ইনসাইড বাংলাদেশ

বন্যার পানি কমছে, সমস্যা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/07/2017


Thumbnail

দেশের বিভিন্ন স্থানে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে দুর্ভোগ কমছে না বরং বাড়ছে। মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক। ওই ঘরবাড়ি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাসের উপায় নেই। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে থাকছেন আনেকে। তাঁরা ফিরতে পারছেন না নিজেদের বাড়িঘরে। আবার অনেকের সেই আশ্রয়ও জোটেনি। তাই থাকছেন খোলা আকাশের নিচে।

ঘরবাড়ির সঙ্গে সঙ্গে বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাও। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসছে ক্ষত-বিক্ষত সড়ক। সঙ্গে ভেঙে গেছে সেতু, কালভার্ট। এলাকাগুলোতে চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পৌঁছাতে পারছেন না মেডিকেল টিম। ঠিক মত পৌছতে পারছে না ত্রাণ। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায় থেকে ত্রাণ হিসেবে খাবার পৌছে দেওয়া হলেও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না বন্যাদুর্গতরা। বন্যায় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও ভাইরাসজনিত জ্বরের জীবাণু বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে সহজেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এই রোগ বালাই মোকাবেলা তো দূর, ঠিক মত ত্রাণও পৌঁছে দিতে পারছে না প্রসাশন।

এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রত হয়েছে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল। শুধু এ জেলাতেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই লাখ মানুষ। আধাপাকা ঘরে বসবাসরত ৬৫ শতাংশ মানুষের কাঁচাঘরে বসবাসরত দুই হাজার ৫০৫ পরিবারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে সরকারিভাবে ক্ষতির নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। কিন্তু এখনও সাহায্যে পৌঁছায়নি কেউ।

এদিকে, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি শনিবার গাইবান্ধার ৪টি উপজেলার সার্বিক বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দী মানুষরা শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যার কবলে পড়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও অনেক এলাকায় নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গো-ঘাট এলাকার ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।

বন্যায় ঘরবাড়ি হারা লাখ লাখ মানুষের এখন ত্রানের পাশাপাশি প্রয়োজন মাথায় উপর ছায়া। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ৯০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাহলে এসব মানুষ এখন যাবে কোথায়?

এ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। তবে শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, মৃগী ও দশানি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি কমতে শুরু করা নদীগুলোতে ভাঙন অব্যাহত আছে। ফলে প্রতিদিনই ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ।কবলিত এলাকায় সরকারি ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।

পানি কমতে থাকায় রাস্তা ও বাঁধের ওপর আশ্রিত মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ঘরবাড়ি বাসযোগ্য না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। বন্যাকবলিত এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় দিনমজুর বসে আছে বেকার। জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। পানিবন্দিরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তাদের বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেলেও বাড়ির আশপাশের পানি এখনো নামা শেষ হয়নি। এদিকে পানি নেমে গেলেও কাদা ও ভাঙা রাস্তায় মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ বেড়েছে।

দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের বন্যায় গাইবান্ধার ৪ উপজেলার আংশিক ১২ হাজার ৭ শত ৫৭টি ঘরবাড়ি, মৌলোভী বাজারের ৫ উপজেলায় সম্পূর্ণ ৫ শত ২৫টি এবং আংশিক ৬ হাজার ৯শত ৮টি ঘরবাড়ি, সিরাজগঞ্জের ৬ উপজেলায় সম্পূর্ণ ২ হাজার ১শত ৩৯টি এবং আংশিক ২৮ হাজার ১ শত ৭৭টি ঘরবাড়ি, কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৪ হাজার ১শত ৩৩টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গণমাধ্যমকে বলেন, বন্যার পানি নামার পর কৃষক ও খামারিদের ঘুরে দাঁড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে সরকার। এছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিগ্রস্তদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, `বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ইজিপিপি (অতি দরিদ্র্যদের জন্য কর্মসংস্থান) প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিগ্রস্তদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।` কিন্তু থাকার জন্য যদি ঘর এ না থাকে, তাহলে কর্মসংস্থান দিয়ে কি হবে?

বন্যা শুরুর পর থেকে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য এ যাবৎ ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল, ৩ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলায় পানি বিশুদ্ধকরণ মোবাইল গাড়ি পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় এ ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল হওয়ায় পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ এখনও অনিশচয়তায় দিন পাড় করছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রক্ষ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারার পানির উচ্চতা হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া, আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলা ইনসাইডার/আরএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭