ইনসাইড পলিটিক্স

দপ্তরে অসফল, এলাকাতেও অনুপস্থিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/05/2020


Thumbnail

আওয়ামী লীগের ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ৪ জন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। বাকি ৪৩ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী। এই মন্ত্রিসভা নিয়ে সমালোচনা শুরু থেকেই চলছিল। বিশেষ করে মন্ত্রিসভায় অনভিজ্ঞ এবং আনাড়ি লোকজনের উপস্থিতির কারণে সরকার যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না একথা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেও এই নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পর্যন্ত চারবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন, চারবারের মধ্যে এবারের মন্ত্রিসভাকেই সবথেকে দুর্বল মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন সঙ্কটে দেখা যাচ্ছে মন্ত্রিসভার সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না এবং সবথেকে বড় কথা যেকোন সিদ্ধান্তের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে করোনা সঙ্কটের সময়ে একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্যের হুমকি দেখা দিয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের অভাব বহুগুণ বেড়ে গেছে। এই বাস্তবতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ত্রাণ সাহায্য দেওয়া এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এই সঙ্কটের সময় দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগের ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার মধ্যে অন্তত ১৫ জন মন্ত্রী তাদের এলাকায় একটিবারের জন্যও যাননি। গত দুই মাসের ছুটিতে নিজ এলাকায় অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য এদের মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন যারা অসুস্থতা বা অন্যান্য কারণে এলাকায় না গিয়েও এলাকার সঙ্গে খোঁজখবর নিয়মিত রাখছেন এবং লোকজনের মাধ্যমে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। কিন্তু অন্তত ৩ জন মন্ত্রী রয়েছেন যারা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন, দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, এলাকাতেও তেমনি তারা অনুপস্থিত। এরকম মন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন-

শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন

শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন তার নরসিংদী এলাকায় একটিবারের জন্যেও যাননি এবং করোনা সঙ্কট শুরু হবার পর থেকে তার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম তিনি করোনার সময়ে তামাক কারখানাগুলো চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন। এরপর শিল্প কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করার সিদ্ধান্তটি বিতর্কিত হয়েছিল। পরবর্তীতে তামাক উৎপাদন এবং বিপণন বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সেটা এখনো কার্যকর হয়নি। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন যেমনভাবে এলাকাতে অনুপস্থিত, তেমনি নিজ মন্ত্রণালয়েও অনুজ্জ্বল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। বিশেষ করে তার নেতৃত্বে দৃঢ়তার অভাব এবং পুরো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক হয়ে উঠতে না পারা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তিনি নিজের বিভিন্ন মন্তব্যেও সমালোচিত হয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে করোনা তোমাদের জন্য আশীর্বাদ বলে সমালোচিত হয়েছেন। এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার থেকে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো বলে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচণ্ড ট্রলের শিকার হয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ ঢাকার খুবই কাছে। কিন্তু তিনি করোনা সঙ্কটের সময় একবারও নিজ এলাকাতে যাননি। অথচ অন্যান্য সময়ে তাকে প্রতি বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জে দেখা যেত। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক ব্যস্ততার জন্য হয়তো তিনি নিজ এলাকায় যেতে পারেননি, কিন্তু করোনা সঙ্কটে ভুগতে থাকা তার নির্বাচনী এলাকাতেও যাওয়া প্রত্যাশিত ছিল বলে অনেকে মনে করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

পেঁয়াজের মূল্যের উর্ধ্বগতি থেকে শুরু করেই বাণিজ্যমন্ত্রী নেতিবাচকভাবে আলোচিত হয়ে পরিচিতি পান এবং এবার তিনি তীব্রভাবে সমালোচিত হন গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে। প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে তিনি ৫ এপ্রিল গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই টিপু মুনশি একজন ব্যবসায়ী মন্ত্রী, গার্মেন্টসের মালিক। কাজেই গার্মেন্টস কেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে তাকে যতটা তৎপর দেখা যায়, অন্যান্য বিষয়ে তিনি ততটা তৎপর নন। তার নির্বাচনী এলাকা রংপুর এবং বিগত দুই মাসে তিনি রংপুরে যাননি।

যারা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা সম্পর্কে আরো বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত এবং নিজ এলাকায় নিয়মিত যাওয়া উচিত। মন্ত্রীর থেকেও তাদের বড় পরিচয় তারা জনপ্রতিনিধি। আর তারা যদি জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের খোজ না রাখেন তাহলে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হতে বাধ্য। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭