ইনসাইড আর্টিকেল

সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ না স্বাভাবিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/05/2020


Thumbnail

সমকামিতা মানবসভ্যতায় নতুন কিছু নয়। মানবসভ্যতায় বহু আগে থেকেই সমকামিতার অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায় ইতিহাস থেকে। পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আলামীন সমকামিতার জন্য লুত জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলেন। হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক ইতিহাসেও সমকামিতার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। দেবতা বিষ্ণু ও মহাদেব শিবের হরিহর রূপে মিলনের সবচেয়ে প্রচলিত উদাহরণ। হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ সিনেমাতে সমকামিতার বিষয়ে তুলে ধরা হয়। ঐতিহাসিক কাহিনী নির্ভর এই সিনেমা প্রমাণ করে আমাদের এই অঞ্চলেও যুগ যুগ ধরে সমকামিতা চলে এসেছে এবং আছে। আমাদের এখানে পহেলা বৈশাখে সমকামিদের র্যা লি বের করতে শোনা যায়। ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে সমকামিদের আড্ডাও নাকি রয়েছে। ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ সমকামিদের আইনগতভাবে সঙ্গী বেছে নেওয়া মানে বিয়ের অধিকার দিয়েছে। আর এসব ঘটনায় সমকামিতা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ক) সমকামিতা কি শারীরিক বা মানসিক রোগ? খ) সমকামিতা কি প্রকৃতিবিরুদ্ধ না স্বাভাবিক? গ) সমকামিতা বা সমকামী সম্পর্ক/বিবাহের বৈধতাদান কতটুকু যৌক্তিক? ঘ) সমকামিতার কারণ কি জৈবিক নাকি ফ্যাশন?

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে, জন্মগতভাবে ব্যক্তির জিন বা হরমোনের বৈষম্য (হরমোন ডিজঅর্ডার) সমকামিতার পেছনে দায়ী, বলে উল্লেখ করা হয়। কেউ কেউ ভাবেন মানুষ প্রাকৃতিক ও জন্মগতভাবে কোনো ব্যক্তি এই বৈষম্যের শিকার। বিশেষজ্ঞরা জানান। রোগের স্বাভাবিক সংজ্ঞা অনুসারে যা কোনো মানুষকে শারীরিক বা মানসিকভাবে কষ্ট দেয় তাই যদি রোগ হয়, তবে সমকামিতা কোনো রোগ নয়। কারণ এতে কোনো ব্যক্তি শারীরিক বা মানসিক কষ্ট পায় না। এটি কোন ধরনের জেনেটিক বিকৃতি বা রোগ নয়। ঠিক একই কারণে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯০ সালে মানসিক রোগের তালিকা থেকে সমকামিতাকে বাদ দিয়েছে।

ক্যামব্রিজের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষমকামী নারীদের চেয়ে সমকামী নারীদের মানসিক সমস্যা দ্বিগুণ ও উভকামী নারীদের সমস্যা তিনগুণেরও বেশি। সুতরাং তাদের মতে, প্রকৃতির স্বভাববিরুদ্ধ কোনো কিছুকে কখনোই রোগ না বলাটা যৌক্তিকতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। বাংলাদেশের আইন সমকামিতাকে এখনো প্রকৃতিবিরুদ্ধ মনে করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়ার বিধান রেখেছে। দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা জন্তুর সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এ ধারায় বর্ণিত অপরাধীরূপে গণ্য হওয়ার জন্য যৌন সহবাসের নিমিত্তে অনুপ্রবেশই যথেষ্ট বিবেচিত হবে। আইনের ব্যাখ্যায় পায়ুকাম এবং পশ্বাচারকেই ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

তবে যাই, পূর্বেকার অনেক সংস্কার আমাদের সময়ে এসে কুসংস্কারে পরি গণিত হয়েছে। হয়তোবা আমাদের অনেক সংস্কার পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম পরে কুসংস্কারে পরিবর্তিত হবে। কারণ জ্ঞানবিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা বা বিতর্ক এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে মানবসভ্যতা। কারণ একটা জিনিস আমাদের মানতেই হবে সভ্যতা বা সংস্কৃতি সবসময় যে ভালো জিনিসটাই গ্রহণ করে তা আমরা বলতে পারি না। আবার শুধু যে খারাপটাই গ্রহণ করছে তাও বলা যায় না। সৃষ্টির শুরু থেকে এভাবেই চলে আসছে, হয়তোবা এই চলাটাই নিরন্তর।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭