লিট ইনসাইড

ভাইরাস ডনের বঙ্গ ঈদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/05/2020


Thumbnail

আমার নাম করোনা। 

নাম শুইনা কি মনে হয়? পোলা না মাইয়া আমি?
 
হে হে হে……  নিপা, ইবোলা অগো মত কিউট আর মেয়েলী মনে না হইলেও নামকরনে কি আসে যায় বলেন।
কি ভাবতাছেন? অবশ্য আপনাগো মত অনেকেই শুরুতে খুব নিরীহ ভাবছিল আমারে, তয় ইউরোপ, আমেরিকায় আসল চেহারা দেখার পরে অনেকেই বুঝবার পারছে আমি আসলে কি জিনিস। অনেকেই তো কইতাছে আমি নাকি ভাইরাসকুলের নয়া ডন। তয় আপনাগো পরিচিত ডন টাইপ চরিত্রগুলার লগে আমার পার্থক্য হইলো আমার কোন পাসপোর্ট ভিসা লাগে না, জীন-ভুতের মতোই আইজ আমেরিকা তো কাল ইতালি ঘুরবার পারি। 

ঘুরতে ঘুরতে আপনাগো দ্যাশের কথিত রেমিট্যান্স যোদ্ধা নামক এক লোকের সাথে এই দ্যাশে আইসা ঢুকছিলাম আমি, ওরে হয়তো চিনবেন আপনারা, আপনাগো দ্যাশেতো আবার সবকিছুই ভাইরাল হয়।
ওই যে “আই এম ইটালিয়ান পাসপোটধারী” কইয়া ক্যামেরায় ভিলেনের মতো চিল্লানো লোকটার লগেই রি দ্যাশে আসছিলাম আমি।
 
আপনাগো দ্যাশের সানগ্লাস পড়া এক নেতা আমারে হুমকি দিয়া কইছিলো আপনারা নাকি করোনার চাইতেও শক্তিশালী, বিশ্বাস করেন ভাই ওই কথা শোনার পড়ে দিন রাইত চব্বিশটা ঘন্টা ডরে হাটু কাপছে আমার, তার কনফিডেন্স দেইখা মনে হইছিলো আমি আর কিসের ডন আসল ডন তো আপনাগো সেই সানগ্লাস পড়া নেতা।

কিন্তু ভাই সত্য কথা কইতে গেলে তহন খুব একটা সুবিধা করতে পারিনাই। আপনাগো দ্যাশের মানুষগুলা ভাই একেকজন একেক কিসিমের, প্রথম প্রথম কয়দিন একটু একটু ভয় পাইলো আমারে, নিজেরে নিজে তখন বারবার আয়নায় দেখতাম আমি, বুঝেনই তো ভাইরাস ডন বইলা কথা। 

কিন্তু এরপর আমার হাত থেকে বাঁচতে যেইনা সরকার ছুটির ঘোষণা দিলো, ওমা আমার আগে দেখি লাখে লাখে মানুষ কক্সবাজার গিয়া উপস্থিত। সরকারের কড়াকড়িতে ইচ্চা থাকলেও কক্সবাজার ট্যুরটা দিতে না পাইরা মন খারাপ করছিলাম খুব। 

অনেক আগেই শুনছিলাম আপনাদের দেশের গার্মেন্টস এর কথা, আশায় বুক বাধছিলাম আপনাদের পৃথিবীক্ষ্যাত গার্মেন্টসগুলাতে একটু ঘুরতে যাবো, কিন্তু ছুটির ঘোষণা দিয়া ওই আশাতেও গুড়েবালি। 

যাও দুই একজন নিয়ম ভাইঙ্গা বাড়ির বাইরে আসতে শুরু করলো আমার সাথে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে আর সিগারেটের ধোঁয়ায় আমার সাথে আড্ডা জমাইতে কিন্তু আপনাদের সেনাবাহিনী আর পুলিশ তা হইতে দিলো কই, রাগে আর ক্ষোভে পুলিশ আর সেনাবাহিনীর সদস্যদের শরীরেই ঢুকতে শুরু করলাম।

আপনারা ভাই বহু টুইস্ট দেখাইছেন আমারে এই কয়েক মাসে, একে একে গার্মেন্টস খুইলা দিলেন,লোকজন রাস্তায় নামলো, তখন আমার খুশি দেখে কে। 

গার্মেন্টসগুলায় নিয়মিত যাইতে লাগলাম, সেই সাথে বাদ দিলাম না মাছের বাজার,সবজি বাজার আর আগে নিস্তার পাওয়া চা সিগারেটের দোকানগুলাতেও। 

এরপর আসলো রমজান মাস, ইচ্ছা ছিলো আপনাদের বড় বড় মার্কেট আর শপিংমলগুলা ঘুইরা দেখবো, সে সৌভাগ্য আর হইলো কই ব্যবসায়ী নেতারা একজোট হইয়া আমারে ঠেকানোর জন্য রাখলো সব বন্ধ কইরা, শহরে তখন আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আবার আসলো নতুন টুইস্ট তারাই আবার খুইলা দিল সব দোকানপাট।

হে হে হে…… প্রথম প্রথম “সীমিত আকারে” নামক শব্দটায় ভয় পাইছিলাম খুব, কিন্তু পরে বুঝলাম আমারে আতিথেয়তা দেওয়ার জন্যই এই শব্দের উৎপত্তি। আপনারা বড্ড অদ্ভুত জাতি ভাই, আমার মতো ডন আপনার দেশে অথচ আপনাদের শুনি ঈদের শপিং করাই লাগবে, মাঝে মাঝে কিছু আপুর টিভি ইন্টারভিউ দেইখা পরাণডা জুড়াইতো আমার, তারা বলতো করোনা আবার কি ঈদ আগে আর শপিং আগে, মনে মনে কইতাম ঘর ছাইড়া আহো ভাতিজ আহো।
 
মার্কেটগুলাতে গিয়া ঢুকলাম আর আক্রান্ত করতে শুরু করলাম হাজারে হাজারে, আগে দিনে এক সংখ্যা দুই সংখ্যার আক্রান্তের লিস্ট দেইখা আমার অন্য দেশের করোনা ভাইয়েরা নাক সিটকাইতো, তবে আমি বরাবরই সবুরে মেওয়া ফলে মতবাদের অন্ধ ভক্ত। এখন মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়াই আর বলি খেলা তো মাত্র শুরু। 

সবশেষে আমার শেষ সুযোগটা খুজতে শুরু করলাম, ভাইরাস ডনের মান ইজ্জতটাতো রাখতে হয়। কিন্তু দিলেন সব মানুষের ঈদ যাত্রা বন্ধ কইরা। কিন্তু আপনারা যে টুইস্ট দেওয়া জাতি ওইটার উপরেই আমার ভরসা ছিলো, সবকিছু আবার খুইলা দিলেন ঈদ উৎসব পালনের জন্য। 

আমি এখন মাঝ পদ্মায়, নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি দেখাইয়া ফেরীতে উইঠা পরা এক ভাইয়ের ফ্যামিলির সাথে খুলনার পথে আছি, ইচ্ছা আছে খুলনা শহর ঘুইরা সুন্দরবনটাও একটু দেইখা যাবো। ঈদ শেষে আবার হয়তো অন্য এক ভাইয়ের শরীরে চাইপা বিনা ভাড়ায় চইলা আসবো আপনাদের ঢাকা শহরে। ডন যখন নাম রাখছেন ডনের কাজতো দেখাইতেই হবে, কথায় আছেনা “ওস্তাদের মাইর শ্যাশ রাইতে”।

আপাতত ঈদ কাটাইতে যাই,শুনছি প্রতিবারের মতো এইবার ঈদের পরে আপনাদের বিরোধীদলের আন্দোলনের হাকডাক নাই, ঈদের পরে আরো বড় পরিসরে খেলতে আসবো, আপাতত সকল রকম টুইস্ট জমা করতে থাকেন, খেলা হবে…।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭