ইনসাইড আর্টিকেল

কোরআন হাদীসের আলোকে জাহান্নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/05/2020


Thumbnail

শরিয়াতে জাহান্নাম বলতে বোঝায় পাপীদের জন্য নির্দিষ্ট পরকালের আবাসস্থল, যারা মহান রাব্বুল আলামীনের ক্ষমা লাভ করবে না। পবিত্র কোরআন, সহীহ হাদিসে ও ধর্মীয় আলেমদের লেখাতেও জাহান্নামের বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে জাহান্নামের সাতটি স্তর ও সাতটি দরজার উল্লেখ রয়েছে।

মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস থেকে জানা যায়, উনারা একদা নবী করীম (সা.) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় একটি বিকট শব্দ শোনা গেল। নবী করীম (সা.) বলেন, তোমরা কি জান এটা কিসের শব্দ? আমরা বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই এ ব্যাপারে ভাল জানেন। তিনি বলেন, এটি একটি পাথর, যা আজ থেকে সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, আর তা তার তলদেশে যেতে ছিল এবং এত দিনে সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন জান্নাত। আর অমান্যকারীদের জন্য জাহান্নাম। যা বর্তমানেও বিদ্যমান এবং কখনই তা ধ্বংস হবে না। তিনি মানুষ ও জ্বিন জাতি সৃষ্টি করার পূর্বেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা আল ইমরানে জাহান্নামের  বিষয়ে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, তোমরা জাহান্নামকে ভয় কর যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য। সূরা নাবা’র একটি আয়াতে বলা হয়, নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল।

অসংখ্য হাদীসের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীন জাহান্নামের বিষয়ে বান্দাদের সতর্ক করেন। বুখারি ও মুসলিম শরীফে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় নবী করীম (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থানস্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থানস্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থানস্থল দেখানো হয়) আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত অন্য আরেকটি হাদীসে নবী করীম (সা.) বলেন, সূর্যগ্রহণ হল। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমিতো জান্নাত দেখছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচারণ কর, অতঃপর সে তোমার হতে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না।

সেইসাথে হাশরের দিনে কাফিরদের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুখারি শরিফের একটি হাদীস থেকে জানা যায়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেন, কাফিরদেরকে হাশরের মাঠে মুখের মাধ্যমে হাঁটিয়ে উপস্থিত করা হবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! মুখের ভরে কাফিরদেরকে কিভাবে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে? তিনি বললেন, দুনিয়াতে যে সত্তা দু’পায়ের উপর হাঁটান, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন মুখের ভরে হাঁটাতে পারবেন না? তখন কাতাদাহ (রা.) বললেন, আমাদের প্রতিপালকের ইয্যতের কসম! অবশ্যই পারবেন।

এই বিষয়ে বুখারি শরিফের অন্য আরেকটি হাদীস থেকে জানা যায় নবী করীম (সা.) বলেন, মানুষকে হাশরের মাঠে উঠানো হবে শূন্য পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাৎনা বিহীন অবস্থায়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছা.)! তখন তাহলে পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের দিকে তাকাবে। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, হে আয়েশা! এরকম ইচ্ছে করার চেয়ে তখনকার অবস্থা হবে অতীব সংকটময়। (কাজেই কি করে একে অপরের দিকে তাকাবে)।

তাই পবিত্র এই মাহে রমজান থেকেই আমরা যেন দ্বীনের পথে চলতে পারি। সেইসাথে আল্লাহর দেওয়া বিধি বিধান ও ইসলামের আলোকে নিজের জীবনকে আলোকিত করতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। আশা করি মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজতে রাখবেন।    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭