ইনসাইড বাংলাদেশ

আক্রান্ত বাড়লে কি করবে সরকার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/05/2020


Thumbnail

আগামী রোববার থেকে সবকিছু খুলে যাচ্ছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে সীমিত আকারে সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে যখন সীমিত আকারে ব্যাংক-বাজারহাট খুলে দেওয়া হয়েছিল তখনই উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছিল। আর এখন সবকিছু খুলে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ যে কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে উঠবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে ঢাকা শহরে গণপরিবহন, জীবিকার অন্বেষণে মানুষের চলাচলের ফলে যে আবার যানজট এবং সামাজিক দুরত্ব ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে তা অনুমান করতে কোন বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। আর বাংলাদেশ এমন এক সময়ে এসব খুলে দিচ্ছে যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা এবং প্রতি ১০০ জনে ২১ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় যদি আক্রান্ত বাড়তেই থাকে তাহলে বাংলাদেশ কি করবে? 

একাধিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, বাংলাদেশে এখনো পিক শুরু হয়নি, পিক শুরু হতে হতে মধ্য জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, গত ২৬শে এপ্রিলের পর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ঢাকায় এসেছে, এর ফলে সামাজিক সংক্রমণের নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে। আবার ঈদে লোকজন যে বাড়িতে গেছেন এবং এখন আবার যে বাড়ি থেকে ঢাকায় আসছে, এর ফলে সামাজিক সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে। অর্থাৎ এই দ্বিতীয় পর্যায় যদি মধ্য জুন পর্যন্ত থাকে, তাহলে মধ্য জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি পিকে উঠবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই মধ্য জুন পর্যন্ত কি করোনার সংক্রমণ বাড়বে এবং এটা যদি বাড়তে থাকে তাহলে কি হবে? 

সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, সরকার এইটা অনুধাবন করেই নতুন প্রজ্ঞাপনে ১৫ই জুন পর্যন্ত শর্তগুলো দিয়েছেন। ১৫ই জুনের পর তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে এই খোলা রাখার সিদ্ধান্তটি পূণর্বিবেচনা করবে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবিএম আবদুল্লাহ বলেছেন যে, আগামী ৫-৬ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ক’দিনে যদি করোনা পরিস্থিতি উর্ধ্বগতি হয় তাহলে সিদ্ধান্ত পূণর্বিবেচনা করা হতে পারে। করোনা মোকাবেলায় যে পরামর্শ কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটির ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ মনে করেন যে, বাংলাদেশে যদি করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ভিন্ন নীতি গ্রহণ করা লাগতে পারে। আর একারণেই প্রশ্ন উঠেছে যে, যদি আগামী কয়েকদিন একইভাবে শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে সরকার কি করবে? এক্ষেত্রে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, সরকারও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এই জন্য সরকার আগামী দুই সপ্তাহ পরিস্থিতি বিবেচনা করতে চায়। এই দুইসপ্তাহ যদি শনাক্তের হার বাড়তে থাকে, পাশাপাশি যদি মৃত্যুহার এবং জটিল সংক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে সরকার হয়তো সিদ্ধান্ত পূণর্বিবেচনা করলেও করতে পারে। তবে সরকারের একাধিক সূত্র বলেছে যে, আগামী ১১ই জুন বাজেট ঘোষণা এবং এখন অর্থনৈতিক জুন ক্লোজিং চলছে, এই পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য সবকিছু বন্ধ রাখা অর্থনৈতিকভাবে প্রচণ্ড দুরূহ ব্যাপার। এজন্য সরকার ১৫ই জুন পর্যন্ত অর্থনৈতিক বিন্যাস, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আসলে পরিস্থিতি কোনদিকে যায় সেটা দেখতে চাচ্ছে। যদি দেখা যায় যে, আগামী ৭ দিন শনাক্তের হার কমতে থাকে, তাহলে সরকার হয়তো ক্রমাগতভাবে শর্তগুলোকে শিথিল করবে। 

তবে সরকারের একাধিক সূত্র বলছে যে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি সবকিছু চালু করা যায় এবং দীর্ঘসময় যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা যায়, তাহলে আক্রান্ত বাড়লেও পরিস্থিতি খুব একটা খারাপ হবেনা। বরং আস্তে আস্তে করোনার সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার একটি চর্চা হবে। যেই চর্চাটি গণস্বাস্থ্যের জন্য আতঙ্কজনক হবেনা, পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতির জন্যেও ইতিবাচক হবে। কাজেই সরকার এখন আবার সবকিছু বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি বিবেচনা করছে না; বরং সরকার আগামী দুই সপ্তাহ করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চায়। আর যদি আক্রান্ত বাড়ে, তবে মৃত্যু হার বা জটিল রোগীর সংখ্যা তেমনভাবে না বাড়ে এবং করোনা চিকিৎসায় এখন যে ধারাটি রয়েছে যে, বাসায় থেকে চিকিৎসা- তা অব্যহত থাকলে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্তেই অটল থাকবে। 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭