ইনসাইড ইকোনমি

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ভিন্ন ৫ পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/06/2020


Thumbnail

করোনার সঙ্গে সঙ্গে এসেছে অর্থনৈতিক সংকট। এই অর্থনৈতিক সংকটের মুখেই জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশন হচ্ছে আগামী ১১ জুন। এই বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, গরীব মানুষদের জন্য অর্থায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ নানারকম পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন যে, সরকারের যে সীমাবদ্ধতা, যে সম্পদ রয়েছে তা দিয়েই বাংলাদেশ ভালোভাবে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে পারে, যদি বাংলাদেশে পাঁচটি কাজ করে। এই কাজগুলো যদি কঠোরভাবে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে করোনা পরবর্তী বিশ্বে একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। যে পাঁচটি কাজ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ এখন করতে পারে, সেগুলো হলো-

১. দুর্নীতি বন্ধ করা

করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সবথেকে বেশি জোর দিতে হবে দুর্নীতির দিকে। দুর্নীতি যদি বন্ধ করা যায় তাহলে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকটের একটি বড় সমাধান হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশে কি পরিমাণ দুর্নীতি হয় বা জনগণের কি পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হয় সে সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য নেই এবং গবেষণাও নেই। তবে বিভিন্ন খাতওয়ারী তদন্ত করে টিআইবি দেখিয়েছে যে সমস্ত কাজ হয় তাঁর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থই লোপাট হয়। কাজেই এই সংকটকালীন সময়ে দুর্নীতি বন্ধের দিকে নজর দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এবং দুর্নীতি বন্ধকেই তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। কাজেই করোনা সংকটকালে এখন তাঁর এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। আমরা যদি দুর্নীতি বন্ধ করতে পারি তাহলেই আমাদের জিডিপির ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন।

২. কৃচ্ছতা সাধন

দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি অযাচিত ব্যয়গুলো কমাতে হবে। কথায় কথায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ এবং নানারকম রাষ্ট্রীয় অপচয় বন্ধ করতে হবে। সর্বস্তরে একটি কৃচ্ছতা সাধনের পরিবেশ আনতে হবে। এই রকম একটি মনোভাব প্রকাশ করতে হবে যে, রাষ্ট্রটি আমাদের এবং এই রাষ্ট্রকে বাঁচাতে আমাদের সংযমী হতে হবে। অফিস শেষে এসি বা লাইট জ্বালিয়ে রাখা, যথোচ্ছ গাড়ি ব্যবহার, সরকারি সম্পদের অপচয় যদি রোধ করা যায় তাহলে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় একটি বড় অগ্রগতি অর্জন করবো বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

৩. ব্যাংক ডাকাতদের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে রীতিমত ডাকাতি হচ্ছে। এক শ্রেনীর তথাকথিত ব্যবসায়ী ব্যাংকের টাকা লোপাট করে গা ঢাকা দিচ্ছে এবং তাঁদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছেনা। বাংলাদেশের বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারির মতো অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখান থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে পাচার হয়ে গেছে। আর এই সমস্ত ব্যাংক ডাকাতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করতে হবে, দীর্ঘদিন যাবত তাদের ঝুলিয়ে রাখা বিচারগুলোর নিষ্পত্তি করে জনগনের টাকা দ্রুত পুনোরুদ্ধার করতে হবে। এটাতে অর্থনীতিতে একটি নতুন গতি সঞ্চার হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

৪. টাকা পাচার রুখতে হবে

বিদেশে টাকা পাচার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় বিষফোঁড়া। প্রতি বছর প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এখন এই অর্থনৈতিক সংকটকালে টাকা পাচার রোধ করা হলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদি এটা আমরা করতে পারি তাহলে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠাটা অনেক সহজ হবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

৫. অপ্রচলিত খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো গার্মেন্টস নির্ভর। শুধু গার্মেন্টস নির্ভরতা কমিয়ে অপ্রচলিত খাত যেমন, পাট শিল্প, চামড়া শিল্প, কুটির শিল্প ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং এই সমস্ত খাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। করোনা পরবর্তী বিশ্বে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা যেমন বাড়বে তেমনি অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের জন্য মানুষ নানারকম স্বল্পমূল্যের পণ্যের দিকে ছুটবে। আর এই প্রেক্ষাপটে আমাদের এই অপ্রচলিত খাতগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। 

আর আমরা এই কাজগুলো করলে বাংলাদেশ সামনের দিনে অর্থনৈতিক সংকট সহজেই মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭