ইনসাইড গ্রাউন্ড

ভবিষ্যৎ পেস বোলিংয়ের ভরসা রনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/07/2017


Thumbnail

তার উঠে আসার গল্পটা রুপালি পর্দার সিনেমাকেও যেন হার মানাবে। জন্ম একেবারেই প্রান্তিক এক জনপদে। নেত্রকোনার বাহাট্টা থানার রায়পুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রাম। বাবা জালালউদ্দিন। গ্রামের হাটে তিনি ধান-চালের ব্যবসা করতেন। সংগ্রাম করতে করতেই যার কেটে যায় পুরোটা দিন। ছেলের মধ্যের সুপ্ত প্রতিভার দিকে কতটাইবা নজর দিতে পারতেন তিনি।

তারপরও স্বপ্ন আঁকা ছিলো ছেলেটির মনে। আকাশ দিয়ে বিমান উড়ে যেতে দেখলেই স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যেত সে। মনে মনে এঁকে যেত আকাশে ওড়ার ছবি। যেখানে পাইলট সে নিজেই। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নও বদলে যেতে থাকে তার। পাইলট নয়, এখন তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ভবিষ্যৎ তারকা। তারকা হওয়ার সব গুণই তার মধ্যে আছে।

তিনি আবু হায়দার রনি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের আগামীর তারকা পেসার। নেত্রকোনা থেকে রনির জাতীয় দলে উঠে আসার পেছনে রয়েছে অনন্য ইতিহাস। আবু হায়দার রনি ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবি ছিলেন। ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতেন পড়াশোনার মাধ্যমে ভালো কিছু করার। কিন্তু ঘটনার মধ্যে দিয়ে বদলে যায় আবু হায়দার রনির জীবনের গল্প।

২০০৭ সালে আন্তঃস্কুল ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে বেশ ভালো করেন তিনি। পরে বয়সভিত্তিক দলে ডাক দেওয়া হয় তাকে। রনির কোচ হন সজল তালুকদার। এই সজল তালুকদারের কোচিংয়ে বদলে যেতে থাকে তাঁর জীবনের গল্প।

তাঁর আবিভার্ব ঘটে ২০১৫ বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। সেই আসরে ১২ ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন ২১ উইকেট, যা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার বোলিং গড় ছিল ১৫.০৪ এবং ইকোনোমি রেট ৬.৯১। সেরা বোলিং ১৯/৪। ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন দুইবার।

আর সেই সুবাদে গত বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টি দিয়ে বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয় রনির। তবে নিয়মিত হতে পারেননি। খেলেছেন পাঁচটি টি-টোয়েন্টি। অন্য ফরম্যাটেও জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেননি।

বয়স মাত্র ২০ পেরিয়েছে। এখনও অনেক বাকী। তাই তাকে পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করাটা রীতিমতো অন্যায়ই। তার উপর এখনো জাতীয় দলের দরজা খোলেনি ছেলেটির। তবে ব্যাটসম্যানদের ডাক করতে বাধ্য করানোর পর যে শারীরিক ভাষার বহিঃপ্রকাশ, সেটি ক্ষিপ্র এক পেসারের আবির্ভাবের সম্ভাবনার কথাই জানিয়ে দেয়। সঙ্গে বয়সভিত্তিক দলে টানা কয়েক বছর প্রতিভার বিচ্ছুরণ, সামর্থ্যকে পারফরমেন্সে রূপান্তরের দক্ষতা ও টেম্পারামেন্টের দিকে খেয়াল রাখলে অনায়াসেই বলে দেওয়া যায়- বাংলাদেশ ক্রিকেট আরেকজন তেজিবাঘের সার্ভিস পেতে যাচ্ছে।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৯ ম্যাচ খেলে বল হাতে নিয়েছেন ৩৮টি উইকেট। ইনিংসে সেরা ৪১/৪ এবং ম্যাচে সেরা ১৩২/৭। গড় ৩৪.৮৬ এবং ইকোনোমি রেট ৩.৬৫। ম্যাচে চার উইকেটে পেয়েছেন তিনবার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪০ ম্যাচ খেলে বল হাতে শিকার করেছেন ৬৮টি উইকেট। গড় ২১.৫০। ইকোনোমি রেট ৪.৮৮। সেরা বোলিং ৩৫/৬। ম্যাচে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন দুইবার এবং চার উইকেট পেয়েছেন চারবার।

কিছুদিন আগেই শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগেও বল হাতে আগুন ঝড়িয়েছেন। ১৬ ম্যাচে ১৩২.৫ ওভার বল করে, ৬৪৫ রান খরচে শিকার করেছেন ৩৫টি উইকেট। সেই সুবাদে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। সেরা বোলিং ছিল ৩৫/৬। বোলিং গড় ১৮.৪২ এবং ইকোনোমি রেট ৪.৮৫। চার উইকেট শিকার করেছেন তিনবার এবং পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন একবার।

পারফর্ম করে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। রিনির মূল লক্ষ্য জাতীয় দলে খেলা। কারণ তার সঙ্গেই খেলা মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরা জাতীয় দলে খেলে যাচ্ছেন। যা দেখে কিছুটা হলেও আফসোস হয় রনির।

এ বিষয়ে তরুণ এই পেসার বলেন, ‘আফসোস অবশ্যই কাজ করে। আফসোস করার মতোই বিষয়। কারণ আমরা একসাথেই ছিলাম। এখন ওরা খেলছে কিন্তু আমি পারছি না বা আমি দলে নেই। এটায় অবশ্যই খারাপ লাগে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি যত দ্রুত ফেরা যায়।’

জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ার কারণটাও অজানা নয় রনির। নিজের দুর্বল জায়গা আবিষ্কার করতে পেরেছেন তিনি, ‘ আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। এগুলোকেই আমি প্রধান কারণ বলব। ফিটনেসটা আরও উন্নতি করতে হবে। এরপর বোলিংয়ে আত্মবিশ্বাস যেমন একটা জায়গায় বোলিং করা বা ইচ্ছা মতো ডেলিভারি দেওয়া এসব জায়গায় উন্নতি করতে হবে।’

বাংলা ইনসাইডার/ডিআর/টিআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭