ইনসাইড আর্টিকেল

হজ কি হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/06/2020


Thumbnail

সৌদি সরকার জানিয়েছে ১৫ জুন তারা হজের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু সৌদি গেজেটসহ দেশটির প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলো ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, এবার ব্যাপক আকারে হজের আয়জন হবে না। সীমিত আকারে হজ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে সৌদি সরকার। করোনা যে মহামারী আকার ধারণ করেছে এবং সৌদি আরবেও যে এর সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, এর প্রেক্ষিতে দেশটি এমন সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু হজ হলো ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এই বাস্তবতায় এবার যদি মুসলিমরা হজ পালন করতে না পারেন সেক্ষেত্রে কী হবে?  

পবিত্র হজ ইসলামের অন্যতম মৌলিক ইবাদাত। জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রত্যেক সচ্ছল মুসলিম নর-নারীর ওপর হজ পালন করা ফরজ। আত্মিক উন্নতি, সামাজিক সম্প্রীতি ও বিশ্বভাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় হজের গুরুত্ব সর্বাধিক। মুসলিম বিশ্বের ঐক্য-সংহতি গড়তেও হজের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব মুসলিমের করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেনাও লাভ করা যায় হজের বিশ্ব মহাসম্মিলন থেকে। হজ শুধু ইবাদতই নয়, বরং আত্মিক পরিশুদ্ধতার এক অনস্বীকার্য পদ্ধতি। আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হজের বিনিময় নিশ্চিত জান্নাত। এ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়, কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।

হজ মুসলমানদের জন্য ফরজ বা আবশ্যিক ইবাদত। হজের বিষয়ে সূরা বাকারায়বলা হয়, মানুষের মধ্যে যারা পথের ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম তাদের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে কাবাঘরে হজ পালন করা ফরজ। মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে নবী করীম (সা.) বলেন, হে মানব সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ পালন করো। শরিয়ত মতে, সামর্থ্যবান ও সক্ষম মুসলিম হজ পালন না করলে, তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। হজ না করলে শাস্তির বিষয়ে মিশকাত শরিফে বলা হয়, আল্লাহ’তালা যাকে হজ পালনের সামর্থ্য দিয়েছেন অথচ সে হজ না করে মৃত্যুবরণ করে, তা হলে সে দোজখের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিতে পতিত হবে। হজ শুধু উম্মাতে মুহাম্মদির ওপর ফরজ করা হয়নি। পূর্ববর্তী অনেক নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীদের ওপরও হজ আদায়ের বিধান ছিল। এ জন্য আল্লাহ’তালা প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহিস সালামকে কাবাঘর নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে কাবাঘর সংস্কার করেছেন এবং তারাও হজ পালন করেন।

হজ শুধুই ইবাদত নয়। বিশ্বভাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক। হজের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ পবিত্র মক্কা নগরীতে একত্র হয়। ভাষা-বর্ণের ভিন্নতা, সাংস্কৃতিক-জাতীয় পরিচয়ের পার্থক্য ও ভৌগোলিক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব মুসলিমের ভাতৃত্ববোধ জাগ্রত ও সুসংহত হয় পবিত্র হজ উদযাপনে। বিশ্ব মুসলিমের পারস্পরিক দুঃখ-অভাব, অভিযোগ-সমস্যা সম্পর্কে অবগত হওয়া ও তার সমাধানের সুযোগ হয় পবিত্র হজের বিশ্ব সম্মিলনে।

বুখারি ও মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ইমান আনা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এর পর কোন আমলটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, এর পর কোন আমলটি? জবাবে বলেন, ‘হজে মাবরুর’ তথা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হজ। সঠিকভাবে ও ইখলাসের সঙ্গে হজ আদায়কারী নিষ্পাপ শিশুর মতো হয়ে যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করল এবং হজ সম্পাদনকালে কোনো প্রকার অশ্লীল কথা ও কাজ কিংবা গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়নি, সে সদ্যোজাত নিষ্পাপ শিশুর ন্যায় প্রত্যাবর্তন করল।

মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় জমায়েত পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সামনের জুলাই মাসের শেষ দিকে। তবে করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবের হজ নিয়ে এখনই কাউকে চুক্তি না করার আহ্বান জানানো হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের মতে এই বছরের হজ বাতিল হতে পারে। করোনা পরিস্থিতির কারণে ওমরাহ স্থগিত করা হয়েছে। এবার হজও যদি বাতিল হয় তাহলে সেটা মুসলিম উম্মাহর জন্য নিঃসন্দেহেই একটা হতাশার কারণ হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭