ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

আনন্দবাজারের নতুন সম্পাদক; কে এই ঈশানী দত্ত?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/06/2020


Thumbnail

বাংলা সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রথম নারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন ঈশানী দত্ত রায়। আচমকাই রবিবার দুপুরে পত্রিকার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অনির্বান চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে ঈশানী দত্তরায়কে সম্পাদক ঘোষণা করেন।

১৯২২ সালের ১৩ মার্চ পত্রিকা চালুর পর থেকে এই প্রথম কোনো নারীকে সম্পাদকের দায়িত্বে দিয়েছে আনন্দবাজার গোষ্ঠী। 

সোমবার প্রকাশিত পত্রিকার দ্বিতীয় পাতায় প্রিন্টার্স লাইনে একটি অভিনব লাইন বেরিয়েছে, পিআরবি অ্যাক্ট অনুযায়ী সংবাদ নির্বাচনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ঈশানী দত্ত রায়।

ঈশানী কলকাতার ক্রাইস্ট চার্চ স্কুল, বেথুন কলেজ ও প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা করেছেন। প্রথমে ১৯৯৬ সালে আনন্দবাজারে যোগ দেন। মাঝে কিছুদিন পড়াশোনার জন্য চাকরিতে ইস্তফা দেন। ফের ২০০৪ সালে যোগ দেন। সেই থেকে টানা নানা দায়িত্ব সামলেছেন। আর এবার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। সাহসী লেখার জন্য তিনি বিখ্যাত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটুক্তি করে তার একটি সাহসী লেখা এখানে তুলে ধরা হলো। 

কখনও হাসি-কান্না, কখনও ডিলান; টেলি সোপের দরকার কী?

ঈশানী দত্ত রায়

যাঁরা এসব বলছেন, তাঁরা কি কোনওদিন কাশ্মীরে পা রেখেছেন? পাকিস্তান জঙ্গিদের টাকা দেয়, এ কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু পাথর ছুড়ছে কারা? কাদের চোখ নষ্ট হল? পাঁচ বছরের শিশু থেকে ২৬ বছর বয়সি তরুণ- সকলেই জঙ্গি? জানতে ইচ্ছে করে, পাড়ার মোড়ে সাতসকালে যদি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়, রক্তাক্ত সন্তানকে কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অধিকার পর্যন্ত যদি না থাকে, স্বঘোষিত দেশপ্রেমীরা কী করবেন?

রাত ৮টার কিছু আগে হঠাৎ সাসপেন্স ! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে কিছু বলবেন !এই রে ! ঘোষণা করে যুদ্ধু হবে না কি?

তাইরে-নাইরে-নারে করে ৮টা থেকে সাড়ে ৮টায় যা শোনা গেল, আধা শুনেই লোকে পাঁইপাঁই করে এটিএমে দৌড়তে লাগল। 

মোদ্দা কথা- চিকিৎসা, বিয়ের জন্য যা তুলে রেখেছিলেন, বেতন, পেনশন বাবদ এটিএম থেকে যা বেরিয়েছিল, সব কাগজের টুকরো !

ব্যাঙ্কে নিজেরই টাকা, অথচ তা তুলতে পারবেন না। সকালে এক নিয়ম, দুপুরে আরেক, রাতে আবার বদল। সরকার বাহাদুরের সচিব বলেন, অনেক টাকা তুলতে পারবেন। ব্যাঙ্কে গেলে বলা হয়, ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে আসুন, আমরা যেমন দিতে পারব, সেটা লিখবেন’। সগৌরব ঘোষণা করে এত মিথ্যাচার কবে দেখেছে দেশ?

তার উপর আজ হাসি, কাল কান্না, পরশু বৃদ্ধা মা’কে ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে ছবি তোলানো, তার পরদিন বব ডিলানের পঙ্‌ক্তি আওড়ানো, তারপর আবার কবিতার বই প্রকাশ !
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার এক সদস্য নিশ্চয় ভাবছেন, বৃথাই এতদিন সিরিয়াল করলাম। গুরুর কাছে সবই তো তুশ্চু !

তবে প্রধানমন্ত্রীর দল এবং সঙ্ঘীরা খুব সাফল্যের সঙ্গে (শহুরে, ডিগ্রিশিক্ষিত এবং নেটিজেনদের মধ্যেও) দু’টো কথা ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। এক, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ায় কাশ্মীরে পাথর ছোড়া বন্ধ হয়েছে। দুই, সেনাবাহিনী এত কষ্ট করে সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকেন আর আমরা দু’দিন লাইন দিতে পারব না?

যাঁরা এসব বলছেন, তাঁরা কি কোনওদিন কাশ্মীরে পা রেখেছেন? পাকিস্তান জঙ্গিদের টাকা দেয়, এ কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু পাথর ছুড়ছে কারা? কাদের চোখ নষ্ট হল? পাঁচ বছরের শিশু থেকে ২৬ বছর বয়সি তরুণ- সকলেই জঙ্গি? জানতে ইচ্ছে করে, পাড়ার মোড়ে সাতসকালে যদি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়, রক্তাক্ত সন্তানকে কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অধিকার পর্যন্ত যদি না থাকে, স্বঘোষিত দেশপ্রেমীরা কী করবেন?

আমিত্বে অন্ধ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর জীবননাশের আশঙ্কা ফলাও করে বললেন। কালোবাজারিরা তাঁকে বাঁচতে দেবে না বলে কেঁদেই ফেললেন। দেশের জন্য সংসারধর্ম পালন করেননি বলে আত্মত্যাগের কাহিনি শোনালেন। কাশ্মীরের দৃষ্টিহীন হয়ে যাওয়া বাচ্চাদের কথা ভেবে চোখে কালো পট্টি বাঁধলেও তো পারতেন !
নাটক যখন হচ্ছেই, তখন ভাল করেই হোক না ! ব্যাপারটা মহাভারতীয় ব্যাপ্তি পেত। টিআরপি আরও বেড়ে যেত।

আর যাঁরা সেনাবাহিনীর কথা শুনিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে দেশসেবার কথা বলে চলেছেন, পাড়ার লাইনে যে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তাঁদের একবার গিয়ে বলবেন কথাটা? সেনাদের প্রতি এতই যদি দরদ, তাহলে বলুন তো, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের কেন যন্তরমন্তরে গিয়ে বসতে হয়? আত্মহত্যা করলে শুনতে হয়, আরে, ও তো কংগ্রেসের?

আসলে ‘আত্ম-পরিবারের মধ্যে যে ব্যক্তি শূলবেদনার মতো বিরাজমান, যে ব্যক্তি মাকে ভাত দেয় না, ভাইয়ের সঙ্গে লাঠালাঠি করে, পাড়া-প্রতিবেশীদের নাম পর্যন্তও জানে না- আজকাল সে ব্যক্তিও ভারতবর্ষকে মা বলে, বিশ কোটি লোককে ভাই বলে- শ্রোতারা আনন্দে হাততালি দিতে থাকে।’
রবীন্দ্রনাথ তো কবেই লিখে গিয়েছেন !



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭