ইনসাইড আর্টিকেল

চাঁদের অহংকার ঘুচালো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/07/2017


Thumbnail

রাতের তারাময় আকাশের ওই চকচকে চাঁদের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছেন রানী। রাজা এসে দেখলেন রানী চাঁদের কাছে যেন কী চাইছেন আর কান্না করছেন। একটু কাছে আসতেই শুনতে পেলেন একটা সন্তানের আসায় চাঁদের কাছে আকুতি রানীর। আলেকজান্ডার ছোট্ট একটি রাজ্যের রাজা ম্যাখাও ও রানী ভিক্টোরিয়া নিঃস্তান দম্পতি। অনেক পথ্য, কবিরাজের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয় নি তাদের। তারপরও প্রতিদিন চাঁদের কাছে রানী একটা সন্তানের জন্য কাঁদেন, যদি চাঁদ দয়া করে সন্তান লাভের সৌভাগ্য দান করে।

এত কান্না শুনে চাঁদ আর থাকতে পারলেন না। রানীর কান্নায় অতিষ্ট হয়েই পৃথিবীতে নেমে এলেন। আর এসেই রানীকে বর হিসেবে সন্তান লাভের সুখ দান করলেন। যেই কথা সেই কাজ। কিছুদিন পর রাজা ম্যাখাও ও রানী ভিক্টোরিয়া রানীর কোল জুড়ে এলো একটা সুন্দর রাজপুত্র। নাম রাখলেন মুন।

একটু একটু করে বড় হতে লাগলো মুন। রাজ্যের ছেলে বুড়ো রাজপুত্রের ব্যবহারে মুগ্ধ। সবার সঙ্গে খেলা আর লাফালাফি করেই সারাদিন পার করতো ছোট্ট মুন। একদিন রাতে মা রানী ভিক্টোরিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদকে ধন্যবাদ জানানো তার মুনকে দেওয়ার জন্য। হঠাৎ রানীর কামরার বারান্দায় ছোট্ট রাজপুত্রটির আগমন। মাকে জিজ্ঞেস করলো কি করছো মা?

মা তখন তার ছোট্ট সোনামনিকে কোলে নিয়ে চাঁদ দেখিয়ে বললেন, ওইটা হলো তোমার চাঁদ মামা। মুন বলে উঠলো, ‘চাঁদ আবার মামা হয় কীভাবে? ওই চাঁদে যাব আমি বাড়ি বানাতে, ওইখানে আমি রাজ্য গড়বো’। এই বলে হাসতে হাসতে চলে গেল মুন। এতটুকু ছোট্ট শিশুর মুখে এ কথা শুনে মা তো হতবাক।

রানী ভয় পেয়ে চাঁদের কাছে ক্ষমা চাইলেন, তার সন্তানকে ক্ষমা করার জন্য আকুতি করতে থাকলেন। হঠাৎ চাঁদ এসে হাজির। হাসতে হাসতে প্রায় পরেই যায়। তারপর হাসি একটু থামিয়েই চাঁদ অহংকার করে বলল, ’এই পুচকি ছোড়া আমার কিছুই করতে পারবে না, আমি এক, অভিন্ন। মানুষের সাধ্য নেই আমার কাছে পৌঁছানোর। ’

প্রাচীনকাল থেকেই চাঁদ নিয়ে অনেক রহস্য, অনেক কল্পকাহিনী, অনেক উদ্ভট চিন্তাভাবনা ছিল মানব সমাজে। কিন্তু চাঁদে মানুষের পা পড়ার পর এসব আর রুপকথা নেই।

চাঁদে এই অহংকারের পতন কিন্তু মানুষ দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। মানুষ এখন বামুন হয়ে চাঁদে যাচ্ছে। রেখে আসছে পদ চিহ্ন। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই প্রথম চাঁদে পা পড়ে মানুষের। তিনি হলেন ‘নীল আর্মস্ট্রং’।

চাঁদকে দেখিয়েছেন রুপকথার মুন বলেছিল চাঁদে যাবে, ঠিকই মানুষ পারে ওই চাঁদ জয় করতে। একজন মার্কিন নভোচারী ও বৈমানিক ‘নীল আর্মস্ট্রং। তিনি চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানুষ।

তাঁর প্রথম মহাকাশ অভিযান হয় ১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দে, জেমিনি ৮ নভোযানের চালক হিসাবে। এই অভিযানে তিনি ও ডেভিড স্কট মিলে সর্ব প্রথম দুইটি ভিন্ন নভোযানকে মহাকাশে একত্রে যুক্ত করেন। আর্মস্ট্রং-এর দ্বিতীয় মহাকাশ মিশন ছিল এপোলো-১১ এর মিশন কমান্ডার হিসাবে।

১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে এডউইন অলড্রিনকে সঙ্গে নিয়ে নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে অবতরণ করেন এবং প্রায় আড়াই ঘন্টা সেখানে অবস্থান করেন। সে সময়ে মাইকেল কলিন্স মূল নভোযানে অবস্থান করেন। তাঁরা তিনজনই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সময়ে "প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম" পদকে ভূষিত হোন।

নীল আর্মস্ট্রং’ এর চাঁদে পা রাখার ৪৮ বছর পর মানুষ এখন স্বপ্ন দেখে চাঁদে বসবাসের। এখন বিশ্ব অনেক এগিয়ে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এখন আর চাঁদে কেন মানুষ মঙ্গল গ্রহকেও জয় করে এসেছে। কিছুদিন পর শুক্রগ্রহেও তার পদচারণা ফেলে আসবে। দেখা যাবে মঙ্গলগ্রহেও জমি কিনে বসবাস শুরু করেছে। ওইখানকার ওই লালমাটিতে ফসল ফলাচ্ছে। আর ফেইসবুকে সেলফি তুলে ভাইরাল করে দিচ্ছে। আর এরপর গ্রহগুলোতে মানুষের ভির লেগে যাবে। কে কোন গ্রহে বাস করবে তা নিয়ে হবে নানা বিতর্ক। আর না হয় সামাজিক গণমাধ্যমে এই গ্রহ নিয়েই চলবে অনলাইন ব্যবসা। আর তা নিয়ে হবে দরকষাকষি। এমনভাবেই দ্রুতগতিতে প্রযুক্তির সঙ্গে দৌঁড়ে চলছে মানুষ।

বাংলা ইনসাইডার/টিআর

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭