ইনসাইড বাংলাদেশ

উপসর্গ-হীন করোনা রোগী, WHO এবং ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/05/2020


Thumbnail

বাংলাদেশের মত যে সব দেশে যেখানে WHO গাইডলাইন সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারের অনুরোধ উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে অবাধে মাস্ক ছাড়া ঘোরাফিরা করছেন তাঁদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ ভাগ আছেন উপসর্গ-হীন করোনা রোগী। বিশেষ করে যারা কায়িক পরিশ্রম করেন, নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাঁদের মধ্যে এই উপসর্গ-হীন করোনা রোগীর সংখ্যায় বেশি। এরাই আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণের জন্য বড় ঝুঁকি।     

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত বেশি থাকে। কারণ, সৃষ্টিকর্তা জন্মের সময় থেকেই আমাদের শরীরে Innate Immunity দিয়ে দিয়েছেন, যা আমাদেরকে সুরক্ষা দিচ্ছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এছাড়াও নানা ধরণের টীকা, ওষুধ প্রয়োগ করে ও বিভিন্ন রোগে ভুগে ভুগে মানুষ তাঁদের শরীরে Acquired Immunity তৈরি করে, বা তৈরি হয় মানুষের দেহে।      

ইমিউনিটি আমাদের শরীরকে রক্ষা করার এক ধরণের সৈন্য-সামন্তের মত। যারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাঁরা আবার খুব কৌশলী, যুদ্ধের জন্য এরা প্রতিনিয়ত আমাদের দেহের মধ্যে কোটি কোটি নতুন রূপান্তর ঘটিয়ে নতুন শক্তি অর্জন করে আমাদের রক্ষা করে।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের সাথে যেহেতু আমাদের শরীর পরিচিত নয়, সেহেতু একমাত্র Innate Immunity বাহিনীই এর সাথে সফলভাবে যুদ্ধ করতে পারে৷ শিশুদের Innate Immunity খুব শক্তিশালী বিধায়, করোনা ভাইরাস তাদেরকে কাবু করতে পারেনা৷ সেই জন্য সব দেশেই শিশুদের মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম আর বয়স্কদের মৃত্যুর হার বেশি। যাদের পরিবারে বা সে সমাজে উপসর্গ-হীন করোনা রোগী যত বেশি সেখানে বয়স্কদের মৃত্যুর হার বা আক্রান্তের হার তত বেশি।  

সম্প্রতি বাংলাদেশের এক সাংবাদিক তাঁর করোনা উপসর্গ-ওয়ালা তাঁর শশুরকে ডাক্তারের কাছে পরীক্ষার জন্য নিলে ঐ শশুরের চলাফেরার ইতিহাস খতিয়ে দেখা হয়। এতে দেখা যায় যে, ঐ মুরুব্বি গত ২ মাসের বেশি সময় কোনদিনও একবারের জন্যেও বাইরে বের হন নি। তখন ঐ সাংবাদিককে উপসর্গ-হীন করোনা রোগী অনুমান করে টেস্ট করলে বুঝা যায় যে, তিনি আসলেই উপসর্গ-হীন করোনা রোগী। সাংবাদিক সাহেব উপসর্গ-হীন করোনা রোগী হওয়ায় বাসায় সবার সাথেই খোলামেলা মিশেছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন করোনা সংক্রমণের অচেনা বাহক। তাই এখন ডাক্তারগন বলছেন যে, আমাদের ভাবতে হবে যে, ‘আমি ছাড়া সবাই রোগী। এমন চিন্তাই আমাদের রক্ষা করতে পারে। বাসার বাইরে বেরুলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হওয়া দরকার’।          

বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের অন্য দেশকে অনুসরণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে দেশের সব কর্মকাণ্ড খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনটিতে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতার কথা জানানো হয়েছে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানো ও সংক্রমণ রোধ করতে মাস্ক পরার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও মাস্ক পরা নিয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো অবস্থাতেই বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিন্তু পত্রিকার খবরে দেখা গেছে যে, WHO বলেছে- আক্রান্ত ছাড়া মাস্ক পরার দরকার নেই। WHO এর কথায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। কারণ চীনারা গরম-পানির ব্যবহার করেছেন করোনা মোকাবিলায়।  অথচ WHO একবারের জন্যেও এসব কথা বলছে না! একেক সময় একেক কথা মানে উল্টাপাল্টা কথা বলছে, তাতে বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকে কি WHO  বিভ্রান্ত করছে না!    

এদিকে আরেকটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের মত দেশে সবাই প্রায় করোনা বিশেষজ্ঞদের মত বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এটা করলে এটা হবে, সেটা করলে ওইটা হবে ইত্যাদি। মুখে কারোই লাগাম নেই। আসলে করোনা সম্পর্কে কেউ কিছু ভালভাবে জানেন না, তাই এমন কথা সবাই শুনছেন নিজেদের জীবন রক্ষা করতে। তবে গত তিন মাসে এসব শুনে শুনে অনেকেই এটা বুঝতে পেরেছেন যে, কিছু বলনে-ওয়ালা মানুষ আছেন যারা সব বিষয়েই কথা বলে নিজেকে আলোচনায় রাখাতে চান।  

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে সব কিছু খুলে দেওয়ার সরকারি এই সিদ্ধান্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘এতে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়বে। এটা মোটেও সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি’।  

শুক্রবার গণমাধ্যমকে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘এখন যদি সবকিছু খুলে দেয়া হয় তাহলে তো অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমাদের দেশে এখন যে হারে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এর মধ্যে সব খুলে দেয়া তো ভুল হবে’।     

করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে করোনা পরীক্ষাও সেভাবে হচ্ছে না। করোনা নির্ণয়ের পরীক্ষা যদি আরও করা যেত, তাহলে আক্রান্তের হার আরও বেড়ে যেত’। উনি এটা ঠিক বলেছেন। কিন্তু এটা বলেন নি যে, আমাদের পরীক্ষার সেই অবকাঠামোগত সুবিধা, আর পরীক্ষা করার মত দক্ষ জনশক্তি আমাদের আছে কি না।   

ধান কাটায় সমস্যা হবার পর ক্রিকেটার মাশরাফি নিজের টাকায় ধান কাটার মেশিন কিনে দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দেশের অনেক ধনী লোক ও কোম্পানি পিসিআর মেশিন কিনে দিয়েছেন, হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছেন করোনার পরীক্ষা আর চিকিৎসার জন্য। ড. কামাল হোসেন সাহেব অনেক ধনী রাজনীতিবিদ, তিনি করোনায় এমন কিছু করে দেখিয়ে দিতে পারতেন। মানে সেই প্রাচীন কথার মত, ‘আপনি আচরি ধর্ম, অপরে শেখাও’, করলে ভালো হতো না!    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭