ইনসাইড বাংলাদেশ

যে কারণে খোলার পরেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/05/2020


Thumbnail

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির প্রতিদিন অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এরকম পরিস্থিতিতে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তবে এই মতের সঙ্গে একমত নন অনেক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন যে, সবকিছু খুলে দেওয়ার পরেও বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে এবং আস্তে আস্তে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। এ ধরণের মনোভাব যারা পোষণ করছেন, তাঁরা এর পেছনে অনেকগুলো যুক্তি উপস্থাপন করছেন। যুক্তিগুলো হচ্ছে-

১. মানুষ আগের চেয়ে সতর্ক হবে, সচেতন হবে

গত ২৬শে মার্চ থেকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য যে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছিল, সেই ছুটির ব্যাপারে মানুষের সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে, মানুষ কারণে-অকারণে এখান থেকে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বাজার-হাটে গেছে। এখন যখন সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে তখন মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। এখন মানুষকে কাজের জন্যে বাইরে বের হতেই হবে এবং এই প্রেক্ষিতে তাঁদের মধ্যে এক ধরণের সচেতনতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন কোন কোন বিশেষজ্ঞরা।

২. পরীক্ষার বাইরে থাকা আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে গেছে

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত ৮ই মার্চ থেকে। সেইসময় পরীক্ষা হচ্ছিল খুবই সীমিত আকারে এবং তখন বিদেশফেরতরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেই পরিমাণ পরীক্ষা হয়নি বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে যেটা হয়েছে যে বহু মানুষ পরীক্ষার বাইরে ছিল, মৃদু উপসর্গ নিয়ে সংক্রমিত অবস্থায় ছিল এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর তাঁরা সুস্থ হয়ে গেছে। এরকম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বিপুল এবং তাঁরা যখন সমাজে মেলামেশা করবেন এবং তাঁরা নতুন করে সংক্রমণ ছড়াবে না। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় আশাবাদের দিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এর মাধ্যমে নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কম হবে।

৩. করোনা নিয়ে আতঙ্ক কমে যাবে এবং এটাকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে

করোনা নিয়ে যে প্রথম সমস্যাটি ছিল, মানুষ করোনাকে প্রচণ্ড স্পর্শকাতর অসুখ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এজন্য তাঁরা সংক্রমিত ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে একঘরে করা, সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছিল। এখন যখন করোনার সাথে মানুষকে বসবাস করতে হচ্ছে, তখন মানুষের মধ্যে করোনার বাস্তবতা উপলব্ধি হচ্ছে এবং করোনা নিয়ে যে অতি মাত্রায় আতঙ্ক, করোনা হলেই যে সর্বনাশ- এই ধারণাগুলো পালটে যাচ্ছে। মানুষ এটাকে আর ৮-১০টা স্বাভাবিক রোগের মতো নিচ্ছে এবং এর ফলে মানুষ জ্বর-সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, জণ্ডিসের সাথে যেভাবে বসবাস করে, সেভাবে করোনার সঙ্গে বসবাস করবে। এর ফলে বাংলাদেশে আস্তে আস্তে করোনা একটি স্বাভাবিক অসুখ হিসেবে দেখা দিবে।

৪. নিজের বাঁচার পথ নিজেই খুঁজবে

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের মধ্যে সবকিছু খুলে দেওয়ার মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্যসেবার মূল দায়িত্ব জনগণের হাতে তুলে দিয়েছেন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এখন বলাই হচ্ছে যে, আপনার সুরক্ষা আপনারই হাতে। তাই এখন মানুষকে নিজেকে নিজে বাঁচানোর পথ খুঁজতে হবে এবং সেই পথ খুঁজতে মানুষের যা যা করা দরকার মানুষ তা করবে। ফলে মানুষ যখন সুরক্ষিত করতে উদ্যোগী হবে, মানুষ যখন দেখবে যে কারো কোন দায়িত্ব নেই। তখন সে নিজেকে সুরক্ষায় রাখতে সবকিছু করবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

৫. বিপুল সংখ্যক মানুষ পরীক্ষাই করবে না

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকেই পরীক্ষা নিয়ে নানারকম জটিলতা তৈরি হচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে লম্বা লাইন দিতে হচ্ছে এবং অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে, পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না, পরীক্ষা করতে গিয়ে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে- এই সমস্ত বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশে অনেক মানুষ নিজেকে পরীক্ষা থেকে দূরে রেখেছে। আর এই বাস্তবতার কারণে এখন যখন স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরতে হবে, তখন অনেক মানুষ নিজেকে পরীক্ষাই করাবে না, বরং এই ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁরা কাজ করার চেষ্টা করবে। এর ফলে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ পরীক্ষা করাবে না এবং আমরা জানতে পারবো না করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বা বিস্তৃতি। ফলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি একটি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭