ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

দীর্ঘায়ুর অর্থনীতি ও নতুন জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/07/2017


Thumbnail

চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে নানা কারণে মানুষের দীর্ঘায়ু এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ১৯৫০ সালে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ছিল। ২০১৫ সালে এটা আট শতাংশে পৌঁছায়। আর ২০৫০ সালে ১৬ শতাংশে পৌঁছানোর জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
 
প্রবীণ জনসংখ্যার এই বর্ধিত আকার বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। বিশেষত, উন্নত দেশগুলোয় জন্মহার হ্রাস এবং প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির জেরে বয়স্ক মানুষদের ওপর নির্ভরতার আনুপাতিক হার বেড়েছে। শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের ব্যাপারটাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব মিলিয়ে প্রবীণ জনসংখ্যাকে এখন বোঝা হিসেবে বিবেচনা না করে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে কার্যকর জনশক্তি হিসেবে রূপান্তর অপরিহার্য। সে জন্য অনেক পরিবর্তন প্রয়োজন।
 
অবসরগ্রহণের পর ভেঙে পড়ার পরিবর্তে নতুন করে কাজে লেগে পড়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। প্রবীণ ব্যক্তিরাও সম্ভাবনাময় নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন। তাঁদের এই ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক সহযোগিতা যোগ হলে দিন বদলাতে বিশেষ সময় লাগার কথা নয়। পরিবর্তনের এই ছোঁয়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে লেগেছে। শুধু তাই নয় দুঃসাহসিক ভ্রমণ থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক (ডেটিং) স্থাপনের ওয়েবসাইটে প্রবীণদের সক্রিয়তা কখনো কখনো রীতিমতো তরুণদের ছাপিয়ে যাচ্ছে।
 
প্রবীণদের অনেকে অর্থসম্পদ নিয়েও নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এ ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন খুব জরুরি। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তাঁদের কেবল সেই আত্মবিশ্বাসটা দরকার যে নিজেদের জন্য তাঁরা আরও বেশি খরচ করলেও সামলে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। নানা ঝুঁকি বা আশঙ্কা থেকে প্রবীণদের মুক্ত রাখতে সামাজিক নিরাপত্তা বা প্রবীণ তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে।
 
দীর্ঘায়ু লোকজনকে সক্রিয় রাখার কাজটা যত সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবতা তার চেয়ে ভিন্ন। তাঁদের উপযোগী করে কর্মস্থল বানাতে হবে। যেমন: প্রবীণদের ঘন ঘন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয়। সুতরাং তাঁরা যেখানে কাজ করবেন, সেখানে সেই সুবিধা রাখা অপরিহার্য। অসুস্থ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে উন্নত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। প্রযুক্তি এখন অনেক এগিয়েছে। কখনো কখনো সেটা তরুণদের চেয়ে প্রবীণদের জন্য বেশি সুফল বয়ে এনে দিতে পারে। বেশি বয়সী মানুষের স্মৃতিভ্রম বা ভুলে যাওয়ার অসুখ থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন বা অ্যাপ তাঁদের সহায়ক হতে পারে। যাঁরা কানে কম শোনেন, তাঁদের জন্যও আছে বিভিন্ন সহায়ক যন্ত্র বা হিয়ারিং অ্যাইড। প্রবীণদের জীবনযাত্রা আরও সহজ-সুন্দর করে তোলার জন্য প্রযুক্তি অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ জীবন লাভের পরও প্রবীণদের এখন নিজেদের পরনির্ভরশীল মনে করার সুযোগ কম। আশার কথা হলো, এসব প্রযুক্তিপণ্যের দাম দিনে দিনে কমে আসছে। মোটরগাড়ি, মুদি দোকানের জিনিসপত্র সরবরাহ থেকে ডাক্তার পর্যন্ত এখন স্মার্টফোনের অ্যাপের মাধ্যমে ফরমায়েশ করা যায়। প্রবীণ জনসাধারণের জন্য এই সেবা অত্যন্ত কার্যকর বা সহায়ক হচ্ছে। তাঁদের এই ধরনের প্রযুক্তিগত সুবিধার ব্যবহার শিখিয়ে দিলেই যথেষ্ট।
 
তাই দীর্ঘায়ু এখন আশীর্বাদ, সমাজের জন্য মোটেও বোঝা নয়। কীভাবে এই প্রবীণ জনগণকে সম্পদ হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে সেই কৌশল নির্ধারণের কাজটাই বড়। পশ্চিমা দেশে আজ যে শিশু জন্ম নিচ্ছে, সে হয়তো তার নাতি-নাতনির ছেলেমেয়েকে দেখে যেতে পারবে। জীবদ্দশায় সে সময় যেমন বেশি পাবে তেমনি কাজের সুযোগও আগের প্রজন্মের তুলনায় বেশি পাবে। সেই হিসেবে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ ও অর্থনীতির জন্যও তার দায়দায়িত্ব বা করণীয় বেড়ে যাবে। মানবজাতি এই ‘দীর্ঘায়ুর সুফল’ ঘরে তুলতে পারলেই সামগ্রিক মুনাফা অর্জিত হবে। একাধিক প্রজন্মের প্রবীণ জনগণ সম্মিলিতভাবে আশপাশের লোকজনের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।      
 
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭