ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী কি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে!  

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/05/2020


Thumbnail

গত বছর অক্টোবর মাসে দ্রুত সম্পদ বাড়ছে এমন এশিয়ার ৬টি শীর্ষ দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ, তাঁর পরে ভিয়েতনাম পরে চীন। এর মাঝেই এলো করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা যা দেশের পুরো অর্থনীতিকে এলোমেলো করে দিয়েছে। এটার মাঝেই আম্ফান এসে উপকূল সহ কিছু নদী তীরবর্তী এলাকায় এমন প্রাকৃতিক তাণ্ডব চালিয়েছে যে, আমাদের দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকির মাঝে পড়ে গেছে। এটাকে ভালো মানুষ দুর্যোগ মনে করলেও অনেকেই এটাকে তাদের জন্য একটা সুযোগ হিসেবে দেখছে।  

১৯৭৪ সালে সারা দুনিয়ায় যখন খাদ্য উৎপাদন খুব কম তখন বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত প্রায় শূন্যের কোঠায়। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন মাধ্যমে ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে ৪০ লাখ চটের ব্যাগ কিউবায় বিক্রি করেন। এর পর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ২৭ মে ১৯৭৪ সালে কিসিঞ্জারের সই করা তারবার্তায় জানায়, বাংলাদেশ কিউবায় পাট ও পাটের ব্যাগ রপ্তানির কারণে মার্কিন খাদ্য-সহায়তা-সংক্রান্ত পিএল-৪৮০ আইন বাংলাদেশ মার্কিন খাদ্য-সহায়তা পাবে না।  

বাংলাদেশে চরম খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ১৯৭৪ সালে শাড়ির চেয়েও জালের দাম বেশী ছিল৷ ছিল বন্যা, এই বন্যা-কালে ইত্তেফাকের ক৷রসাজিতে মিথ্যাচারের মাধ্যমে বাসন্তী নামের একজন মহিলাকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে পত্রিকায় ছবি চাপা হলে দেশ সহ সারা দুনিয়ায় এটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের ইমেজ নষ্ট হয়। ইতোমধ্যে আউশ ধান কাটা শুরু হয়। কারণ চৈত্র-বৈশাখে মাসে আউশের বীজ সরাসরি মাঠে বুনে দেওয়া হয় আর ধান কাটা শুরু হয় আষাঢ়-শ্রাবণে (জুলাই –আগস্ট) কাটা শুরু হয়। খাদ্য সংকট চলে যাওয়া শুরু হলে তড়িঘড়ি খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে, সংকটের সুযোগ নিয়ে।  
 
এবার দেখে নিই সাম্প্রতিক কিছু খবর। কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতিকে ছিনতাই করার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর বাইরে কোন শাস্তি হয়েছে কি না, তা জানা যায় নি। আরেকজন সহ-সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ফাইল জালিয়াতি করে জেলে আছেন। তাঁর কত ক্ষমতা যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ফাইল বাইরে নিয়ে গিয়ে টেম্পারিং করে গণভবনের মাঝে থাকা একজন বা একাধিক জনের সাহায্যে এটা করেছেন।
   
এ সপ্তাহের গোঁড়ার দিকে সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকায় একজন নারীর ২০ হাজার টাকা ও চেকবই ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ডায়মন্ড ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন চৌধুরী। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

১৫ মে তারিখের খবরে বলা হয়েছে যে, সিলেটের জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা কাজী আশরাফুল ইসলামের ওপর হামলার মামলায় সৌরভ দাস নামে আরও এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত সোমবার সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের একটি পাঠা ফ্রিতে আনতে যান ছাত্রলীগ নেতা কনক পাল অরূপ। পাঠা না দেওয়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, ছাত্রলীগ নেতা কনক পাল অরূপ, রাহুল চৌধুরী, অপু তালুকদার, মিঠু তালুকদার, আকাশ, সাহেদ, সৌরভ দাস, রুহেল ও শামীম আলী। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আ.লীগে অনুপ্রবেশকারী আকাশ কুমার ভৌমিক আকাশ কাউন্সিলর মুদি দোকানদার থেকে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে আকাশ ভোল পালটিয়ে রাতারাতি আওয়ামী লীগার বনে যান এবং চাঁদপুরের একজন আওয়ামী লীগ নেতা ত্রাণমন্ত্রী নির্বাচিত হলে আকাশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিনে দিনে সেই শীর্ষনেতা এবং মন্ত্রীর  ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলে আকাশ হয়ে যান ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একচ্ছত্র অধিপতি। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সকল টেন্ডারের। আকাশের ইশারা ছাড়া ত্রাণে কোনো টেন্ডার হয় না। হয়ে যান ত্রাণের রাঘব বোয়াল এবং অঢেল সম্পদের মালিক।

এদিকে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে একুশে টিভি থেকে চাকুরি হারানো মাইনুল এখন প্রধানমন্ত্রীর বিটের একজন বড় রিপোর্টার! মাত্র ২৫ হাজার টাকা বেতনে জিটিভিতে চাকুরি করা মাইনুলের ঢাকায় বর্তমানে ২টি ফ্ল্যাট, বসিলায় প্লট, হেমায়েতপুরে জমি, ব্যাংকে নগদ টাকা! ভালো ব্যবসাও আছে! বছরে ৪-৫ বার ইউরোপ আমেরিকা ট্যুর করেন! প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের হাই প্রোফাইল নেতাদের সাথে ওঠা বসা। অথচ এই মাইনুলের সাংবাদিকতা জীবন খুব বেশিদিনে নয়। ২০১৫ থেকে ২০২০ মাত্র ৫ বছরে এত সম্পদ! প্রধানমন্ত্রীর বিটের সাংবাদিক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার এবং শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে, মাইনুলের এসবি পাশ বাতিল করে দিতে চায় পিএম অফিস। কিন্তু তাঁর পাশ বাতিল হয়নি। মাইনুলের মত একজন প্রমাণিত স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে কারা গণভবনে ঢোকার সুযোগ করে দিলো?

তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপে একজন শিবির ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে সারা রাত ধরে পুলিশকে নাকানি-চুবানি খেতে হয়েছে। পুলিশ যখন তাকে ধরার জন্য ঘর ঘিরে ফেলে তখন দরজা-জানালা সব বন্ধ করে দিয়ে জঙ্গি স্টাইলে ওই শিবির ক্যাডার পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ারও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। উক্ত শিবির ক্যাডার পুলিশকে হুমকি দিয়ে বলে-তাকে গ্রেপ্তার করা হলে গোটা দেশে আগুন জ্বলবে। এমনকি তার গায়ে আঁচড় দেওয়া হলে উচ্চ আদালতে শত শত রীট করা হবে। ঘরের ভেতর থেকে মোবাইলে ফেসবুক লাইভ দিয়ে জাহেদুল ইসলাম হৃদয় নামের ওই শিবির ক্যাডার দ্বীপবাসীকে পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানাতে থাকেন। এমনকি ঘরের ভেতর থেকেই তিনি ফেসবুক লাইভে জামায়াত-শিবিরের সকল সৈনিকদের একত্রিত করে পুলিশের প্যান্ট খুলে নেওয়ার হুমকিও প্রদান করেন। শেষ পর্যন্ত ভোরে তাকে আটক করা হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আটক হওয়া শিবির ক্যাডার কুতুবদিয়া উপজেলা প্রশাসনের গঠিত ত্রাণ বিতরণের স্বেচ্ছাসেবক কমিটির একটি ইউনিয়ন শাখার প্রধান। জাহেদুলের পিছনে প্রশাসনের একাংশের সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া যায়।  

২০১৩ সালের নাশকতা সৃষ্টিকারীর অন্যতম হোতা, দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নুর মোহাম্মদ সিরাজি, যার ডাক নাম লিটন, বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার চেড়াঘাট গ্রামে। এই শিবির ক্যাডার জামাত শিবিরের এজেন্ট, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির জন্য সাঈদীর ছেলের সাথে ষড়যন্ত্রের নায়ক রকি বড়ুয়ার বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ লোক। প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি দের সাথে সেলফি বাজি করে। এই নুর মোহাম্মদ সিরাজি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে যাওয়ার সাহস পায়, কারা তাঁকে সেখানে যাবার সুযোগ করে দেয়, এটা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।  

এখন দেশে নানামুখী সংকট চলছে। কুচক্রীরাও তৎপর। খুনি আর তাদের দোসররা গণভবন পর্যন্ত চলে যাবার সুযোগ করে নিয়েছে। পদ বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্যের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পরিবারের সদস্যদেরও দলে ঢুকিয়েছেন কিছু নেতা। ভরসা শুধু আমাদের প্রধানমন্ত্রী কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর মত তেমন উদার নন, শত্রুদের মাফ করলেও ভুলে যান না কৌশলগত কারণে। তিনি বিশ্বাস করেন যে,  অযোগ্য কে যোগ্য বানানো গেলেও, বিশ্বাস ঘাতককে কখনও বিশ্বস্ত বানানো যায়না। তবুও আমরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে শুদ্ধি অভিযান চায়, বঙ্গবন্ধু কন্যার নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭