কালার ইনসাইড

একগুচ্ছ ভালবাসার গল্প, অত:পর ‘ডিভোর্স’!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/07/2017


Thumbnail

বিয়ের ১১ বছরের মাথায় তারকা দম্পতি তাহসান রহমান খান ও রাফিয়াত রশীদ মিথিলা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁদের সংসারে ভালোবাসার উপহার হিসেবে রয়েছে তিন বছর তিন মাস বয়সী কন্যা আইরা তেহরিম খান।

গুঞ্জন যখন সত্যি :

দীর্ঘদিনের গুঞ্জন অবশেষে সত্যি প্রমাণিত হলো। আনুষ্ঠানিকভাবে ডিভোর্স হতে যাচ্ছে দেশের জনপ্রিয় তারকা জুটি তাহসান-মিথিলার। আজ ২০ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে তাহসান তাঁর ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিভোর্সের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন।

গুঞ্জন বা গসিপ যাই বলি না কেন, ইস্যুটা কিন্তু নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, জনপ্রিয় তারকা জুটি তাহসান-মিথিলা তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন। আর গতকাল রাত থেকে ফেসবুকে এই খবরটি আরও বেশি উত্তাপ ছড়ায় এই জুটির ভক্তদের মধ্যে। অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু করেন ডিভোর্সের ঘটনা নিয়ে।

এর আগে গত ২৪ জুন বাংলা ইনসাইডারের পক্ষ থেকে ‘বিচ্ছেদ!’ শিরোনামে দেশের জনপ্রিয় দুই জুটি তাহসান-মিথিলা ও শখ- নিলয়ের বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করা হয়।

পাঠকদের জন্য তাঁদের ভালবাসার টুকরো গল্পগুলো তুলে ধরা হলো-

তাদের সম্পর্কের শুরুটা যেভাবে..

২০০৩ সালের শুরুর দিক। বিদেশ ফেরত এক বন্ধু বায়না ধরলেন, তাহসানের বাসায় গিয়ে অটোগ্রাফ নেবেন তাঁর ছোট ভাইয়ের জন্য। তাহসানের গান শুনেছেন মিথিলা। তবে এত বড় ভক্ত না যে বাড়ি গিয়ে অটোগ্রাফ নিতে হবে। যদিও বন্ধুর বায়নায় তাহসানের বাসায় উপস্থিত হতেই হলো মিথিলাকে। তখন তো আর্টসেল আর ব্ল্যাকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তাহসানকে পেয়ে আচ্ছামতো সমলোচনা করলেন মিথিলা। তাহসান শুধু হাসলেন।

মিথিলার সঙ্গে মাত্র বিশ মিনিট কথা হলো। কিন্তু এই বিশ মিনিটই সম্ভবত তাহসানের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। কারণ এইটুকু সময়ের মধ্যেই মিথিলা কেড়ে নিলেন তাহসানের মন! অনেক মেয়ের ‘ক্রাশ’ তাহসান। এবার নিজেই প্রেমে পড়লেন কোনো মেয়ের। তাও এমন মেয়ের, যে কি না তাঁকেও তাঁর ব্যান্ডের কঠোর সমালোচক! একটা রাত কোনোমতে কেটে গেল।

পত্রলিপি তোমার জন্য...

পরিচয়ের পরদিনই চিঠি নিয়ে কলাভবনের গেটে হাজির তাহসান। খোঁজ নিয়ে জানলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মিথিলা। আর তখন কলাভবনে ক্লাস হচ্ছে। মোবাইল ফোন তখন অনেকটাই সহজলভ্য। কিন্তু তাহসান প্রেম নিবেদনটা করলেন চিঠির মাধ্যমে। অপেক্ষা করতে করতে মিথিলার সামনে পড়ে গেলেন। মিথিলাই কথা বললেন প্রথম। ‘কি অবস্থা আপনি এখানে?’ তাহসান অনুরোধ করলেন, ‘চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।’ অনেক কথা হলো। একপর্যায়ে সাহস করে মিথিলার হাতে গুঁজে দিলেন খাম। যার মাঝে ছিল একটা গোটা গোটা অক্ষরের চিঠি। কাগজের এপিঠ-ওপিঠ পুরোটাই ইংরেজিতে। যার প্রথম বাক্যটা— Some call it love at first sight, some call it infatution. I just ignore it. চিঠিটা বারবার পড়লেন মিথিলা। ভালো লাগা তো হয়েই গেল, সঙ্গে ভালোবাসাটাও। চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন ফোনে। যার প্রথম বাক্যটি ছিল এমন—‘এই এটা কী লিখেছ?’ চিঠি লেখা প্রসঙ্গে তাহসান বললেন, ‘যেহেতু আমার কবিতার প্রতি প্রেম, ভাবলাম ফোন করার আগে একটা চিঠিই লিখি।’

এর পর থেকেই দুজনের অজস্র কথার ফুলঝুরি। নিয়ম করে চলত ফোনালাপ। শুধুই কি ফোনালাপ! রিকশায় চড়ে চলল ঠিকানাহীন ঘোরাঘুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাহসান থাকতেন বেশ ভয়ে, তার আম্মাসহ পরিবারের অনেকেই ইউনিভার্সিটির শিক্ষক। বাসাও ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। কখন কে দেখে ফেলে। আর এই ভয়ের জন্য মিথিলার কাছ থেকে পচানিও কম পেতে হয়নি।

মিথিলার জন্য গান...

এরই মধ্যে মিথিলার জন্য গান লিখেছেন তাহসান। শিরোনাম ‘বৃত্তালাপন’। যার অন্তরাটা এ রকম—‘ভালোবাসি না আমি তোমাকে, বলেছিলাম... ভালোবাসি না আমি তোমাকে, কখনো না,

ভালোবাসি না আমি তোমাকে, স্বপ্ন দেখে যাও, ভালোবাসি না আমি তোমাকে, একদমই না, তুমি আমার কে?’

তাহসানের সুরে গাইলেন দুজনই। গানটা দুজনকে আরো কাছে টানল। ভালোবাসা হলো আরো ঘনীভূত। সেদিনই প্রথম দুজন একসঙ্গে অনেক সময় কাটালেন। রেকর্ডিং ও অনুশীলনে টানা আট ঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। পরের অ্যালবামে মিথিলাও গান লিখলেন তাহসানের জন্য। গান শুধু তাঁদের শখ বা প্রফেশন তা নয়, দুটি জীবনকেও বেঁধে দিয়েছে একই সুতায়।

খুনসুটি, কথা কাটাকাটি...

প্রেম করেই বিয়ের আগে মানে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কেটে গেল। এই দুই বছর তাঁদের মধ্যে ঝগড়া কিংবা খুনসুটি কি হতো না! তাহসানের ভালো লাগতো না কারো সাথে ফোনে কথা বলতে। কিন্তু মিথিলা চাইতো রাতে কথা হোক। এই নিয়ে একটা সময় খুনসুটি কম হয়নি।

প্রেমের পরিণতি, বিয়ে...

২০০৬ সালের ৩ আগস্ট এক সুতায় বাঁধা পড়ল তাহসান-মিথিলার জীবন। দুজন এখানে-সেখানে ঘুরতেন। অনেকেই দেখতেন আর বাসায় প্রায়ই নালিশ আসত। দুই পরিবারই আমাদের তাড়া দিয়ে বিয়ে দিয়ে দিল। বিয়ের সময় তাহসানের বয়স মাত্র ২৬ বছর আর মিথিলার ২৩।

অতঃপর সংসার..

অল্প সময়ের মধ্যেই সংসার গুছিয়ে নিয়েছিলেন। বিয়ের অনেক পরে সন্তান আসে সংসারে। তাঁদের একমাত্র মেয়ে আইরা তেহরিম খানের বয়স এখন তিন বছর তিন মাস। তাকে নিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছিলো।

কোথায় যেন মিলছিলো না। গত বছর থেকে আলাদা থাকা শুরু করেন দুজন। মেয়ে থাকতো মিথিলার সঙ্গে। তবে তাহসানও নিয়মিত খোঁজখবর নেয়।

মিল-অমিল...

দুজনের মধ্যে নাকি অমিলটাই বেশি। মিথিলা এক্সট্রোভার্ট তাহসান ইন্ট্রোভার্ট। মিথিলা কথা বেশি বলতে পছন্দ করে তাহসান কম। মিথিলা আড্ডা, বন্ধুবান্ধব বেশি পছন্দ করে আর তাহসান এগুলো এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। এ রকম বলতে থাকলে শেষ হবে না। যার পরিণতি আজ সবাই দেখতে পাচ্ছে।

দুজনের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে দুজনই মেয়েকে খুব ভালোবাসে। তাহসান চায় , মেয়ে পিয়ানিস্ট হবে। সব কিছুর সঙ্গে গানে যেন ওর আলাদা মনোযোগ থাকে। মিথিলা চায়, মেয়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। তবে দুজনারই প্রাধান্য দিবেন মেয়ের পছন্দকে।

অত:পর ডিভোর্স এবং তাঁদের মন্তব্য...

তাহসান বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েক মাস থেকেই আলাদা থাকছি। গত কয়েকমাস ধরেই বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছিলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম কোনো চাপে না থেকে আলাদা থাকার। আমরা জানি আমাদের এই সিদ্ধান্তে অনেকে ব্যথিত হবেন। সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

মিথিলা বলেন, ‘আমরা সব সময়ই আমাদের সম্পর্কটা ভালোবাসা ও নীতিবোধের মধ্যে রেখেছিলাম। আশা করবো এই সিদ্ধান্তের পরও সেটা অব্যহত থাকবে। আমাদের এই কঠিন সময়ে আমাদের ভক্তরা আমাদের সাথে থাকবেন বলেই বিশ্বাস করি আমরা।’ 


বাংলা ইনসাইডার/এমআরইচ 





প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭