ইনসাইড আর্টিকেল

করোনায় বন্ধ যত পবিত্র স্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/05/2020


Thumbnail

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র। অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু কি বন্ধ করা হয়নি। সবকিছুই করোনার করাল গ্রাসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। চলুন দেখে নেই করোনার কারণে সারা পৃথিবী জুড়ে পবিত্র স্থান কিংবা ধর্মীয় তীর্থস্থানগুলোর কি অবস্থা।

ভ্যাটিকান সিটি

ধর্মীয় তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ভ্যাটিকান সিটি। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য অনেক চার্চের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে এখানকার চার্চও। সম্প্রতি ভ্যাটিকানের দেয়ালে পরিবেষ্টিত হয়ে পোপ এমন একটি ধর্মীয় আচার উদযাপন করছেন, যা করার কথা ছিল সমগ্র ইটালির। নানা জাতি ও বিশ্বাসের বিশপ ও চার্চ প্রধানরা একের পর এক তাদের সম্মিলন গুলো বাতিল করছেন। এছাড়া আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চার্চ যেমন, ভিয়েনায় সেইন্ট স্টেফেনসে প্রবেশ একদম কড়াকড়ি করা হয়েছে।  

মসজিদ

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র স্থান হল মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে। মসজিদ দুটি অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসাথে বাতিল করা হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় আয়োজন পবিত্র হজ ও ঈদের জামাত। এই অবস্থা যে শুধু সৌদি আরব জুড়ে তা নয়, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এই অবস্থা।

সিনাগগ

করোনা ভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অসংখ্য সিনাগগ বন্ধ হয়ে আছে। কদিন আগে ইহুদিদের পুরিম উৎসব কোনমতে পালিত হল, কিন্তু পূর্বেকার সেই জাঁকজমকের বা আয়োজনের কোন বালাই ছিল না। রোমের সেইন্ট পিটারস ক্যাথিড্রালও এখন পুরোপুরি বন্ধ। ইসরায়েলে সিনাগগগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা একেবারে কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ মানুষ পবিত্র বস্তুগুলোতে চুমু খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের চার্চ

ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত স্থান। এখানেই অবস্থিত যীশুর পবিত্র জন্মস্থান বেথেলহামের পবিত্র গীর্জা। করোনা সংক্রমণের কারণে ফিলিস্তিন অধ্যুষিত বেথেলহাম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সাথে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে গোটা দেশে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে বেথেলহামের পবিত্র এই গির্জা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতেয়াহ।

মন্দির

করোনার কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবার আগে এবং সবচেয়ে কঠোর অবরোধ বা লকডাউন প্রয়োগ করেছে ভারত। এ থেকে বাদ যায়নি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও। ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের আহমেদাবাদ জেলায় অবস্থিত সাঁইবাবা সংস্থান ট্রাস্ট পরিচালিত বিশাল আশ্রম ও সেবাকেন্দ্র। জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে মানবসেবা এবং মানব মনে প্রশান্তি প্রদান ছিল সাঁইবাবার মূল আদর্শ। তাই হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সব মানুষের ভক্তির স্থান সাঁইবাবা আশ্রম। পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুটি হাসপাতাল এবং শত শত ভক্ত ও দর্শনার্থীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সাঁইবাবা সংস্থান ট্রাস্ট।

ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের গ্র্যান্ড রোডে সমুদ্রসৈকতে গড়ে ওঠে জগন্নাথ মন্দির। জগন্নাথকে ভক্তরা মহাপ্রভু বিষ্ণুর আরেক রূপ বলে মনে করে। এ মন্দিরে রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রান্নাঘর, যেখানে কোনো প্রকার পিয়াজ বা রসুন ছাড়া নিরামিষজাতীয় ৫৬ ধরনের খাবার তৈরি হয় প্রতিদিন। হাজার হাজার ভক্ত ও পূজারি এ খাবার খেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেন। এনডিটিভি র প্রতিবেদনে প্রাচীন এ মন্দির করোনার কারণে বন্ধের ঘোষণা আসে। তাছাড়া, বৈষ্ণ দেবী মন্দির, বেনারশির কাশি বিশ্বনাথ মন্দির, অন্নপূর্ণাদেবী মন্দির ও সংকটমোচন হনুমান মন্দির, মুম্বাইয়ের সিদ্ধিভিনায়ক মন্দির, তিরুমালার তিরুপতি দেবাস্থানাম মন্দির, গোহাটির কামাক্ষ্যা মন্দির, মধুরার সূর্য মন্দির এবং উত্তরপ্রদেশের মাথুরার বৃন্দাবনে অবস্থিত বৃন্দাবন চন্দ্রদয়া মন্দিরসহ আরও শত শত মন্দির বন্ধ রয়েছে।

সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার যে করোনার কারণে চার্চ, সিনাগগ, মসজিদ, মন্দির সসব জায়গাতেই ধর্মীয় আচার পালনে কিছুটা খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে। চার্চ কিংবা অন্য উপাসনায়গুলোতে ধর্ম মূলত নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও তাদের সংবেদনশীল তার ওপর নির্ভর করে। যেমন, পবিত্র পাথরে, তোরাহ বা অন্য পবিত্র গ্রন্থে বা ক্রুশে অনেক মানুষের চুমু খাওয়া কিংবা একই পেয়ালা থেকে সবাই পান করা ইত্যাদি সবই বন্ধ রয়েছে এক করোনার কারণে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭