ইনসাইড বাংলাদেশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্য ফাঁস; নেপথ্যে সেই ড্যাব নেতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/06/2020


Thumbnail

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেনাকাটায় একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়ম সামনে আসার পর এবার ফাঁস হলো তাদের কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের কেচ্ছা। আর ‘কেঁচো খুড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসার মতো এবারও এই দুর্নীতির নেপথ্য নায়ক হিসেবে সামনে আসছে সাবেক ছাত্রদল ক্যাডার ও ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীরের নাম। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক। এর আগে, বিভিন্ন প্রকল্পে তার নেতৃত্বে কয়েক শত কোটি টাকার অনিয়মের কথা আমরা জেনেছি। আর এবার জানা গেল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ পেতে যাওয়া ১৮৩ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে অন্তত ১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার দুর্নীতি। এর পেছনেও রয়েছেন ডা. ইকবাল কবীর।

সম্প্রতি সরকার এক হাজার ২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের ঘোষণা দেয়। এরই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ২ জুন ১৮৩ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের তালিকা চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই ১৮৩ জনের তালিকায় আইইডিসিআর থেকে একজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই তালিকায় যারা আছেন, তাদেরকে জনপ্রতি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে নেওয়া হয়েছে। সংশিষ্টরা জানিয়েছেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের তালিকা তৈরির দায়িত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীর। মূলত তার নেতৃত্বেই এই তালিকা হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার একটি অডিও ফোন কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সেখানে টেকনোলজিস্টদের একটি সংগঠনের এক নেতা বলেন, টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না। নিজেদের মেসেঞ্জার গ্রুপেও তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান। তাকে বলতে শোনা যায়, প্রত্যেকটি নিয়োগের জন্য ন্যূনতম ১০ লাখ টাকা করে লাগবে।

সংশ্নিষ্টরা বলেছেন, যারা নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন এনটিপি কর্মসূচি থেকে আসা ৬০ জন। দাতা সংস্থার অর্থায়নে চাকরি নিয়ে মে মাসের শেষ দিকে এবং জুনের ১ তারিখ ও ৭ তারিখ যোগদান করা সত্ত্বেও ২ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পাঠানো নিয়োগের তালিকায় এনটিপি কর্মসূচির ওই ৬০ টেকনোলজিস্টের নাম এসেছে। এছাড়া নতুন নিয়োগ পেতে যাওয়াদের তালিকায়  ব্র্যাক থেকে আসা ৩৪ জন এবং পরিকল্পনা শাখা থেকে আসা ২৩ জন রয়েছেন। এদের প্রত্যেকেই আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বিভ্রান্তিকর, ভ্রান্ত এবং আত্মঘাতী একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাদের দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি এবং নানা সমন্বয়হীনতার কারণেই বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। করোনা মোকাবেলার সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক ক্যাডার ও ড্যাব নেতা ডা. ইকবাল কবীরের হাতে। আর তিনিই করোনা মোকাবেলায় নিজের ইচ্ছামতো কেনাকাটা করছেন। তার এই কেনাকাটাগুলো ‘বালিশ কেলেঙ্কারি’কেও হার মানিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী তো বটেই ডিজিটাল বাংলাদেশে সফটওয়্যার কিনতে গিয়েও এই ড্যাব নেতা যে মূল্য প্রাক্কলন করেছেন, তাতে কয়েকশ কোটি টাকার দুর্নীতি পরিকল্পনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ৩০ টা অডিও-ভিডিও তৈরি করতেই ডা. ইকবাল কবির খরচ ধরেছেন সাড়ে ১১ কোটি টাকা। ৪টি ওয়েবসাইট উন্নয়নের খরচের জন্য ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ৫টি ডাটাবেজ তৈরির খরচ ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ৫টি কম্পিউটার সফটওয়্যারের জন্য ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। একজন সুশিক্ষিত চিকিৎসক হয়েও তার ‘চক্ষু লজ্জাহীন’ দুর্নীতির ফিরিস্তি সাধারণ চোর বাটপারদেরও লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭