ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে করোনায় কম মৃত্যু কেন গুরুত্বপূর্ণ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/05/2020


Thumbnail

বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে যে কর্মকৌশল এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, সেই পরিকল্পনাগুলোর মূল ভিত্তি কত লোক আক্রান্ত হয়েছে তা নয়, বরং মৃত্যুর হার কি সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। আর একারণেই সরকার করোনার সঙ্গে বসবাসের নীতি গ্রহণ করেছে এবং অর্থনীতি যেন সচল থাকে, করোনার কারণে যেন সবকিছু নিশ্চল হয়ে না যায় সেই ব্যাপারটিতে ক্রমশ গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে।

ঈদের আগেই সরকার অর্থনীতির চাকা সচল করার উদ্যোগ নিয়েছিল, গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছিল, ঈদ উপলক্ষ্যে দোকানপাট খোলা হয়েছিল এবং সরকারি অফিসগুলো সীমিত আকারে চালু করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে যে, সরকার আগামী মাস থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং অন্যান্য বিষয়গুলো মাথায় রেখে অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি সচল রাখতে আরো বেশকিছু পদক্ষেপ নেবে এবং অফিসসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজকর্ম যেন আস্তে আস্তে শুরু হয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে সরকারের সবথেকে অনুপ্রেরণার উৎস হচ্ছে করোনায় মৃত্যুহার কম। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায়  ২২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এতে মোট ৫৪৪ জন মারা গেলেন করোনায়। একই সময়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৫৪১ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৯২। এই পরিসংখ্যানটি অনেক ব্যর্থতার মাঝেও বাংলাদেশকে আশার আলো দেখাচ্ছে। যদিও কোন কোন সমালোচক বলার চেষ্টা করেন যে বাংলাদেশে যেহেতু পরীক্ষা কম হচ্ছে এবং যেহেতু অনেকেই হাসপাতালে যাননি, উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন, তাঁদেরকে হিসেবের মধ্যে ধরা হয়নি বলে সংখ্যা কম। কিন্তু সবকিছু মিলিয়েও বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের ৮০ দিনে যে পরিমাণ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে তা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।

বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, একটি রোগ নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয় তখনই যখন এই রোগে মৃত্যুহার বেশি থাকে এবং করোনার আতঙ্কের প্রধান কারণ হলো দ্রুত মৃত্যু। একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসে যদি করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে ঐ রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী মোট রোগীর ৩ থেকে ৫ ভাগ দ্রুত অবনতির দিকে যান, ফুসফুস দ্রুত অকেজো হয়ে যায় এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁদেরকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে আইসিইউ সুবিধা দিয়েও তাঁদেরকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে আইসিইউ ব্যবহারকারী রোগীর সংখ্যা অনেক কম। এটা সত্য যে, মুমূর্ষু অবস্থায় চলে গেলে অধিকাংশ রোগীদের বাঁচানো যাচ্ছেনা, কিন্তু এটা সারাবিশ্বেই একই প্রবণতা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২৯২ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং এই ৩৮ হাজার করোনা রোগীদের মধ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছে প্রায় ২৭ হাজার এবং এদের মধ্যে হাসপাতালে থাকা রোগীর সংখ্যা অনেক কম।হাসপাতালে না থেকে আক্রান্তরা বাসায় থাকছেন এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন। এই তথ্যটি বাংলাদেশের জন্য আশা জাগানিয়া এবং এই তথ্যটি বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বাংলাদেশে করোনার যে ঝুঁকি, সেই ঝুঁকির মধ্যেও বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা হলো মৃদু উপসর্গের রোগী বেশি থাকা এবং মৃত্যুর হার কম- এই দুটি তথ্যের উপর ভিত্তি করে। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন যে, যদি সংক্রমণ বেড়ে যায় তাহলে মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে, ৩৮ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের পরেও আমাদের মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যা অনেক কম এবং এই সংখ্যা কম থাকার একাধিক কারণ বিশেষজ্ঞরা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর মধ্যে রয়েছে তারুণ্যের প্রভাব এবং বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকা এবং আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে বাংলাদেশের গরীব মানুষদের মাঝে করোনার সংক্রমণ কম হচ্ছে। যদিও তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি কম মানছেন, গাদাগাদি করে থাকছেন। আবার স্বাস্থ্যবিধি মানার পরেও বড়লোকদের মধ্যে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এই বিষয়টির মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, যারা দৈহিক পরিশ্রম করছেন, যারা বেশি রোদে-তাপে বেশি সময় থাকছে তাঁদের মাঝে করোনা সংক্রমণ কম হচ্ছে এবং করোনা সংক্রমণ হলেও তাঁরা মৃদু উপসর্গ নিয়ে থাকছেন এবং ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিজে থেকে সুস্থ হছেন। এটা অন্য সাধারণ জ্বর বা কম গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ অসুখ হিসেবে ক্রমশ পরিচিত হচ্ছে। যদিও এই রোগটি ভয়াবহ সংক্রামক এবং একজনের হলে গোটা পরিবারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশে যেহেতু করোনার জটিল রোগীর সংখ্যা কম এবং যেহেতু করোনায় মৃত্যুহারও অনেক কম সেজন্য বাংলাদেশ অনেকগুলো ঝুঁকি নিতে পারছে। সেই ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতিকে সচল করার নীতি এবং করোনাকে আর দশটি স্বাভাবিক রোগের মতো দেখার কৌশল এবং করোনা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার সাহস। আর এটার ফলে দ্রুতই বাংলাদেশ অর্থনীতির চাকা সচল করতে পারবে বলে ধারণা করছেন অনেকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭