ইনসাইড আর্টিকেল

যেভাবে এল খুশির ঈদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/05/2020


Thumbnail

ঈদুল ফিতর অর্থাৎ রোযা ভাঙার দিবস ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। দীর্ঘ এক মাস রোযা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। মুসলিম উম্মাহর জন্য ধর্মীয়ভাবে সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন হল ঈদ। নবী করীম (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির শুরু থেকে ঈদ ছিলো না। ঈদের প্রচলন হয় মূলত ৬২২ সালে নবী করীম (সা.) এর মদিনায় হিজরতের পর।

হজরত আনাস (স.) হতে বর্ণিত এক হাদীস থেকে জানা যায়, নবী করীম (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন, তখন মদিনাবাসীদের মধ্যে বিশেষ দু`টি দিবস ছিল। সেই দিবসে তারা খেলাধুলা (আনন্দ-ফুর্তি) করতো। নবী করীম (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, এ দু’টি দিনের তাৎপর্য কী? মদিনাবাসী উত্তর দিলেন, আমরা জাহেলি যুগ থেকে এ দু’দিনে খেলাধুলা করে আসছি। তখন নবী করীম (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম দু’টি দিন তোমাদেরকে দান করেছেন। আর সেই দিন দু’টি হলঃ ১. ঈদ-উল-ফিতর ও ২. ঈদ-উল-আজহা।

হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী, পবিত্র রমজান মাস শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে পবিত্র ‘ঈদুল ফিতর’ উৎসব পালন করা হয়। তবে পঞ্জিকা অনুসারে কোন অবস্থাতে রমজান মাস ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ হবে না। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় ‘পুরস্কার রজনী’ বলা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ অর্থাৎ সূর্যাস্তে একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ হয়। আর এই কথা থেকেই চাঁদ রাত কথাটির উদ্ভব। ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা দেয়া ইসলামী বিধান।

পৃথিবীর অন্য সব ধর্মের উৎসবের সঙ্গে ইসলামের পার্থক্য রয়েছে। ইসলামের উৎসবের সঙ্গে পবিত্রতার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঈদুল ফিতরের খুশি তাদের জন্য যারা পুরা রমজান মাসে রোজা রেখেছে, নামাজ পড়েছে, কোরআন তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত করেছে। একমাত্র আল্লাহর ভয়ে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রোজা ভাঙেনি। আর যারা রোজা রাখেনি, ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে ছিল তাদের জন্য ঈদের খুশি নয়।

রোজাদারের জন্য ঈদের আনন্দের বিষয়টি হাদিস শরিফেও বর্ণিত হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেন, শবে কদরে জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের একটি জামাতসহ অবতরণ করেন। যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে, বসে আল্লাহর জিকির করতে থাকে বা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে তার জন্য রহমতের দোয়া করেন। অতঃপর যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে তখন আল্লাহ’তায়ালা ফেরেশতা দের সামনে বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগি নিয়ে গর্ব করেন। কারণ, ফেরেশতারা মানুষকে দোষারোপ করেছিল (অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষ প্রেরণকালে আপত্তি জানিয়ে ছিল)। অতঃপর আল্লাহ’তায়ালা জিজ্ঞাসা করেন, হে ফেরেশতারা! যে মজদুর নিজ দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে তার বদলা কী হতে পারে? ফেরেশতারা আরজ করেন, হে আমাদের রব! তার বদলা এই যে, তার পারিশ্রমিক তাকে পরিপূর্ণ দিয়ে দেওয়া হোক। আল্লাহ’তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ফেরেশতারা! আমার বান্দাবান্দিরা আমার ফরজ হুকুম (রমজান মাসের রোজা) পালন করেছে। এরপর তারা ঈদগাহের দিকে যাচ্ছে। আমার ইজ্জতের কসম! আমার প্রতাপের কসম! আমার দানশীলতার কসম! আমার বড়ত্বের কসম! আমার সুউচ্চ মর্যাদার কসম! আমি তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহ’তায়ালা বান্দাদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেন, যাও! আমি তোমাদের গুনাহসমূহ মাপ করে দিলাম এবং তোমাদের গুনাহগুলোকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। অতঃপর তারা ঈদগাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য আরেকটি হাদীস থেকে জানা যায় নবী করীম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। ৮ জিলহজের রাত, আরাফাতের রাত, ঈদুল আজহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও ১৫ শাবানের রাত। তাছাড়া, হাদীস থেকে এটাও জানা যায় যে, রোজাদারের জন্যই যে কেবল পবিত্র ঈদ এসেছে। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের তাওফিক দান করুন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭