কালার ইনসাইড

আমার বটগাছটা সরে গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/06/2020


Thumbnail

কামাল ভাই এর সাথে তোলা আমার শেষ ছবি। ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, আমার ছোট বোনের বিয়েতে এসেছিলেন। 

কামাল ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম দেখা ঠিক কবে মনে নাই, তবে ২ ফেব্রুয়ারী ২০০৪ এ আমি এন টি ভি জয়েন করি প্রোগ্রাম ডিপার্টমেন্টে উনার আন্ডারে। প্রথমে ঠিক করতে পারছিলাম না কি ডাকবো তাকে। উনি ডেকে বললেন "আপনার বাবা আর আমি বন্ধু মানুষ" , আমি তখন মনে মনে ঠিক করে নিলাম কামাল চাচা বলবো। কিন্তু চাচা বলা হলো না, কামাল ভাই বললেন "আপনি আমার কলিগ, আমরা একসাথে কাজ করব তাই এখানে চাচা মামা ডাকবেন না, ভাই বলবেন" ... তারপর আমি চিন্তায় পরে গেলাম উনি আমাকে আপনি করে বলছেন কেন... আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম বা অনুরোধ করেছিলাম আমাকে তুমি করে বলেন। উনি আমাকে সাসপেন্স এ রেখে বললেন তুমি তো বলবোই না, তবে আপনি করে কেন বলি সেটা একদিন বলবো... 

এরপর আমার যাত্রা শুরু উনার সাথে... আমাকে কোন কাজ দিতো না শুধু বলত প্ল্যান করেন। এদিকে দিপু মাহমুদ আর আলামগীর হোসেন (আমার সাথে জয়েন করা অপর ২ প্রডিউসার হরদম কাজ করে চলছেন। আমি ভাবলাম কি ব্যাপার আমাকে কাজ দেয় না কেন ... 

অবশেষে ২১ শে ফেব্রুয়ারির বিশেষ অনুষ্ঠান "শিল্প সাহিত্যে একুশ " নামক একটা প্রোগ্রাম বানাতে বললেন। আমার তো মাথায় হাত ... এতো ভারী প্রোগ্রাম করব কেমনে... তারপর বললেন বাজেট ৩ হাজার টাকা, উপস্থাপক ১ জন অতিথি ২ জন, এই ৩ জন কে ১০০০ টাকা করে দিবেন। আমি বল্লাম সেট ট্রলি খাওয়া এগুলা... উনি বললেন করেন আগে ... যাই হোক জোড়াতালি দিতে সেট বানায় করে ফেললাম। এরপর আমি হয়ে গেলাম গরিব প্রডিউসার (মানে সব সস্তা বাজেটের প্রোগ্রাম আমাকে দিয়ে করাতো... 

এতকিছুর পর লোকটাকে আমার ভালো লাগাড় কোন কারণ এ ছিল না... তবে খুব অবাক হয়ে দেখতাম বড় বড় ডিরেক্টর প্রডিউসার নায়ক নায়িকা গায়ক গায়িকা এবং অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা দেখাতেন ভালবাসতেন... 

তারপর ২ টা রিয়ালিটি শো করে আমি তো আকাশে উঠে গেলাম (২০০৫-২০০৬) তখন নিজেকে কি জানি ভাবতাম ... জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় (টাকা পয়সা আর পরিচিতি আর বিদেশ ভ্রমণ) কাটাচ্ছিলাম।
২০০৭ এ উনি একদিন ডেকে বললেন "আমি আপনাকে আপনি বলি কেন জানেন, কারণ আমি আপনার ভিতর একজন ভালো নির্মাতা আর অনুষ্ঠান প্রধান কে দেখতে পাই ...তাই আপনাকে আপনি করে বলি" কথা গুলা আমার মাথার উপর দিয়ে গেল ।। কিন্তু ওইদিন এর পর থেকে উনি প্রতিদিন আমার রুমে এসে গল্প করতেন ।। একদিন বললেন "লাগাম টেনে ধরেন" ওইটাও তখন বুঝি নাই ... কিন্তু উনার গল্প করাটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ।। গল্পের ছলে উনি আমাকে আমার পারসোনালিটি বদলে দিলেন, আমি বুঝতে পারলাম না ...

এরপর এন টি ভি তে আগুণ মালিকদের জেল সুন্দরবন হোটেল এ অফিস মালিকানা জটিলতা এবং সর্বশেষ এন টি ভি থেকে আমাকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্র ... সবার দিকে তাকালেই তখন ভয় লাগত...মনে হতো এই লোকটি বোধহয় ষড়যন্ত্রকারী ...। কামাল ভাই আমাকে তখন ছায়া দিয়েছিলেন বটগাছ এর মতো ... ঠাণ্ডা থাকতে শিখিয়েছিলেন।
 
২০১১ এন টি ভি কে বিদায়ের পালা... কামাল ভাই রুমে এসে আমার বাবার মতো হয়ে গেলেন ... আমরা ২ জন এ আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলাম ।। উনি একটা রিকুয়েস্ট করলেন আমাকে ... বললেন আপনার ব্যবহার করা কম্পিউটার টা কি আমি নিতে পারি ... কামাল ভাই এইটা কি চাইল আমার কাছে ... উনি চাইলে তো তখনকার লেটেস্ট কম্পিউটারটা পেতেই পারতেন , আবার কম্পিউটার যেটা আমি ব্যাবহার করতাম ওইটা তো অফিস এর ... উনি আমার ব্যাবহার করাটাই নিবেন ...অফিস জীবন এর শেষ দিন পর্যন্ত উনার টেবিলে আমার সেই কম্পিউটারটি ছিল ...।

২০০৪ থেকে ২০২০ ।। আমি অন্য চ্যানেল এ কাজ করি।। ঠিক উনার designaton টাই আমার designaton... ২০০৭ এ বলেছিলেন ... ২০১১ থেকে ২০২০ এর মার্চ পর্যন্ত অনেক জালাইসি মানুষটাকে ... কারণে অকারণে ফোন দিসি ।। উনি কথা বলতেন ঠিক যেন আমার বন্ধুর মতো, উনি আমাকে সলিউসন দিতেন ঠিক আমার বাবার মতো ...গত ৩/৪ বছর যাবত উনি উনার মতো কাজ করতে পারছিলেন না সেটা বলতেন ... আর কোথাও দেখা হোলে আমাকে ধরে বলতেন "BIG MAN"

আমার প্রতিটা কাজ উনি মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন ... ভুল ত্রুটি সাবাস সবই দিয়েছেন। আপনি চলে গেলেন ... আমার বটগাছটা সরে গেল ... কিন্তু জানি যেখানে গেছেন ওখান থেকেই দেখবেন আমাকে ... স্বপ্নে বলে যাবেন "লাগাম টানেন" 

আমাকে তানভীর খান বানানোর কারিগর মোস্তাফা কামাল সৈয়দ।


লেখক: চ্যানেল নাইন অনুষ্ঠান প্রধান



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭