি। কারণ লিটনের ক্রিকেট এর হাতেখড়ি যে এই মানুষটির হাত ধরেই।

দিনাজপুর অঞ্চলে খেলেছেন ‘প্রচেষ্টা ক্রিকেট ক্লাব’ এর হয়ে, সেখান থেকেই যাত্রা বিকেএসপিতে। পরবর্তীতে তিনি বয়সভিত্তিক প্রায় সব দলে খেলেছেন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব১৯ এবং অনূর্ধ্ব ২১ এর পক্ষে দুর্দান্ত সব ইনিংসের পাশাপাশি উইকেট রক্ষক হিসেবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। যিনি এখন ফুল তিনি যে কুঁড়ি থাকার সময় ঝলক দেখান নি, তা কিন্তু নয়।

২০১০ সালে অনুষ্ঠিত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ইয়াং টাইগার্স জাতীয় স্কুল ক্রিকেট এ ৮ ম্যাচে ৪১৪ রান আর ১৫ ডিসমিসাল করে ৫৩৯ স্কুলের মধ্যে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিল বিকেএসপি’র এই তরুণ। পরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জাত প্রমাণ করেন দিনাজপুরের ক্রিকেটার লিটন দাস। অস্ট্রেলিয়ার কঠিন কন্ডিশনে ৬ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৬২ রান করেন লিটন। সেখানেই থেমে থাকেনি ডান হাতি এই ব্যাটসম্যান। ২০১৪ তে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে প্লেট ফাইনাল এ ৭৫ বলে ৮০ সহ ৬ ম্যাচে ৫০ গড়ে তিনি করেন ২০০ রান।

তারপর থেকে বয়স ভিত্তিক দল বাদেও ঘরোয়া ক্রিকেট এ তাঁর জয়রথ চলছেই। ২০১৪ সালের জাতীয় লিগে এক অভাবনীয় রেকর্ড করেন লিটন দাস। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে শুরু হওয়া জাতীয় লিগে এর আগে কোন ব্যাটসম্যান ৪ টির বেশি সেঞ্চুরি করতে পারেন নি। কিন্তু গতবারের লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১০৭ করে এক আসরে সবথেকে বেশি ৫ টি সেঞ্চুরি করে নতুন এক কীর্তি গড়েন তিনি।

৪টি শতকের পাশাপাশি অর্ধশতক ছিল ৩ টি। সেই সঙ্গে রেকর্ড করেছেন আরেকটি। ১৩ বছর পর জাতীয় লিগে কোন ব্যাটসম্যান ১ হাজার রান পার করেন। ২০০১-২০০২ মৌসুমে ১৫ ইনিংসে ১০১২ রান করেন চট্টগ্রামের মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। আর লিটন করেন ১০২৪। তাও কিনা নান্নুর থেকে ২ ইনিংস কম ব্যাট করে!

উইকেট এর পিছনেও লিটন কম যান না। এর প্রমাণ সেই বয়সভিত্তিক টিম থেকেই দিয়ে আসছেন। ২০১৫ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা উইকেটকিপার। ঢাকা আবাহনীর হয়ে ১৬ ম্যাচে ২২ টি কাচ আর ৭ টি স্ট্যাম্পিং করেন এই উইকেট ব্যাটসম্যান।

২০১৫ জাতীয় লিগে ৮৫.৩৩ গড়ে করেছেন ১০২৪ রান। যার মধ্যে রয়েছে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৫টি সেঞ্চুরির জাতীয় রেকর্ড। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগেও আবাহনীর হয়ে ৪২.৮৭ গড়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৮৬ রান করেছেন।

কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগেও দেখিয়েছেন নিজের ব্যাটিং ঝলক। ১৪ ম্যাচে ৫৩.৭১ গড়ে করেছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৭৫২ রান। স্ট্রাইক রেট ১০৮.৯৮। শতক দুইটি ও অর্ধশতক পাঁচটি। সর্বোচ্চ স্কোর ১৩৬ রান।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের জাত চেনালেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেন নিজেরেই ছায়া হয়ে থাকেন লিটন। দু-একটি ইনিংসে ভালো করলেও ব্যর্থতার পাল্লাটাই বেশি ভারী। তবে লিটন এখন জাতীয় দল নিয়ে ভাবেন না। তিনি পারফর্ম করতে চান। চান আরেকবার সুযোগ।

গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান থেকে বিকেএসপি, বিকেএসপি থেকে বিশ্বদরবারে- এভাবেই জ্বলে উঠুক লিটন দাস। 


বাংলা ইনসাইডার/ডিআর





প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭