ইনসাইড বাংলাদেশ

পার্কিং সিন্ডিকেট; লন্ডভন্ড দুদেশের হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/05/2020


Thumbnail

বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বেনাপোলে দুই মাসআমদানি-রপ্তানি বন্ধ: অবাধ রেলকার্গো আমদানির ত্রিপক্ষীয় সুপারিশ। গত ২ মাস ধরে বেনাপোল বন্ধর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ। কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরী নির্দেশনা সত্তে¡ও বাণিজ্য শুরু করা যায়নি। আমদানিরপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল কাস্টমসহাউস ও বন্দর সার্বক্ষণিক চালু রয়েছে। ভারতের বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেট বাণিজ্য চালু করতে দিচ্ছেনা। ক্ষতি পোষাতে কাস্টমস কমিশনার অবাধে সাইডডোর ওএফসিএলসহ সব ধরণের রেলকার্গো বেনাপোল দিয়ে আমদানি ওখালাসের অনুমতি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে জরুরী চিঠি দিয়েছে। এর আগে কাস্টমস, স্থলবন্দর ও ব্যবসাবান্ধব রেলকার্গো চালুর জন্যে ত্রিপক্ষীয় সুপারিশ পেশ করেছে।  

বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্য, কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি চাহিদা ক্রমশ: বাড়ছে। আমদানিকারকগণ চীন ও ইউরোপের পরিবর্তে ভারত থেকেপণ্য ও কাঁচামাল আনতে আগ্রহী। বিলম্ব ও হয়রানির কারণে তারা বেনাপোল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রকৃতি ভারতীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বেনাপোলে রেলকার্গো চালু অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। 

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ রেলকার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সকল প্রস্তুতি গ্রহণকরেছে। ট্রাকে বাহিত পণ্য বেনাপোল আসতে যেখানে ৫থেকে ৭ দিন লাগে সেখানে রেল কার্গো পৌঁছাতে লাগে মাত্র ৩ঘন্টা। বাকী কয়েক ঘন্টায় শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। গতকাল চাল বীজের ৭৭৫মে.টনের চালান মাত্র ৩০মিনিটে শুল্কায়ন শেষ করা হয়। ১২ঘন্টারও কম সময়ে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ট্রেন গন্তব্যে চলে যায়। এক পণ্যের ভাড়াও ট্রাকের তুলনায় ভাড়া প্রায় অর্ধেকেরও কম।

ট্রাকে ভাড়া বেশী, পার্কিং সিন্ডিকেটের ট্রাক আটক রাখা, ড্রাইভারসংকট, কভিড১৯ পরিস্থিতির জন্য খরচ বাড়ে ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এ পরিস্থিতিতে পুরোদমে রেলকার্গো চালু হলে আমাদানি দ্বিগুন হবে বলেবিশেজ্ঞরা মনে করেন। বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেটের প্রভাবে বেনাপোলে রেলকার্গো আগমনের সিদ্ধান্তও বিলম্বিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, গত দু’মাস  এর বেশি বেনাপোলে ট্টাক ঢুকছে না। গত ৩০ এপ্রিলদিল্লির নির্দেশে বাণিজ্য চালও হয়েও আবার বন্ধ হয়ে গেছে। বনগাঁর নেতাদের চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বই এ অচলাবস্থার মূল কারণ বলে জানা গেছে। সর্বশেষ বাংলাদেশে রপ্তানিকৃত ১৫টি ট্রাক খালাস করার বিনিময়ে আদায় করা টাকার ভাগ তৃণমূলের ও সিন্ডিকেটের সকল নেতা পায়নি বলে পরের অচলাবস্থা তৈরি করা হয়েছে। অচলাবস্থা ধরে রাখতে সিন্ডিকেট বেনাপোলে শতশত করোনা রোগী মারা যাবার ভুয়া গুজব বনগাঁতে রটিয়ে সাধারণমানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে।

পার্কিং সিন্ডিকেটের তৈরি সংকটজনিত অচলাবস্থায় সীমান্তে আটকা পড়ে ৫০০০ট্রাক। কালীতলাসহ এ সকল পার্কিংয়ে অপেক্ষমান পণ্যেরমধ্যে আরো রয়েছে অক্সিজেন, ওষুধের কাঁচামাল, পাট, ধান, ভুট্টাবীজ, শিশুখাদ্য, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মসলা, ফলমুল, শিল্পের কাঁচামাল । রোদ বৃষ্টি ঝড়ে খোলা আকাশের নিচে। নষ্ট হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পঁচনশীল পণ্য।

বোনপোলের একাধিক সূত্র বলেছে, দিল্লি-ঢাকা যৌথভাবে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য সতর্কতা বজায় রেখে বাণিজ্য চলবে। প্রতিদিন বেনাপোল কাস্টমসও স্থলবন্দর থেকে পেট্রাপোলে যোগাযোগ করা হয়েছে। দফায় দফায় সভা হয়েছে। সেই ২৩মার্চ থেকে  ট্রাকে বোঝাই জরুরী পঁচনশীল পণ্য আনার জন্য বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে । ট্রাকে অপেক্ষমান বিভিন্ন প্রকারবীজ নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে বীজতলার সিজন চলে যাচ্ছে। দেব, দিচ্ছিকরে, বনগাঁর নেতারা পণ্য দেয়নি। উভয় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি। 

ভারতীয় পণ্য ট্রাকে উঠলেই বাংলাদেশী আমদানিকারককে মূল্যপরিশোধ করতে হয়। এলসিতে প্রাপকের মূল্য পরিশোধের শর্তেই এটা বলা থাকে। আমাদানিকারকদের অন্যদেশের আমদানি পণ্য সমুদ্রপথে সময়মতো চলে আসছে। অথচ দুই মাসেও আসেনি ভারতীয় পণ্য।ফলে, লোকসানের সাথে বাজারে কৃত্রিম সংকটের সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের আমাদের নীতিনির্ধারকদের পরিণামদর্শিতায় সেটা হয়নি। 

ভুক্তভোগীর জানান, বনগাঁতে সকল প্রতিবাদের পরিণতি ট্রাক বন্ধে।বলা নেই কওয়া নেই, একজন নেতা বললো, বাংলাদেশে ট্রাক ঢুকবে না। আর বন্ধ হয়ে গেল। বিনা নোটিশে কৃত্রিম সংকটে ট্রাক বন্ধের যতো অজুহাত। কর্মচারী, ড্রাইভারের ঝগড়া, দুই সংগঠনের বিরোধ, শ্রমিক কর্মচারী ড্রাইভার ধর্মঘট, নতুন টীমের যোগদান, যাই নতুন ঘটুক এসব তুচ্ছ কারণে ট্রাক ঢোকা বন্ধ করা হয়! আর্থিক ক্ষতি গুনছে বাংলাদেশের নির্দোষ আমাদানিকারক ও ভোক্তারা।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, বনগাঁ উত্তরের সাবেকএমএলএ গোপাল শেঠ ওবনগাঁ পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য ডাকু পণ্য রপ্তানিতে বিরোধিতা করে কালীতলা পার্কিং থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক আসতে বাধা দেয়। এসব ট্রাকের প্রতিদেনের ভাড়ার টাকা ছাড়াও বনগাঁ পৌরসভা চাঁদা নিচ্ছে। প্রতিদিন ছোট গাড়ি ৫০ টাকা, ৬ চাকা ৮০ টাকা, ১০ চাকা ১২০ টাকাওট্রেলার ১৬০ টাকা হারে পার্কিং চার্জ আদায় করে থাকে। সিরিয়াল ভেঙ্গে আগে গাড়ি বের করে দেয়ার জন্যও বড় অংকের টাকা নিচ্ছে।
 
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, সরকারিভাবে বা কাস্টমসের পক্ষ থেকে আমদানি রপ্তানি বন্ধ করা হয়নি। ট্রাক ড্রাইভারদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে,  এমন অজুহাতে তৃণমূল  কংগ্রেসেরবনগাঁ উত্তরের সাবেক এমএলএ গোপাল শেঠ ও পৌর  মেয়র শংকর আঢ্য ডাকু গুজব ছড়িয়ে জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আন্দোলন করে  বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
 
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, ভারত থেকে  দুই দিনে ১৫ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। নো-ম্যানসল্যান্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিবিধান মেনেই পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট করা হয়েছে। ভারতের বনগাঁ এলাকার জনগণের আন্দোলনের জন্য পণ্য আমদানি হয়নি। পেট্রাপোল বন্দর থেকেপণ্য আসলে বেনাপোল বন্দরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সবধরণের সহযোগিতা  করা হবে।
 
কোলকাতা থেকে বেনাপোলে সকল আইটেমের রেলকার্গো অবিলম্বে চালুকরা যেতে পারে। এ সংক্রান্ত স্থলবন্ধর কমিটি তদন্ত করে স্থলবন্দরেররেলকার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে দেখতে পায়। সাইডডোর ও এফসিএন কন্টেনার ও হ্যান্ডলিং করা সম্ভব বলে কমিটি সুপারিশ করেন। এখন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ট্রাক প্রবেশ বন্ধ না করার বিষয়ে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার  ও বাংলাদেশের  প্রতিনিধি নিয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।   অচলাবস্থার যাতে স্থায়ী না হয় সমাধান হওয়া দরকার আমদানিকারকের সামনে মুক্তবাজার অর্থনীতি, বিকল্প পণ্য, বিকল্পদেশ উন্মুক্ত। বহু আমাদানিকারক বেনাপোল থেকে চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য বন্দরে চলে গেছে। 
 
ভারত বাংলাদেশের প্রধান স্থলবাণিজ্য বন্দর বনগাঁর নেতাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার হাতিয়ার হয়ে পড়েছে । স্বেচ্ছারিতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ৩৫হাজারথকোটি টাকা আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য কিছু লোভী ও দুবৃত্ত ব্যক্তির খামখেয়ালের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলতে পারে না। অবিলম্বেএদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দু দেশের নীতি নির্ধারকদেরকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মাফিয়ামুক্ত সুষম বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরি করতেহবে। 
 
দুই সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিন্ডকেটমুক্ত সহজ সুষমবাণিজ্য নিশ্চিত করতে হলে কমলাপুর আইসিডির মতো শর্তহীন অবাধে সবরকম পণ্য রেলকার্কগো ও কন্টেনারে আমদানির বিকল্প নেই। কোনপ্রকার দেরী না করে বেনাপোল কাস্টম হাউস ও স্থলবন্দরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ নিয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করছে বলে সূত্র জানায়।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭