ইনসাইড আর্টিকেল

প্রাপ্য সম্মানটুকুও যারা পেলেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/06/2020


Thumbnail

সবাই চায়, মৃত্যুর পর একটু সম্মান পেতে। সবাই চায়, তার শেষযাত্রার সময় যেন মানুষ স্মৃতিকাতর হয়। সবাই যেন সমবেদনা জানাতে পারে, শ্রদ্ধা জানাতে পারে। কিন্তু আরও অনেক কিছু মতো করোনা মানুষের এই শেষ চাওয়াটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। করোনার হানায় মানুষের শেষ আশাটুকুও অধরা থেকে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে আমরা বেশ কয়েকজন গুণীজনকে হারিয়েছি, যাদের শেষকৃত্যটা হওয়ার কথা ছিল অনেক আয়োজন করে। কিন্তুর করোনা তা পন্ড করে দিয়েছে।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন বাঙালি জাতির অভিভাবক, একজন প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ শিক্ষক, জাতির পথ নির্দেশক এবং আমাদের শেষ অভিভাবক। মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য হওয়ার কথা ছিল অনেক আয়োজন করে। গত ১৪ মে বিকেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। স্বাভাবিক সময়ে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হতো। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি তার মরদেহ দেখতে যেতেন। সেখানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেন। শহীদ মিনারে লাখো মানুষ তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। তার যেখানে জানাজা হতো, সেখানে মানুষের ঢল নামতো। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাতে গোনা কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর উপস্থিতিতে তাকে সমাধিস্ত করা হয়।

তার মৃত্যুর খবরটি আসার পর শুরুতে তাকে সম্মান জানাতে কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পরেই যখন জানা যায় যে, তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন, তখন সবকিছুই বাতিল করে দেওয়া হয়। আজিমপুর কবরস্থানে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র ছোট খাটো গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে তাকে শেষ বিদায় দেওয়া হয়।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী

গত ২৮ এপ্রিল ঘুমের মধ্যে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি দেশের প্রথম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ৫ সদস্যের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর এখন পদ্মার ওপরে দেশের সবচেয়ে বড় যে সেতু তৈরি হচ্ছে, সেই প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেলেও নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান নানা উন্নয়ন প্রকল্পেও তিনি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। দেশের অগ্রগণ্য এই প্রকৌশলীর মৃত্যুতে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের ভিড় হওয়ার কথা ছিল। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতো করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না তিনি। কিন্তু তবুও তার শেষ বিদায়টি হয়েছে অনাড়ম্পরপূর্ণ। কারণ বর্তমান পরিস্থিতি সব ধরনের গণজমায়েত বন্ধ। মানুষ চাইলেও এখন শ্রদ্ধেয়জনদের শেষ শ্রদ্ধাটুকু জানাতে পারছে না।

মোস্তফা কামাল সৈয়দ

গতকাল ৩১ মে মারা যান বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। স্বাভাবিক সময়ে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হলে তাকে শেষ বিদায় দিতে নিশ্চিতভাবেই মানুষের ঢল নামতো। সাংষ্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন। কিন্তু করোনা পজিটিভ হওয়ায় তার শেষ বিদায়টাও হয়েছে অনাড়ম্বরভাবে। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ তার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শোক ও সমবেদনা জানালেও তাকে সমাধিস্ত করার সময় আসেননি কেউ।

এম আব্দুল মোনেম

মোস্তফা কামাল সৈয়দের মতোই গতকাল ৩১ মে মারা গেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গ্রুপ অব কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম আব্দুল মোনেম। পদ্মাসেতু সংযোগ সড়কসহ দেশের মহাসড়ক প্রায় সবই তার প্রতিষ্ঠান এএমএল-এর তৈরি। ইগলু, কোক-পেপসি তাদের সহ-প্রতিষ্ঠান। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৭ মে আব্দুল মোনমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার কিডনি জটিলতাও ছিলো। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন, এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু তবুও নীরবে নিভৃতেই তার জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন হলো। কারণ করোনার জন্য এখন গণজমায়েত বন্ধ। তাছাড়া কারও মৃত্যু হলে করোনা আতঙ্কের কারণে এখন কেউ সেখানে যেতে চাইছে না। ফলে দেশের প্রথম সারির একজন শিল্পপতি হয়েও প্রাপ্য সম্মানটুকু ছাড়াই শেষ বিদায় নিতে হলো এম আব্দুল মোনেমকে। 

নিলুফার মঞ্জুর

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ মে মারা যান রাজধানীর সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা নিলুফার মঞ্জুর। ১৯৭৪ সালে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তিনি অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী। অন্য যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হলে মানুষ ভিড় জমাতো। ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসত তার ছাত্র ছাত্রীরা। কিন্তু করোনা পজিটিভ হওয়ায় এর কোনোটাই হয়নি।

ইমামুল কবীর শান্ত

গত ৩০ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমামুল কবীর শান্ত। তিনি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এবং শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনেরও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। তার শেষ বিদায়টা হওয়ার কথা ছিল আড়ম্বরপূর্ণ। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও বিদায়বেলায় তার বিশেষ সম্মান প্রাপ্য ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তিনি এসব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

মোরশেদুল আলম

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) মোরশেদুল আলম (৬৫) মারা যান গত ২২ মে। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকেরও পরিচালক ছিলেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন মোরশেদুল আলম। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। করোনা পজিটিভ হওয়ায় অনেকটা চুপিসারে তড়িঘড়ি করেই তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭