ইনসাইড বাংলাদেশ

বেসরকারি হাসপাতাল যখন ঘাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/05/2020


Thumbnail

ইউনাইটেড হাসপাতালকে বলা হয় দেশের সবচেয়ে নামি হাসপাতাল এবং সবথেকে আধুনিক হাওপাতাল হিসেবেও তাঁরা নিজেদের দাবি করে। কিন্তু সেই হাসপাতালেই গতরাতে যে ঘটনাটা ঘটলো তা শুধু দূর্ভাগ্যজনক নয়, রীতিমত অপরাধ। আর এটা কোন অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়ার ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। হাসপাতাল মালিকদের লোভ যে কি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে ইউনাইটেড হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি তাঁর প্রমাণ। এমনি বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেন মৃত্যুকূপ এবং এখানে চিকিৎসার চেয়ে মালিকদের অর্থলিপ্সা এবং টাকা কামানোই হলো সবথেকে বড় চাহিদা এবং আমরা দেখি যে, বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মালিকরা কিভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছেন। যারা এলিফ্যান্ট রোডের ছোট্ট এক ঘুপচিতে দুই রুমের ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতেন তাঁরা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এবং আমরা সবসময় বলি ব্যাংক লুটেরাদের কথা। যারা বিভিন্ন সেক্টরে লুটপাট করছে তাঁদের কথা। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে যে ভয়াবহ লুটপাট করছে এই বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মালিকরা তা বেসরকারি কিছু মালিকের অর্থনৈতিক স্ফীতি দেখলেই বোঝা যায়।

ইউনাইটেড হাসপাতাল টাকার লোভে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করা শুরু করেছিল এবং করোনা রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য যে বিশেষায়িত ব্যবস্থার দরকার, সেই ব্যবস্থা করেনি। বরং তাঁরা রাজউক বা কর্তিপক্ষের কোনরকম অনুমতি না নিয়েই হাসপাতালের বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেছিল এবং সেখানে তাঁরা ‘করোনা ব্যবসা’ শুরু করেছিল। আর এই ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে তাঁরা এমন নিয়ম করেছিল যে, কেউ যদি করোনা পরীক্ষা করতে যায় তাহলে তাঁকে ভর্তি হতে হবে। ভর্তি হওয়া মানে টাকা এবং ভর্তির পর যদি দেখা যায় যে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় তাঁর নেগেটিভ ফলাফল এসেছে তাহলেও তাঁকে ছাড়া হবেনা। যারা মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের কয়েকজন আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পরেও তাঁদেরকে ছাড়া হয়নি এবং আইসোলেশন ইউনিটের নামে করোনা ব্যবসা করেছিল। কিন্তু রোগীদের নূন্যতম নিরাপত্তা দেওয়া, তাঁদের সুরক্ষার কোন নূন্যতম ব্যবস্থাই ছিল না। এখন জানা গেল যে, তাঁদের যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল, তাও ছিল মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ। একটি এত বড় হাসপাতাল, যেখানে প্রতিদিন হাজার মানুষ যাতায়াত করে, সেই হাসপাতালের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে মানুষ যাবে কেন।

শুধু ইউনাইটেড হাসপাতাল নয়, আমাদের চারপাশে যত হাসপাতাল রয়েছে, তা সবই হলো টাকা কামানোর মেশিনে এবং রোগীরা এখানে জিম্মি। রোগীদের জিম্মি করে অর্থ উপার্জন যেন এদের মূল লক্ষ্য। আমরা জানি না, যে পাঁচজন মারা গেল, তাঁদের হত্যার বিচার হবে কিনা। আমরা দেখবো যে, একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে, কদিন পরে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আর প্রকাশিত হবেনা এবং এক সময় দেখা যাবে যে, সবকিছুই স্বাভাবিক। ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম অভিযোগ নয়। শুধু ইউনাইটেড নয়, ল্যাব এইড, পপুলার, এ্যাপোলো সব হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই অভিযোগগুলো কেমন করে যেন হাওয়া হয়ে যায়। কারণ তাঁরা বিত্তবান, তাঁদের টাকার জোর আছে। আমরা জানি যে, ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যুবরণ করেছে মানুষ, তাঁর বিচার হয়নি। আমরা দেখেছি যে, গৌতম আইচকে ল্যাব এইড হাসপাতাল থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর শ্বাসকষ্টের জন্য, তাঁর বিচার হয়নি। আমরা দেখেছি যে, পপুলার হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায় আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হয়েছে, তাঁরও কোন বিচার করা হয়নি এবং এখন যখন ইউনাইটেড হাসপাতালে যে মৃত্যুবরণ করলেন পাঁচজন, তাঁরও কোন বিচার হবেনা। হাসপাতালের মালিকদের কাছে যেন শুধু জনগনই জিম্মি নয়, সরকারও যেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পায়। তাহলে কি তাঁরা বিচারের উর্ধ্বে? 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭