ইনসাইড বাংলাদেশ

‘কঠোর কারফিউ’ চান বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/05/2020


Thumbnail

করোনা সংক্রমন লাগামহীন ভাবে বাড়ছে এবং বাংলাদেশ একটি ঘোরতর সংকটের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। বাংলা ইনসাইডার এর সাথে আলাপকালে তারা বলেছেন সব কিছু খুলে দিলে সর্বনাশের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছবে বাংলাদেশ। আর এ কারনেই তারা মনে করছেন যে এখন এই ছুটি শেষ নয়, আর নতুন করে ছুটিও নয় বরং আগামি সাত থেকে দশদিন কারফ্যু প্রয়োজন। বাংলা ইনসাইডার এর আলাপ কালে অন্তত তিন জন বিশেষজ্ঞ এই মন্তব্য করেন।

তাদের মন্তব্য গুলো এখানে দেয়া হল-

ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক: সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রি এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন-

“ছুটি শব্দটির সাথেই আমি একমত নই। আমি মনে করি যে এটাকে লকআপ বলা দরকার বা কারফ্যু বলা দরকার। কারণ আমরা নিয়ম মানিনা এবং ছুটি শুনলে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। এর আগে ছুটির জন্য যে সর্ত গুলো দেয়া হয়েছিল সেই একটি সর্ত ও কেউ মানে নাই।”

ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক মনে করেন যে, আমরা নিয়ম মানবো না, এই নিয়ম না মানার কারনেই আমাদেরকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে না হলে আমাদের জন্য ভয়াবহ প্রস্থিতি অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন যে, এই ঈদ এর ছুটিতে যারা বাড়িতে গিয়েছেন হয় তারা সংক্রমিত হয়েছেন না হয় করেছেন কেউ কেউ সংক্রমন নিয়ে ফিরে এসেছেন। তারা আস্তে আস্তে আরও ভয়ংকর প্রস্থিতি তৈরি করবেন। এই কারনেই যে যেখানে আছেন সেখানেই আরও কয়দিন রাখা দরকার। তিনি বলেন যে আমাদের ঢাকার বাহিরে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় করোনা চিকিৎসার ন্যুনতম সুযোগ নেই। কারণ তিনি মনে করেন যে, আমরা সবাই জানি যে আমাদের স্থানীয় পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোর কি অবস্থা। এখানে অক্সিজেন নেই, আই সি ইউ নেই। ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক মনে করেন যে, যাদের মৃদু সংক্রমন তারা বাসাই হাসপাতালের চেয়ে ভালো চিকিৎসা নিতে পারবে। কিন্তু যখন রোগীর সংখ্যা বাড়বে তখন সংক্রমিত মানুষ এবং জটিল রোগীর সংখ্যাও বাড়বে তখন আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।

তিনি বলেন- “ আমাদের কে এখন কঠোর হাতে মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রন করতে হবে। না হলে যে পরিস্থিতি হবে, সেই পরিস্থিতি আমরা চিন্তাও করতে পারছিনা।"

 

সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মোদাচ্ছের আলী বলেছেন, এখন সব কিছু খুলে দিলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙ্গে পড়বে এবং আমরা হার্ড ইম্যুনিটির দিকে যাব। তিনি বলেন যদি এই পরিস্থিতিই চলতে থাকে তাহলে হয়তো পাঁচ কোটি লোক আক্রান্ত হবে এবং কত মানুষ মারা যাবে তা আমরা চিন্তাও করতে পারিনা। এই পরিস্থিতি আমাদের কারো কাম্য নয়। এজন্য অন্তত সাত থেকে দশদিন কারফ্যু দেয়ার প্রস্তাব করেন সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তিনি বলেন,

“আমাদের এই অবস্থা চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই আমাদের হেলথ সিস্টেম ফেইল করবে। এবং এর ফলে যে পরিস্থিতি হবে সেটা সবার এ নাগাল এর বাহিরে চলে যাবে এবং আমরা চিন্তাও করতে পারিনা যে কি ভয়ংকর পরিনতি হবে।”

 

শাহ্‌ মুনির: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহা পরিচালক শাহ্‌ মুনির মনে করেন যে আরও পনেরো (১৫) দিন অন্তত কঠিন লকডাউন বা কারফ্যু দেয়া উচিত। তিনি বলেন, যেভাবে রাস্তা-ঘাটে লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঈদ এর ছুটিতে যেভাবে সবাই ঘর মুখি হয়েছে এই গুলোর খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে করোনা সংক্রমন আরও নেতিবাচক হবে। এর ফলে আমাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে পড়বে। শাহ্‌ মুনির মনে করেন যে, ছুটি শব্দটি দিয়ে কাজ হয়নি এবং আমাদের যে দুই মাস ছুটি সেই ছুটি-টি আসলে অর্থবহ হয়নি। তার চাইতে বরং আমাদেরকে কারফ্যু বা লকডাউন বলতে হবে।

 

অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান: স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিসধের সভাপতি এবং করোনা সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শ কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান মনে করেন যে-

“ছুটি শব্দটির সাথেই আমি একমত নই। এখন ছুটি শব্দটির অপব্যবহার হয়েছে এবং ছুটিতে সবাই হলিডে মুডে চলে যায় এর ফলেই সব সর্বনাশ হয়েছে।”

তিনি মনে করেন আগামি কয়েকদিন টাইট লকডাউন করতে হবে এবং সাথে সাথেই অর্থনৈতিক দিকেও সচল করতে হবে। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশকে প্রয়োগ করার উপরে আরও গুরুত্ব আরোপ করেন,  ডাঃ ইকবাল আর্সলান বলেন-

“স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়া আমরা কোথাও ডিজিটাল কার্যক্রম দেখিনা। অফিস আদালতে যাওয়ার বদলে ডিজিটাল অফিস চালু করতে হবে এবং অন্যান্য দেশগুলো এভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতেই অফিস চালু রেখেছে। অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে কল কারখানা চালু করতে হবে এই কলকারখানা চালু করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিতিমালা ও ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে।”

 

তিনি বলেন , যেই এলাকা গুলোতে করোনা সংক্রমণ কম সেই এলাকা গুলোতে পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক করে অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে।

তিনি মনে করেন যে, সারাদেশে যেভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে এটি এখন নিয়ন্ত্রন করা খুব কঠিন হয়ে যাবে কারণ ঢাকার বাহিরে চিকিৎসার ব্যবস্থা খুবি দুর্বল।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭