নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 25/05/2020
ভুতের গলির ৫৬/৩ নাম্বার বাড়িটায় দাদার জন্মের বছর থেকেই ইকরাম আলীর পরিবারের বসবাস। ইকরাম আলীর মনে আছে, ছোটবেলায় বাবার সাথে বেবিট্যাক্সিতে চড়ে ঈদের জামা কিনতে যখন বঙ্গবাজার যেতেন তখন কেমন একটা ঈদ ঈদ গন্ধ নাকে লাগতো ইকরাম আলীর। সে অনেককাল আগের কথা, সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে ইকরাম আলী এখন বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ।
প্রতিবছর সারা মাস নিয়ম করে রোজা রাখে ইকরাম আলী, সেই সাথে এলাকার বয়স্ক বন্ধুবান্ধবের সাথে এই বয়সেও তারাবী নামাজ মিস হয়না তার। তবে এবার যেন সব কিছু কেমন উল্টে গেলো, করোনা নামক এক ভাইরাসের কারনে এবার সবকিছুই যেন এলোমেলো, প্রথম প্রথম ইকরাম আলী অতটা গুরুত্ব না দিলেও করোনার কারনে বৃদ্ধদের মৃতের হার বৃদ্ধিতে অনেকটায় টেনশনে ফেলেছে তাকে। তাই ইকরাম আলীর এ বছরের রোজা, আর নামাজ আদায় দুটোতেই পরিপূর্ণ সংযম। ঘরেই আদায় করেছেন তারাবীর নামাজ, মুখে মাস্ক দিয়ে জুম্মার নামাজ পড়তে গেলেও থেকেছেন নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্বে।
দেখতে দেখতে রমজান এর রোজা শেষ হবার সাথে পাল্লা দিয়ে দেশজুড়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, দিনদিন তাই শঙ্কা বাড়ছে ইকরাম আলীর মনে। এর মাঝে ইকরাম আলী ছোটকাল থেকেই দেখে আসছে যে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি নামক একদল লোকের চাঁদ দেখা না দেখায় কিছু হলে না হলেও সৌদি আরবে ঈদ পালনের পরের দিনেই ঈদ পালনের রেওয়াজ। ইকরামের শঙ্কা আর বাড়তে লাগলো যখন সে দেখতে পেলো যে এ বছর স্বয়ং সৌদি আরবেই ঈদের দিনের কারফিউর ঘোষণা। কিছুটা দ্বিধা মনের মধ্যে নিয়েই শেষ রোজার ইফতারি আর এশার নামাজ আদায়ের পরে ঘুমাতে গেলেন ইকরাম আলী।
সকালে ফজরের নামাজের উদ্দেশ্যে আজ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লেন ইকরাম আলী, নামাজ শেষে কারো জন্য অপেক্ষা করছেন ইকরাম, সদ্য ফজরের নামাজ শেষ করা বড় মসজিদের ইমাম সাহেব তাকে দেখেই সালাম ঠুকলেন। মসজিদে নামাজে আগত মুসল্লিদের পাশ কাটিয়ে ইমাম সাহেবের সাথে একান্ত আলাপ সেরে মসজিদ থেকে বের হলেন ইকরাম আলী।
প্রতিবারের মতো এবারও সকাল আটটা তিরিশ মিনিটে ঈদের জামাত ভুতের গলির বড় মসজিদে, দলে দলে লোকজন ছুটছে ঈদগাহের দিকে। পাঞ্জাবীতে আঁতর মেখে নিয়ে জায়নামাজ হাতে ঘর থেকে বের হলেন ইকরাম আলী, বের হবার আগেই মনে পড়লো মুখে মাস্ক পড়বার কথা। ইকরাম আলী মসজিদের সামনে যেতেই মাইকে ইমাম সাহেবের কন্ঠে শুনতে পেলেন নতুন এক আহ্বান, ইমাম সাহেব কোমল সুরে বর্ণনা করছেন নবীজীর মহামারি সংক্রান্ত সতর্ক বানী, সেই সাথে মুসল্লিদের বলছেন অবশ্যই নামাদের সময় নিজেদের মাঝে তিন ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে। ইমাম সাহেবের কথা শুনে সবাই নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্বে জায়নামাজ বিছিয়ে নিচ্ছেন, সেইসাথে সকলের মুখেই শোভা পাচ্ছে অনেক ধরনের মাস্ক। মনে মনে এবার একটু খুশী হলেন ইকরাম আলী, সকাল বেলা ইমাম সাহেবকে যেভাবে বুঝিয়ে বলেছিলেন ঠিক তেমনভাবেই সবার উদ্দেশ্যে করোনা মহামারি নিয়ে কথা বলেছেন ইমাম সাহেব আর নামাজের কাতারে তৈরী করা সামাজিক দূরত্ব সবাই খুব ভালোভাবেই মেনে চলেছেন।
যথারীতি নামাজ শুরু হল, দীর্ঘ তিরিশটি সিয়াম সাধনার পরে ঈদের নামাজের মোনাজাতে সকল দোয়ার পাশাপাশি ইমাম সাহেব দুনিয়া থেকে করোনা মহামারি তুলে নিতে ফরিয়াদ জানাচ্ছেন আল্লাহ্র দরবারে।
শেষ হলো ইকরাম আলীর ঈদের নামাজ, নামাজ শেষ হতেই ইকরাম আলীর দিকে এগিয়ে আসতে থাকলেন ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার সময়ের একমাত্র বন্ধু হালিম শেখ, মুচকি হাসি দিয়ে হালিম শেখকে থামিয়ে দিয়ে ইকরাম আলী বললেন-
“হালিম বেচে থাকলে হয়তো আরো ঈদ পাবো, সামনে বছর সুস্থ পৃথিবীতেই নাহয় তোর সাথে আবার ছোটবেলার মত কোলাকুলি সেরে নেবো, সকলের ভালোর জন্য আপাতত এই বছরের কোলাকুলিটা তোলাই থাক”।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭