ইনসাইড বাংলাদেশ

জলাবদ্ধতায় ডুবে যাওয়া নগরী চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/07/2017


Thumbnail

জলাবদ্ধতা চেপে ধরেছে চট্টগ্রাম নগরীকে। একবার বৃষ্টি হলেই অন্তত কয়েক দিনের জন্য পানিবন্দী হয়ে পড়েন নগরবাসী। জলাবদ্ধতা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে এখন নৌকা নিয়ে শহরে চলাচল করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের যে কোন বিভাগীয় শহরে চেয়ে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা ভয়াবহ। এমন জলাবদ্ধতার পেছনের কারণ কি? আর গত দুই দশকে এই সমস্যা না কমে উল্টো বাড়ছে কেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে একটু জটিল। এ অঞ্চলের খালগুলো অনেকটা সক্রিয়। জোয়ারের কারণে স্বাভাবিকভাবেই এসব খালে পানি আসে। তার ওপর ভারী বৃষ্টিপাত হলে বাড়ে পানির চাপ। ফলে বর্ষাকালে সৃষ্টি হয় পানির দ্বিমুখী চাপ। প্লাবিত হয় পুরো নগরী। আবার বার বার জোয়ার ভাটার কারণে পলি পড়ে খাল হয়ে যায় ভরাট। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলেও খালগুলোকে ভরাট করে ফেলেছে নগরবাসী। সেই সঙ্গে খাল দখলের ধারা এখানেও অব্যাহত রয়েছে। প্রভাবশালীরা খাল দখল করে গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা।

চট্টগ্রাম শহরের মধ্যেই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি খাল। অতিবৃষ্টিতে কর্ণফুলী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি এসব খাল দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করে থাকে। যতক্ষণ জোয়ার ততক্ষণ তো জলাবদ্ধতা আছেই,ভাটার সময় নিচু অঞ্চলের পানি আর বের হতে পারে না। খাল-নালানর্দমা দিয়ে প্রবাহিত এসব পানি আর কর্ণফুলীতে নামতে পারে না। ফলে খুব তাড়াতাড়ি এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভারি বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতি হয় আরও ভয়াবহ। এছাড়া চট্টগ্রামে পানি নিস্কাশনের আর কোনো কৃত্রিম উপায় নেই ।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে তাহলে গত দুই দশকে জলাবদ্ধতা নিরসনে কি কিছুই করা হয়নি? ১৯৯৫ সালে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য তৈরি নেওয়া হয় ড্রেনেজ মাস্টারপ্লান। ওই প্লানে তিনটি নতুন খাল খনন, নদী ও সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত খালের মুখে স্যুইচ গেট স্থাপন, বিলুপ্ত খাল পুনরুদ্ধার, বিদ্যমান খালগুলোকে গভীর ও প্রশস্থকরণের সিদ্ধাস্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২২ বছর পার হয়ে গেলেও তার কোনোটিরই পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।

তারপর থেমে নেই প্রশাসন। একেক সময় একেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়। নানা সময়ে মেয়ররা ঢাকডোল পিটিয়ে খাল ও নালা খননের প্রতিশ্রুতি দিলেও উচ্ছেদ অভিযান আর হয় না।

এভাবেই চলছে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার সংকট নিরসনের নামে প্রহসন। জলাবদ্ধতা দূর করতে গত দুই দশকে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। ফলাফল শূণ্য। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজের সমন্বয়েরও অভিযোগ রযেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আর শহরের মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা।

এতকিছুর পরও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেজন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। সমন্বয় করতে হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে। তা না হলে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও সুফল পাওয়া যাবে না । তাই সবগুলো সম্ভাবনা আর ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে।

বাংলা ইনসাইডার/ এএন




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭