ইনসাইড বাংলাদেশ

কেন একের পর এক উদ্ভট সিদ্ধান্ত?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/05/2020


Thumbnail

করোনা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে করোনা সঙ্কট থেকে বাঁচার জন্য, অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য। তবে এই সিদ্ধান্তগুলো প্রায় চটজলদি নেয়া হচ্ছে এবং পরিকল্পিত হচ্ছেনা। যার ফলে সিদ্ধান্তগুলো উদ্ভট সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য হচ্ছে এবং এই উদ্ভট সিদ্ধান্তগুলোর ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি জনজীবনে অস্থিরতা এবং নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। যেমন সরকার শুরুতেই যখন ২৬শে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো তখন প্রশ্ন উঠলো যে এটা সাধারণ ছুটি না লক ডাউন? তখন মন্ত্রীপরিষদ সচিব জানালেন যে এটা ‘সোশ্যাল ডিস্টেনসিং’, আমরা লকডাউন বলতে চাইনা। কিন্তু এই ছুটিকে লকডাউন না বলার কারণে মানুষ মনে করলো যে, এটা বোধহয় উপভোগের ছুটি। লোকজন লঞ্চে, বাসে, ট্রেনে ঘরমুখী হয়ে ছুটলো।

শুধু তাই নয়, এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো যে, কেউ কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারবে না। অথচ গণপরিবহন উন্মুক্ত রাখা হলো। যার ফলে ২৩শে মার্চ ছুটি ঘোষণার সাথে সাথে গণপরিবহনে মানুষ বাড়িতে যাওয়া শুরু করলো। পঞ্চম দফা ছুটির মেয়াদ সময় বলা হলো যে, এই ছুটি হবে অত্যন্ত কঠোর। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়া যাবেনা এবং কি কারণে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। কিন্তু সেই সময় সরকারি অফিস আংশিক খুলে দেয়া হলো, ব্যাংক আগে থেকেই খোলা ছিল, পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হলো এবং দোকানপাট খুলে দেওয়া হলো। দোকানপাট খুলে দেওয়ার সময় জানানো হলো যে দোকানে যেতে হলে ভোটার আইডি কার্ড, ইলেকট্রিক বিলের কপি বা পরিচয়পত্র- যেকোন কিছু নিয়ে যেতে হবে এবং এক এলাকার লোক অন্য এলাকায় গিয়ে কেনাকাটা করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত শুধু উদ্ভটই ছিল না, হাস্যকরও ছিল এবং পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত কাউকে বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে যে, যদি একটি সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে তা বাস্তবায়ন করা হবেনা কেন। দোকানপাট খোলা থাকবে কিন্তু ফুটপাত বন্ধ থাকবে। অথচ কিছুদিন আগেই সরকার মাঠের মধ্যে কাঁচাবাজার বসানোর নির্দেশনা দিল এবং তখন বলা হলো যে উন্মুক্ত স্থানে বাজার হলে লোকজন সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ কম হবে। তাহলে ঈদের কেনাকাটার জন্যে দোকান খোলা হলেও ফুটপাত বন্ধ হলো কেন? আবার যখন সপ্তম দফায় ছুটি যখন বাড়ানো হলো তখন সরকার বললো যে, কেউ ঢাকা থেকে বের হতে পারবে না, কেউ ঢুকতেও পারবে না। কিন্তু লোকজন যখন দল বেঁধে ঢাকা থেকে বের হতে শুরু করলো তখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঢাকায় প্রবেশ এবং ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলো এবং বলা হলো যে, গণপরিবহন চলবে না। তবে ব্যক্তিগত যানবাহনে যাওয়া যেতে পারে। যদি ব্যক্তিগত যানবাহনে যেতে পারে তাহলে গণপরিবহনে যাওয়া যাবেনা কেন? বরং এর ফলে যেটা হচ্ছে যে, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত পরিবহন গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হলো এবং করোনা সংক্রমণের আরো ঝুঁকি বৃদ্ধি পেল। প্রশ্ন উঠেছে যে কেন একের পর এক এই ধরণের উদ্ভট সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে? এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা কতগুলো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করেছেন।

১. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব

দেখা যাচ্ছে, যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে তা পরিকল্পিত নয়। যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে সেগুলোর ইমপ্যাক্ট কিভাবে হবে, কিভাবে দেশ লাভবান হবে সে ব্যাপারে কোন পরিকল্পনা নেই।

২. সুদূরপ্রসারী কোন ভাবনা নেই

একটি সিদ্ধান্তের কোন সুদূরপ্রসারী চিন্তা ছাড়াই তা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে যখন যে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন, তখন তা নেয়া হচ্ছে। এর পরিণাম কি হবে তা ভাবা হচ্ছেনা।

৩. আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি

প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের মধ্যে কোন গবেষণা নেই এবং এই সিদ্ধান্তগুলোর পেছনের কার্যকারণ বিশ্লেষণ করার কোন প্রবণতা নেই। আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শুধু যেটুকু প্রয়োজনে সেটুকু মেটানোর জন্যেই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে।

৪. মেধা, দক্ষতা, দূরদৃষ্টিতার অভাব

প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের পেছনে মেধা, দক্ষতা, দূরদৃষ্টিতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যে অনেক ভাবনা ভেবে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে তেমন একটি প্রতীয়মান হচ্ছেনা, সমস্যার গভীরে যাওয়া হচ্ছেনা। যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সমস্যার গভীরে যেতে হয় এবং কেন সমস্যাটি তৈরি হয়েছে সেটা বুঝতে হয়। তা না বুঝে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে সেই সিদ্ধান্তটা হিতে বিপরীত হতে পারে এবং এখন যেটা হচ্ছে। সমস্যার গভীরে না যাওয়ার কারণে সিদ্ধান্তগুলো এমন হচ্ছে। তবে এই ধরণের অগোছালো এবং উদ্ভট সিদ্ধান্তের কারণে করোনা মোকাবেলায় দেশের সামগ্রিক পরিকল্পনায় একটি বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭