ইনসাইড থট

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/05/2020


Thumbnail

এটা এখন প্রায় প্রমাণিত সত্যর মত যে, আমরা সহসাই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাচ্ছি না। তাই করোনা আমাদের জীবনে নিত্য সঙ্গীর মত হয়ে যাচ্ছে। যেমনটি হয়ে গেছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া। অনুমান নির্ভর কিছু ওষুধ দিয়ে আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করে কোন কোন ক্ষেত্রে ভালো ফল পাচ্ছি। অসুখ হলে আমরা কেন ওষুধ খায়? আসলে ওষুধ আর কিছুই না আমাদের দেহকে রক্ষা করার জন্য পাঠানো বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রে সজ্জিত একদল সৈন্য। তাইতো আমরা দেখি কোন অসুখ হলে মাঝে মাঝে ডাক্তার সাহেবগণ ওষুধ পরিবর্তন করেন। মানে নতুন অস্ত্রে সজ্জিত সৈন্য পাঠান শত্রু জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। ওষুধের মাধ্যমে পাঠানো সৈন্যরা শক্তিশালী হলে শত্রু পরাজিত হয়, আমরা সুস্থ হয়ে উঠি। তবে যুদ্ধে হেরে গেলে আমরাদের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়।     

একজন ব্যক্তির অস্থি মজ্জায় প্রতিদিন ১০০ বিলিয়নেরও বেশি রোগ প্রতিরোধক কোষ তৈরি করে আমাদের রক্ষার জন্য। আমাদের রক্তকণিকা স্টেম সেল থেকে উৎপন্ন যা আমাদের হাড়ের মজ্জার ভিতরে থাকে তৈরি হয়। অস্থি মজ্জা ট্রান্সপ্ল্যান্টের মতো ইমিউনো থেরাপিগুলি (স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টস নামে পরিচিত) দীর্ঘকাল ধরে লিউকেমিয়ার চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহ রোগীদের সুস্থ করতে ব্যবহার হয়ে আসছে।  

আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিদিন স্বতঃস্ফূর্ত লাখ লাখ রক্ত ক্যান্সার কোষকে হত্যা করে আমাদের রক্ষা করে থাকে। শুধু তাই নয় আমাদের এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের দেহকে অন্যসব ক্ষতিকর রোগের জীবাণুর হাত থেকেও রক্ষা করে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি শক্তিশালী আমরা তত বেশি সুরক্ষিত।   

যে সৈন্যরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তাঁরা আবার খুব কৌশলী। যুদ্ধের জন্য এরা প্রতিনিয়ত আমাদের দেহের মধ্যে কোটি কোটি নতুন রূপান্তর ঘটিয়ে নতুন শক্তি অর্জন করে আমাদের রক্ষা করে। আর এর জন্যই আমাদেরকে নিজ দেহের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। যেন আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে তার জন্য আমাদের সাহায্য করতে হয় নানা উপায়ে। ইদানীং একটা সহজ উপায় সারা দুনিয়া জুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে। তাহলে উপায়গুলো কী? একটু আলোচনা করে দেখা যেতে পারে যা আমাদের সবার জন্য খুব সহজেই মানা সম্ভব।  

এখন পবিত্র রমজান মাস। আর রমজানের সাথে উপবাস বা অটোফেজির মৌলিক পার্থক্য আছে। তাই আমরা রোজা শব্দটা ব্যবহার না করে  ‘বিরতি দিয়ে না খেয়ে থাকা বা উপোষ থাকা’ শব্দটা ব্যবহার করতে পারি। এখন দেখা যাক ‘বিরতি দিয়ে উপোষ থাকা’ বিষয়টি কী?

সারা দুনিয়ায় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বিরতি দিয়ে উপোষ থাকার ৬টি জনপ্রিয় উপায় বেছে নেওয়া হয়েছে। আমরা যদি বিরতি দিয়ে উপোষ থাকি তাহলে তা আমাদের শরীরের ওজন হ্রাস, বিপাকীয় স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সম্ভবত আয়ু বাড়াবে বলে সাস্থ্যবিজ্ঞানীরা দাবি করছেন। বিরতি দিয়ে উপোষ থাকার ৬টি পদ্ধতির প্রতিটি পদ্ধতিই কার্যকর হতে পারে, তবে কোনটি সবচেয়ে ভাল কাজ করে তা নির্ধারণ করে ব্যক্তির উপর নির্ভর করে।    

এক. হচ্ছে ১৬~৮ পদ্ধতি- এই পদ্ধতিতে প্রতিদিন ১৪ বা ১৬ ঘণ্টা উপোষ থাকা। উপোষ থাকার মধ্যে, আমরা দুটি, তিন বা আরও বেশি খাবারের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে পারি। এই উপোষ থাকার পদ্ধতিটি অনুসরণ করা আসলে রাতের খাবারের পরে কিছু না খাওয়া এবং নাস্তা বাদ দেওয়া। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি শেষ খাবারটি রাত ৮ টায় খেয়ে থাকি তাহলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত খাবো না, মানে আমরা ১৬ ঘণ্টা উপোষ থাকলাম। তবে মহিলাদের  সাধারণত ১৪ বা ১৫ ঘণ্টা উপোষ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ তারা ছোট উপবাসের সাথে আরও ভাল করেন।      

যারা সকালে ক্ষুধার্ত হন এবং নাস্তা খেতে পছন্দ করেন, তাদের পক্ষে এই পদ্ধতিটি প্রথমে অভ্যস্ত হতে কষ্টের হতে পারে। তবে নাস্তা বাদ দেওয়ারা সহজাতভাবে এটার সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন। তবে মজার ব্যাপার হলো উপোষ থাকার সময় আমারা পানি, চিনি ছাড়া চা/ কফি আর অন্যান্য জিরো-ক্যালোরি-যুক্ত পানীয় পান করতে পারি যা ক্ষুধার অনুভূতি হ্রাস করতে সহায়তা করবে। আমাদের উপোষ থাকার সময় প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর জাঙ্ক ফুড বা অতিরিক্ত সংখ্যক ক্যালোরি খেলে এই পদ্ধতিটি কার্যকর হবে না।  

দুই. ৫.২ ডায়েট- হচ্ছে সপ্তাহের ২ দিন আমরা উপোষ থাকার সময় ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ মহিলারা ৫০০ থেকে পুরুষরা ৬০০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সময় সপ্তাহের ৫ দিন সাধারণত খাবার খাবেন। উদাহরণস্বরূপ, আমরা সোমবার এবং বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিটি দিন সাধারণত খাবার খাবো। এই দু`দিনের জন্য, আমরা মহিলাদের জন্য ২৫০ ক্যালরির ২ টি ছোট মিল এবং পুরুষদের জন্য প্রতিটি ৩০০ ক্যালরি ২ টি মিল খাবো।       

তিন. খাওয়া বন্ধ করা- পদ্ধতিতে এটি  প্রতি সপ্তাহে এক বা দুই বার ২৪ ঘণ্টা উপোষ থাকা। উদাহরণস্বরূপ,আমরা যদি সকাল ৭ টা থেকে বা রাতের খাবার শেষ করেন সোমবার এবং পরের দিন সকাল ৭টা অবধি বা রাতের খাবার পর্যন্ত খাবো না পরের দিন। আমরা সকালের নাস্তা থেকে পরেরদিন সকালে নাস্তা কিংবা দুপুরের খাবার থেকে পরেরদিন দুপুরের খাবার অথবা রাতের খাবার থেকে পরের দিন রাতের খাবার না খেয়ে উপোষ থাকবো। এসময় পানি, চিনি ছাড়া চা/ কফি এবং অন্যান্য শূন্য-ক্যালোরি-যুক্ত পানীয়গুলি উপোষ থাকার সময় পান করা যাবে। এটা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। তাই ১৪~১৬ ঘণ্টা উপোষ থাকার দিয়ে শুরু করা ভাল, তারপর সেখান থেকে বেশি সময় উপোষ থাকার চেষ্টা করা। 

চার. বিকল্প দিনে উপোষ থাকা- একদিন পরে পরে একদিন উপোষ থাকা এই পদ্ধতির কৌশল। তবে উপোষ থাকার দিন মেয়েরা দুই দফায় ৫০০ আর ছেলেরা দুই দফায় ৬০০ ক্যালরির খাবার খেতে পারবেন। এটিও ৩ নং এর মত কঠিন তাই শুরুতে এটা না করা ভালো।   

পাঁচ. ওয়ারিয়র ডায়েট-টি ফিটনেস বিশেষজ্ঞ ওরি হফমেকলার জনপ্রিয় করেছিলেন। এটিতে দিনের বেলা স্বল্প পরিমাণে কাঁচা ফল এবং শাকসবজি খাওয়া এবং রাতে একটি বিশাল খাবার খাওয়া। মূলত, আমরা সারাদিন উপোষ থাকবো এবং সন্ধ্যা রাতে যত পারি পেট পুরে খাবো। ওয়ারিয়র ডায়েট প্রথম জনপ্রিয় ডায়েটগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল।   

ছয়. স্বতঃস্ফূর্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া- পদ্ধতির সুবিধাগুলি হচ্ছে আমাদের সাধারণ নিয়মিত খাবারের মাঝে মাঝে উপোষ থাকার পরিকল্পনা অনুসরণ করার দরকার নেই। আরেকটি বিকল্প হ`ল সময়ে সময়ে কেবল খাবার এড়িয়ে যাওয়া, যেমন আমার আজ ক্ষুধা তাই একটা মিল বাদ দিয়ে দিলাম, শূন্য-ক্যালোরি-যুক্ত পানীয় পান করলাম।   

বিরতি দিয়ে উপোষ করলে কী হয়? একটার পর একটা খাবার খেলে যে সৈন্য সামন্ত আমাদের শরীরকে পাহারা দেয় তাঁরা সেইদিকে বা খাবারের জন্য সৃষ্ট শত্রুর সাথে লড়াই করতে থাকে সারাটা সময়। বিশ্রাম পায় খুব কম। বিশ্রাম কম হলে আমরা যেমন দিন দিন নিস্তেজ হয়ে পড়ি, আমাদের দেহ রক্ষাকারী সৈন্যদের বেলায় একই ঘটনা ঘটে। তাই যদি আমরা বিরতি দিয়ে উপোষ থাকার অভ্যাস করি তখন আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধকারী সৈন্য সামন্তরা অনেক বেশি এনার্জেটিক হয়ে যায়। তারা বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সব ধরনের শত্রুর সাথেই যুদ্ধে জয় করার শক্তি অর্জন করে। কারণ বিরতি দিয়ে উপোষ থাকার সময় পানি, চিনি ছাড়া চা/ কফি এবং অন্যান্য শূন্য-ক্যালোরি-যুক্ত পানীয় পান করলে শরীরে জমা হওয়া আবর্জনা আর দূষিত পদার্থ যা আসলে আমাদের দেহের শত্রু, তা শরীরের বিভিন্ন ভাবে বেরিয়ে গিয়ে আমাদের শরীরকে অনেকটা জীবাণুমুক্ত করে। এটা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। তাই আসুন আমরা বিরতি দিয়ে ১৪~১৬ ঘণ্টা উপোষ থাকার দিয়ে শুরু করি, তারপর সেখান থেকে দীর্ঘ সময় ধরে উপোষ থাকার চেষ্টা করবো। করোনাভাইরাসের মত না দেখা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবো। এছাড়া আমাদের সামনে আপাতত কোন বিকল্প নেই।  

তথ্য সুত্রঃ ইন্টারনেট, বিভিন্ন ওয়েব সাইট    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭