ইনসাইড হেলথ

করোনার ভ্যাকসিন আসতে লাগবে ১০ বছর!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/05/2020


Thumbnail

গোটা দুনিয়ার মানুষের জীবন আর জীবিকা এলোমেলো করে দিয়েছে সার্স -২ বা করোনাভাইরাসে। উন্নত দেশগুলো একেবারেই নাজেহাল। জ্ঞান, বিজ্ঞান, অর্থ-বিত্তে পৃথিবীর অন্যতম সেরা দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। শিকারির বন্দুকের ছররা গুলি খেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি মরার মত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এর প্রতিকারের জন্য দুনিয়া জুড়ে বিজ্ঞানীরা রাতদিন কাজ করে চলেছেন, কিন্তু বাস্তবে কোন আশার আলো এখনো দেখা যায় না। যা শোনা যাচ্ছে তা  অনেকটাই অনুমান নির্ভর প্রত্যাশিত সত্যে।    

বিবিসি শুক্রবার এক অনলাইন প্রতিবেদনে বলে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিন ‘ম্যাকক’ প্রজাতির ছয়টি বানরের দেহে প্রয়োগের পর দেখা গেছে, তা করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগের সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এছাড়া এর কার্যকারিতা যাচাইয়ে এক হাজার মানুষের দেহে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ চলছে। তাই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন গবেষকরা এর কার্যকারিতা নিয়ে বেশ আশাবাদী।

বিবিসি শুক্রবার এক অনলাইন ঐ একই প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মহামারি করোনাভাইরাসের এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিন বানরের ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও তা মানুষের ক্ষেত্রেও যে শতভাগ কার্যকর হবে তার নিশ্চয়তা এখনই দেওয়া যাচ্ছে না।

কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে বানরের উপর প্রয়োগ করে ব্যর্থ হয়েছে অক্সফোর্ডের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন। ছয়টি বানরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এই ভ্যাকসিন বানরগুলোর দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে পারেনি। ছয়টি বানরই করোনায় সংক্রমিত। ফলে এই ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্ববাসীর আশায় গুড়ে বালি পড়লো।

দ্য টেলিগ্রাফ আরও জানিয়েছে, ছয়টি বানরের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছে। বানরের উপরে সফল না হওয়ার কারণে এই ভ্যাকসিন মানুষের উপর কতটুকু ফলদায়ক হবে তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

তবে এই ভ্যাকসিনের কিছুটা সাফল্য আছে। তা হলো- ৩টি বানরকে এক ডোজ করে ভ্যাকসিন দিয়ে দেখা যায় যে, ১৪ দিনের মধ্যে তারা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করতে পেরেছিল। আর বাকি বানরগুলোর দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল ২৮ দিন পর। ভ্যাকসিনটি উচ্চমাত্রার ডোজ প্রয়োগ করেও দেখা গেছে যে, বানরগুলোর শ্বাসতন্ত্রকে ভাইরাসমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।  

এ বিষয়ে মলিকিউলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জনাথন বল বলেন, ভ্যাকসিনটি পরীক্ষার পরে যে ডাটা পাওয়া যাচ্ছে, তা থেকে মনে হচ্ছে না যে, এটা করোনার সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারবে।
আমেরিকান কোম্পানি মোদার্না আটজন ব্যক্তির উপর করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা গেছে যে ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ছিল এবং সমস্ত গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছিলেন।  

ভ্যাকসিন মানব দেহে পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ে সবুজ সংকেত অর্জন করেছে। গত সপ্তাহে, মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা নিয়ন্ত্রক পর্যালোচনার গতি বাড়ানোর জন্য এই ভ্যাকসিনটিকে "ফাস্ট ট্র্যাক" স্ট্যাটাস দিয়েছিল।

দ্বিতীয় ধাপে, বা মাঝখানে, পরীক্ষার কার্যকারিতা আরও উন্নত করতে এবং সর্বোত্তম ডোজ সন্ধানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, মোদার্না বলেছে যে, তাঁরা এটি ২৫০এমসিজি ডোজ পরীক্ষা করার পরিবর্তে ৫০ এমসিজি ডোজ পরীক্ষা করার পরিকল্পনা বাদ দেবে।

মোদার্না বলেছিলেন যে এটি জুলাইয়ের মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ের বিচার শুরু হবে বলে তারা আশাবাদী।
COVID-19 এর জন্য বর্তমানে কোনও অনুমোদিত চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই এবং বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে নিরাপদ এবং কার্যকর ভ্যাকসিনটি পেতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় নিতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক শীর্ষ চিকিৎসক ক্যারোল সিকোরা মনে করেন যে, করোনার ভ্যাকসিন পেতে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সবাইকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। আগামী ১ বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক-ভাবেই করোনার প্রকোপ আসতে পারে মন্তব্য করেছেন এই বিশেষজ্ঞ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই সাবেক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং বাকিংহাম মেডিকেল স্কুলের ডিন তাঁর টুইটারে লিখেন, বিশ্বে যে কোনো একটি ভ্যাকসিন আসার আগেই প্রাকৃতিক-ভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে করোনাভাইরাস। তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার আগেই এই ভাইরাসটি স্বাভাবিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সত্যিকারের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা প্রায় সর্বত্রই ভাইরাসের এমন ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখছি, আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ধারণার চেয়েও  বেশি বলে আমার সন্দেহ হয়। তবে আমাদের ভাইরাসটির বিস্তার ধীরগতি রাখা দরকার। যদিও এটি আপনা-আপনি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।’  

করোনার ভ্যাকসিন সহসাই মানুষের হাতে আসছে না বলেই মত দিয়েছেন গবেষকরা। কারণ কয়েক বছরের গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চললেও ২০০২ সালের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ আরও জানিয়েছে, অক্সফোর্ড ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং চীনসহ এই মুহূর্তে বিশ্বে ১০০টির বেশি করোনার ভ্যাকসিনের কাজ চলছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, একটি কার্যক্ষম টিকা তৈরি করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগে যেতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে, ভ্যাকসিন ছাড়াই আমাদের করোনা মোকাবেলা করতে হবে।  

এমতাবস্থায় সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, সুসম খাবার আর কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া আমাদের মত দেশে কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের ফেরিঘাট, কাঁচা বাজার, আর সুপার মার্কেটের দিকে তাকালে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। চলায়, কাঁচা বাজারে, ফেরিঘাটে কিংবা সুপার মার্কেটের কোথাও শারীরিক দূরত্ব মানার কোন বালাই নেই। এমন আবেগী তাঁরা যে, সাহায্য পাওয়া সামান্য টাকায় সন্তানদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় বিজি তাঁরা। এভাবে কি করোনা ভাইরাস তাড়ান যাবে আমাদের দেশ থেকে?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭