ইনসাইড বাংলাদেশ

চীন আসছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/05/2020


Thumbnail

করোনা পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন আসবে তার সুস্পষ্ট ইংগিত ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। করোনায় শুধু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাননি অনেক রাষ্ট্রনায়ক তাঁদের স্বজন হারিয়েছে। করোনার উৎপত্তি সম্পর্কে সবাই মোটামুটি নিশ্চিত হলেও এর বিস্তার নিয়ে চীন নিজেকে সন্দেহাতীতভাবে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি বলে সত্য মিথ্যের মিশেল দুনিয়া জুড়ে মানুষ আর রাষ্ট্রের কর্ণধারদের অন্তরের গভীরে সন্দেহের বীজ গেড়ে বসেছে। এছাড়া সস্তা শ্রম আর পণ্য মূল্যের কারণে চীনের উপর নির্ভরশীলতার পরে নিত্য ব্যবহার্য পণ্য সরবরাহে করোনাকালে যে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে চীনে বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রসমূহ এক বা একাধিক বিকল্প পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমেরিকা ইউরোপ ছাড়াও এশিয়ার অন্যতম শিল্পোন্নত দেশ জাপানও তাঁদের শিল্প কারখানা চীন থেকে অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। মনের ভিতর ক্ষোভ পুষে রাখা ইউরোপ অন্তর্মুখী ভাব দেখালেও যুক্তরাষ্ট্র তার স্বভাব সুলভ ভাষায় কথা বলছে যাতে মনে হচ্ছে চীনের সাথে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের শুরু হতে যাচ্ছে আমেরিকার। আসলে কি শুধুই আমেরিকা একাই না সাথে আরও কেউ আছে?  

 

অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন যে, পারমানবিক বোমা মেরে দেশ জয়ের দিন আর নেই। এখন অর্থনৈতিক যুদ্ধের সময়। মঙ্গোলিয়ান চেঙ্গিস খান সারা দুনিয়ার অর্ধেক দখল করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও অল্পের জন্য সফল হতে পারেন নি। তারই উত্তরসূরি চায়নিজরা সারা দুনিয়ার বাণিজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েছিল বলে এখন অনেক দেশ সন্দেহ করছে। তাই তারা বিকল্পের সন্ধানে আছেন, কোথা থেকে কম মূল্যে  তাদের জন্য ভোগ্য পণ্য আর ক্যাপিটাল মেশিনারি বানানো যায়।    

 

বিপুল জনসংখ্যার দেশ ভারত। গবেষণা আর প্রযুক্তির দিক দিয়েও তারা খুব পিছিয়ে নেই। অনেক ক্ষেত্রেই তারা তাদের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। তাই ইউরোপ আমেরিকা, জাপানের মত অনেক দেশ ভারতে তাদের শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় বেশী আগ্রহী হতে পারে, কারণ ভারতে তাঁরা কম করে হলেও ২০ বছর তাঁদের ব্যবসা চালাতে পারবেন। এছাড়া আছে বাংলাদেশ। এর জনসম্পদও কম নয়, অবকাঠামোগত দিক দিয়ে দেশটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যা শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য খুব জরুরি। এর পাশে আছে অল্প জনসংখ্যার উন্নয়নে আগ্রাসী ভূমিকার দেশ ভিয়েতনাম সাথে কম্বোডিয়া, লাউস, ইত্যাদি। আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপানের মত দেশ যদি তাদের শিল্প কারখানা এসব দেশে স্থানান্তর করতে শুরু করে তাহলে তারা চীনের চেয়ে কম মূল্যে তাদের পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে বলে আশাবাদী। তখন বিশ্ববাণিজ্যে চীন হবে অনেকটা কোন ঠাঁসা। এমতাবস্থায় চীন কী করবে তার বিপুল দক্ষ কর্মী বাহিনী নিয়ে? কীভাবে তারা সস্তায় পণ্য তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজার দখলে রাখবে বর্তমানের মত করে? কারণ সব দেশের মানুষ সস্তায় পণ্য সামগ্রী কিনতে চান।     

 

চীনের সঙ্গে চলমান সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বৈশ্বিক করোনাভাইরাস সংকট ও হংকংয়ে নতুন আইন পাসসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় গত রোববার তিনি এ মন্তব্য করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে দোষারোপ করেছেন। ওয়াং ই বলেন, `যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনৈতিক শক্তি চীন-মার্কিন সম্পর্ককে জিম্মি করছে এবং এই দুই দেশকে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।`

 

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ তিক্ত। বাণিজ্য, মানবাধিকার ও অন্যান্য ইস্যুতে দুই দেশের মতানৈক্য তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এই সংকট নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়শই অভিযোগ করছেন যে, নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনের হাত রয়েছে।

 

ওদিকে চীনের নতুন আইন প্রণয়নকে কেন্দ্র করে আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হংকং। প্রযুক্তিতে উন্নত তাইওয়ানের সাথে শুরু হয়েছে নতুন ঝামেলা, তাইওয়ান স্বাধীনতা চায়। এর পিছনে আমেরিকার হাত আছে বলে চীন অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে। ফলে হংকংও তাইওয়ানকে সামাল দিতে চীনের সামরিক ব্যয় বাড়বে। অর্থনীতিতে পড়বে চাপ।

 

উপরের অবস্থা বিবেচনা করে একজন বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন যে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বাংলাদেশের সরকারী অফিস সংস্কৃতির কারণে প্রথম ধাক্কায় চীন থেকে আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপানের শিল্প বাণিজ্য স্থানান্তরে বাংলাদেশের ভাগ্যে খুব কম সুযোগ জুটতে পারে। আর সেই সুযোগ লুফে নিতে পারে চীন। কারণ বাংলাদেশ একসাথে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি ভারত, চীন ও জাপানের সাথে একতালে সম্পর্ক রেখে চলেছে। এছাড়া ভারতের সাথে চীনের সম্পর্ক খুব মধুর নয়, বরং বৈরী। অন্যদিকে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাউস জনসংখ্যার নিরিখে বড় দেশ নয়। পুরো শিল্প কারখানা কম্পিউটারাইজড করতেও সময় নেবে। তখন চীনের সামনে বিকল্প হিসেবে এশিয়ায় থাকবে একমাত্র বাংলাদেশ। ততদিনে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে অনেক বেশী, বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বাংলাদেশের সরকারী অফিস সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন আসবে, আসতে বাধ্য হবে। এমতাবস্থায় চীন তার বিনিয়োগের বিরাট অংশ আনবে বাংলাদেশে। কিছু হয়তো যাবে আফ্রিকার কোন কোন দেশে।          

 

করোনা স্থিতু হলেই আগামী কয়েক বছরেই চীন থেকে শিল্প বাণিজ্য স্থানান্তরের পুরো চিত্রটা পরিষ্কার হতে শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা-প্রতিষ্ঠান পপুলেশন কাউন্সিলের ২০১৯ সালের ভাষ্যমতে, `২০৩৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে হবে কমপক্ষে ২১ কোটি’ হবে। এই বিপুল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে চীন এখানে শ্রমঘন শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে উৎসাহী হবে, আর তার সম্ভাবনাও অনেক বেশী। এখন দরকার বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠন আর কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো জোরদার করা চীন, জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে শিল্প বাণিজ্যে বিনিয়োগ আনায়।           



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭