নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 25/05/2020
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও তাঁর আশেপাশের নগরী আর চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সব চেয়ে বেশী ধনী লোকের বসবাস। আর এখানেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। অবাক করার কথা হল বাংলাদেশের সব চেয়ে ধনীদের অনেকেই এখন করোনায় আক্রান্ত, দুই একজন ধনী মানুষ, পদস্থ কর্মকর্তা, ডাক্তার, মেডিক্যাল স্টাফ, পুলিশ সহ বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন। অনেকে করোনায় আক্রান্ত। আগামীতে যে আরও আক্রান্ত হবেন না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই ধনী শ্রেণির বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ বা ভারত নয় সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চায়না, আমেরিকা ইংল্যান্ডে তাঁদের চিকিৎসা করান।
বাংলা ইনসাইডারের খবরে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন শুধু ঢাকার মধ্যেই সংক্রমণ সীমাবদ্ধ নেই, চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। লক্ষণীয় ব্যাপার যে, করোনার যে সংক্রমণ হচ্ছে তা গরীব মানুষের চেয়ে ধনীদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, এখন পর্যন্ত যে ৩২ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে, তাঁর মধ্যে উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্তদের সংখ্যাই বেশি। কারণ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বড় শিল্প-গ্রুপ এবং বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, মারা গেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক এম পি হাজী মকবুল সাহেব। এছাড়াও আক্রান্ত হয়েছে এই গ্রুপের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন হা-মিম গ্রুপের এ কে আজাদ। এছাড়াও এপেক্স গ্রুপের নজরুল এলাহীর স্ত্রী।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশে ধনীরা কেন বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কয়েকটি বড় কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে- ১. ব্যবসায়িক কারণে ঘরের বাইরে যাওয়া, ২. ধনীরা দুশ্চিন্তা বেশি করেন, ৩. বাংলাদেশে ধনীদের চিকিৎসা নিতে অনীহা, ৪. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ধনীদের মধ্যে, ইত্যাদি।
গত ২৮ জুন, ২০১৯ বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে জানায় কেবল ভারতেই প্রতি বছর নব্বই হাজার কোটি টাকা, চিকিৎসা বাবদ ব্যয় করে থাকে বাংলাদেশি গরীব আর মধ্যবিত্ত রোগীরা! এর বাইরেও যারা ধনী তাঁরা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চায়না, আমেরিকা ইংল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন যার ব্যয় ভারতের চেয়ে ২ বা ৩ গুণ বেশি হবার কথা। আমরা এবার দেখে নিই ভারতেই কোথায় কোথায় বাংলাদেশের গরীব আর মধ্যবিত্তরা চিকিৎসার জন্য যান, কেন যান।
দেবী শেঠির নাম জানেন না এমন শিক্ষিত মানুষ বাংলাদেশে খুব কম আছেন। ব্যাঙ্গালুরুতে দেবী শেঠির নারায়না হেলথ সিটিতে ঢুকতেই যে বিষয়টা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হলো, একটি ছাদের নিচে চার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ উপাসনা করে। মুসলমানদের মসজিদ, সনতান (হিন্দু) সম্প্রদায়ের মন্দির, খ্রিষ্টানদের গির্জা ও শিখদের গুরুদুয়ারা! মুসলমানেরা তো শুক্রবারে মসজিদের অংশের বাইরেও ঘাসের উপর নামাজ পরে থাকে। এটাই তাঁদের রোগী বান্ধব পলিসি। দেবী শেঠির এই হসপিটালে অনেক বাংলাদেশি রোগী হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে যা;, সম্ভবত চট্টগ্রামের রোগী বেশি এসে থাকে, চট্টগ্রামের লোকেরা তো নিজেরাই ঠাট্টা করে বলেন, ‘পয়সা, খরচ করে ভারতীয় গরুর মাংস খাইয়া, হার্টে ব্লক বানাই, আবার টাকা খরচা করে ভারতে আসি হার্টের অপারেশন করতে’! নারায়না হেলথ সিটি হওয়ার আগে ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি রোগীরা মনিপাল হসপিটালে হৃদরোগের চিকিৎসা করত। তবে মনিপাল হসপিটালে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি।
সাগর তীরের চেন্নাই শহরে রয়েছে চেন্নাই এপোলো, শংঙ্কর নেত্রালয়া, চেন্নাইয়ের ভেলোর জেলায় রয়েছে সিএমসি হসপিটাল। খুব কম খরচে যেখানেও সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা সেবা নিতে যায় বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও আস্থার প্রতীক যে হসপিটালটি, তা হচ্ছে ভেলোরের এই সিএমসি হসপিটাল। অনেক পুরনো এ হসপিটাল। বেশির ভাগ স্টাফ ও ডাক্তার রোগী-বান্ধব। আজকাল ভেলোরে সিএমসি হসপিটাল, চেন্নাই এপোলো, শংঙ্কর নেত্রালয়া হাসপাতালের সামনে দোকানগুলোতে বাংলা লেখা দেখলে বুঝা মুশকিল দক্ষিণ ভারতের এই ক্ষুদ্র অংশটুকু কলকাতা, নাকি ঢাকার কোনো মহল্লা।
এর বাইরে কোলকাতাতেও অনেক বাংলাদেশি রোগী ভাষাগত ও অন্যান্য কারণ চিকিৎসা সেবা নিতে যান। আগে এটা অনেক বেশি ছিল এখন অনেক কম বাংলাদেশ রোগী কলকাতায় যান।
সম্প্রতি বাংলাদেশের আরো একটি দৈনিকে, এসেছে, ভারতে চিকিৎসা নেয়া ৪৫ শতাংশ রোগীই বাংলাদেশি! এই কথার প্রমাণ পেতে আপনি যদি উপরের উল্লেখিত হাসপাতালগুলোতে যান, তখন দেখবেন সেখানকার প্রায় অর্ধেকের বেশী বাংলাদেশী রোগী। যদিও দুই লাখ, একুশ হাজার মেডিকেল ভিসা নিয়েছে গত বছর বাংলাদেশিরা! কিন্তু ভ্রমণ ভিসা নিয়েও চিকিৎসা করিয়ে থাকে যা এই রিপোর্টে বা জরিপে আসেনি। তাহলে এর সাথে কমপক্ষে আরো দুই লাখ বাড়বে। গত ছয় বছরে ভারতে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলছে। ভারতের একটি বিরাট আয়ের উৎস বাংলাদেশের রোগীরা। ভারতীয়রা ব্যবসাটা আমাদের চেয়ে খুব ভালো বুঝে। শুনেছি, রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকা কালীন এক প্রখ্যাত প্রবাসী ডাক্তারকে ধরে এনে যথাযোগ্য সম্মান ও বিদেশে থাকার সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বলেন, দেশেই চিকিৎসা কর্ম চালিয়ে যান।
আপনারা অনেকেই জেনে থাকবেন যে, ঢাকার এপোলো হাসপাতাল বন্ধ হয়ে অন্য নামে চালছে এখন। এর কারণ ঢাকার এপোলো হাসপাতালে অনেক বেশি খরচ নেন, আর আচরণ রোগী বান্ধব নয়। গত নভেম্বর মাসে চেন্নাই এপোলো হাসপাতালে যাবার আগে একজন রোগী ঢাকার চেন্নাই এপোলো একটা অপারেশনের খরচ জানতে যান। তাঁর কাছে অপারেশন খরচ চাওয়া হয় ২৪ লাখ টাক সেই রোগীর কাছে চেন্নাই এপোলো চায় ১৪ লাখ টাকা। তখনি চেন্নাই এপোলোর একজন কর্মকর্তা জানান যে, আগামী তিন মাসের মধ্যেই ঢাকার এপোলোর লাইসেন্স বাতিল হবে।
অনেকেই দাবি করেন যে, এশিয়ায় সব চেয়ে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা জাপানে। আমাদের দেশে এমন অনেক ধনী আছেন যারা জাপানিজ ষ্ট্যাণ্ডার্ডের একাধিক হাসপাতাল বাংলাদেশে তৈরি করেও ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চায়না, আমেরিকা ইংল্যান্ডে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা নিতে যাওয়া কমিয়ে ফেলতে পারেন। তাঁরা দেশের সবগুলো বিভাগেই এমন একাধিক হাসপাতাল তৈরি করার আর্থিক ক্ষমতা তাঁদের আছে, নেই শুধু মানসিকতা বা রোগী বান্ধব মেডিক্যাল ব্যবসার ইচ্ছার অভাব। আমাদের দেশের ডাক্তারদের মেধা কম নয়, তাঁরা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে অনেক উন্নত চিকিৎসা দিতে সক্ষম। প্রয়োজনে বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনেও উন্নত রোগী বান্ধব চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব নয়।
সব ক্ষেত্রেই স্বজন হারানোর ব্যথার রূপ ও কষ্ট এক। সে গরীব আর বড় লোক যেই হউন না কেন। এবারের করোনাভাইরাসের করাল থাবায় আমাদের ম ও মননের পরিবর্তন আনতে বাধ্য। আজ ঈদ। এই ঈদের দিনে আমরা আমাদের দেশের ধনীদের কাছে কী এই প্রত্যাশা করতে পারি না যে তাঁরা এখন চিকিৎসা ব্যবসায় এগিয়ে এসে আমাদের সবাইকে বাঁচাবেন, নিজেরাও চিকিৎসা সেবা নেবেন, আমাদের দেশও আর্থিক ও স্বাস্থ্য সেবা খাতে হবে সমৃদ্ধ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭