নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 20/07/2017
নায়িকা কলকাতা গেলেন। উদ্দেশ্য কী? কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করছেন। কখনো একটি কখনো একাধিক। ঘোষণা এলো, গনমাধ্যমও তৃপ্ত মনে প্রকাশ করে দিলো। কিন্তু ‘কিন্তু’ রয়ে যায়। সেই সিনেমার শুটিং কবে? আর মুক্তি কবে? কোথায় হলো শুটিং? সে খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খুব একটা প্রকাশ পায় না। না পাওয়ারই কথা। তথ্য যে মেলে না। কলকাতায় নায়িকাদের যে শুধু কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া তা নয়। মার্কেটিং এমনকি অবসাদ মেটাতেও ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। তার ফাঁকেই ঢুঁ মেরে আসছেন প্রডাকশন হাউজগুলোতে। অনেক বাংলাদেশি অভিনেত্রীদেরই স্যোসাল মিডিয়ায় ছবি মেলে কলকাতা গমনের। তা প্রায়ই খবর হয় পারিবারিক ভাবে ঘুরতে যাওয়ার। যদি, ভাগ্য সহায় হয়। তাহলে কোনো ছবির খবর মেলে।
কলকাতায় গিয়ে প্রথমে চলে অডিশন রাউন্ড। সেখান থেকে সবার উৎরানো সম্ভব হয় না। সিনিয়রদের পাশাপাশি জুনিয়ররাও ভিড়ছে সেই মিছিলে। ব্যাটে বলে না মেলার গল্পই হয় বেশি। তারপরও ছুটছে কলকাতায়। ছোট হোক বড় হোক, কোন চরিত্র যদি মেলে। তাহলেই আলোচনায় আসা সম্ভব নাকি! এই যে কলকাতায় নায়িকাদের এত যাওয়া আসা। নায়করা কী যায় না? গেলেও হয় তাদের যোগ্যতা বলে টিকতে পারে না, এক শাকিব খান ছাড়া। নয়তো কলকাতার পরিচালকরা শুধু বাংলাদেশের নায়িকাদেরই চায়।
বাংলাদেশি সিনেমায় আটপৌরে ভাব ধরে থাকলেও কলকাতায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত পোশাক পরছেন অনেক অভিনেত্রীরা। খোলামেলা দৃশ্যেও অভিনয় করছেন হর-হামেশাই। এমন নায়িকাদের তালিকায় সবার আগে জায়গা পাবেন জয়া আহসান। সঙ্গে আরও আছেন সোহানা সাবা, জ্যোতিকা জ্যোতি, রুহী,মাহি, জলি, পরীমণি, নুসরাত ফারিয়া, বিদ্যা সিনহা সাহা মীম। জাজের নতুন সিনেমায় দেখা যাবে পিয়া বিপাশাকে।
কলকাতার নির্মাতাদের মতে, বাণিজ্যিক প্রয়োজনেই ছবিতে নায়িকাদের কিছুটা উদার হতে হয়। তাছাড়া গল্পের চাহিদা তো আছেই। এ কারণে সেখানকার সেন্সর বোর্ডও এসব ক্ষেত্রে বেশ উদার। কথায় কথায় মাসালাদার দৃশ্যে কাঁচি চালিয়ে দেয় না কলকাতার সেন্সর।
বাংলাদেশের যে কয়েকজন নায়িকা কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন জয়া আহসান। সেখানকার মিডিয়ার আলো রয়েছে তাঁর ওপর। বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া ফিল্ম ফেয়ার ইস্টের নবীন অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কলকাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। জয়া আহসান কলকাতায় প্রথম অভিনয় করেন ২০১৩ সালে অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ ছবিতে। পারিবারিক গল্পের এই ছবিতে তেমন রগরগে কোনো দৃশ্য না থাকলেও বেড সিনের ছোটখাটো দৃশ্যে অবলীলায় কাজ করেন জয়া। পরবর্তীতে ‘রাজকাহিনী’ কিংবা ‘ঈগলের চোখ’ সিনেমায় জয়া হয়েছেন আরও সাহসী। এটি অবশ্য ‘প্রাপ্ত বয়স্ক’ তকমার ছবি। খোলামেলা হওয়া নিয়ে যতই সমালোচনা হোক না কেন এ নিয়ে জয়ার অবশ্য কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি সেখানে নিয়মিত সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
জয়ার পর তোলপাড়ের বিষয় হয়ে উঠেছেন সোহানা সাবা। ছোট পর্দার এ অভিনেত্রী দেশের ৬টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এসব ছবিতে সহজ-সরল ইমেজ তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৬ সালে কলকাতার অয়ন চক্রবর্তীর ‘ষড়রিপু’-তে দেখা গেল তাঁর উল্টো চিত্র।
রুহী অভিনয় করেন কলকাতার ‘গ্লামার’ ছবিতে। বিষয়বস্তুর কারণেই ছবিতে অনেকটা উদার হন তিনি। যদিও এক্ষেত্রে তাঁকে নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয়নি।
জনপ্রিয় নায়িকা নিপুণ কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিতের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ‘পরিচয়’ নামের একটি সিনেমায়। রূপালী চ্যাটার্জী পরিচালিত ‘পরিচয়’ সিনেমার শ্যুটিং শেষ হয়ে গেলেও প্রযোজনা বিষয়ক ঝামেলার কারণে সিনেমাটি এখনো মুক্তি পায়নি। সেই কারণে নিপুণের সূচনাটা শুরুতেই থমকে আছে কলকাতায়।
নায়িকা ববি কলকাতার একটি সিনেমায় অভিনয় করবেন। বিক্রম চোপড়া পরিচালিত ‘রংবেরং’ সিনেমায় ববির বিপরীতে কে অভিনয় করবেন সেটা এখনো জানা যায়নি। ‘রংবেরং’ সিনেমার শ্যুটিং আদৌও শুরু হবে কিনা সে হদিসও নেই।
সর্বশেষ ‘বস ২’ সিনেমায় নুসরাত ফারিয়ার উপস্থিতি যেমন ছিল স্বল্প তেমনি তার পোষাক ছিল সমলোচিত।
কলকাতার প্রতি এত আগ্রহ কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেত্রী বলেন ‘কলকাতার ছবির গল্পগুলো অনেক গুছানো হয়। তার চেয়ে বড় কথা ওদের অনেক আগ্রহ বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের প্রতি। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক নতুন মেয়ে কলকাতায় অখ্যাত প্রডাকশন হাউজের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতায় গিয়ে প্রতারনার শিকার হচ্ছে। কিন্তু ইজ্জতের ভয়ে প্রায়ই তা বাংলাদেশের মিডিয়ায় লুকোছাপা হয়ে যায়। ’
জানা যায়, ‘কলকাতার ছবিতে ছোট হলেও যদি একটা চরিত্র দেওয়া হয় কোনো বাংলাদেশিকে। ও পাড়ের দর্শকের আগ্রহ বেড়ে যায়। ওপার বাংলা এপাড় বাংলা মিলিয়ে দর্শকের সংখ্যা বহু বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক দূরভিসন্ধী লুকায়িত।’
কলকাতার সিনেমায় অভিনয়, একটুখানি উপস্থিতি। অনেক নায়িকাই সেটাকে বড় করে দেখেন। প্রশ্নটা সেখানেই, এ দেশের ক’জন নায়িকা পুরোপুরি সুযোগ পাচ্ছেন কলকাতার সিনেমাতে। কতখানি ব্যবহার করা হচ্ছে তাঁদের। সেখানকার মিডিয়ার আলো কতটা রয়েছে এই নায়িকাদের ওপর। হাতে গোনা দু’একজন ছাড়া কেউই তেমন সাড়া ফেলতে পারেননি কলকাতায়।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭