কালার ইনসাইড

সময়ের আলোচিত ৫ হিন্দী ওয়েব সিরিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/06/2020


Thumbnail

এই ওয়েবসিরিজগুলো থেকে অন্যতম প্রাপ্তি হল বহু অখ্যাত অসামান্য অভিনেতাদের কাজ দেখতে পাওয়া। ওয়েবসিরিজ না হলে এরা হয়তো আড়াইঘন্টার বিগস্ক্রিনে কখনও সুযোগই পেতেন না। ওই খান-কাপুরদের ভিড়ের অনেক অনেক পিছনেই দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একদিন নিঃশব্দে সরে আসতেন।

পাতাললোক

পাতাললোক ওয়ান অব দ্যা বেস্ট ইন্ডিয়ান সিরিজ। একটা সিরিজে কি নেই? সমাজের উচু-নিচু বর্ণ, দলিত, মুসলমান, বাস্তুহারা মিডিয়ার কারচুপি সব, সবার গল্প উঠে এসেছে এখানে।

পৃথিবীতেও মানুষ তিন ধাপে থাকে; স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল। স্বর্গের মানুষেরা পাতালের মানুষদের ব্যবহার করে, মর্ত্যের মানুষের কাঁধে চেপে বসে থাকে। নিচু শ্রেনীর মানুষের কাঁদে বন্ধুক রেখে শিকার করে।

দেশের সিস্টেম কে বাহির থেকে দেখলে করাপ্টেড আর নোংরা মনে হবে কিন্তু বাস্তবে সিস্টেম হচ্ছে well-oiled machinery প্রত্যেক পার্ট জানে কার কি কাজ। যে কাজ ভুলে যায় তাকে মেশিনের মতো সেই পার্টকে খুলে বদলে ফেলা হয়। কিন্তু সিস্টেম কখনো পাল্টায় না।

সিস্টেমের মাধ্যমে একজন মুসলমানকে যখন টেরোরিস্ট বানায় দেয় তখন তার পিতা বলে, `কেয়া সাব, যিসকো ম্যায়নে মুসলমান বাননে না দিয়ে, আপ নে উসকো জ্বিহাদী বানা দিয়া?`

অসুর

হিন্দু পুরাণ মতে সাত ঋষির সেরা কাশ্যপের ১৩ স্ত্রীদের মধ্যে দিতি এবং অদিতি সবচেয়ে প্রভাবশালী। উত্তর নক্ষত্রের প্রভাবে অদিতির গর্ভে জন্ম নেয় গুণবান পুত্র যাদের দেবতা বলা হয়। অন্যদিকে গ্রহের দোষে দিতির গর্ভে জন্ম নেয়া সন্তানতা হিংসা, ক্রোধ আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয় যাদেরকে অসুর বলা হয়। অসুর বনাম দেবতার লড়াইয়ে বিজয়ী হয় দেবতারা এবং অসুরদের ছুঁড়ে ফেলা হয় অন্ধকারে।

অনেকটা এই মূলধারাকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে ওয়েব সিরিজ `অসুর` যেটি মুক্তি পেয়েছে ভিডিও ষ্ট্রিমিং সাইট Voot-এ। নেটফিক্স কিংবা অ্যামাজনের মতো জনপ্রিয় প্লাটফর্মের সিরিজ না হয়েও গল্প আর নির্মানের জোড়ে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে ক্রাইম থ্রিলার জনরার এই ওয়েব সিরিজটি। হলিউডে মিথলজি নির্ভর অনেক ক্রাইম থ্রিলার মুক্তি পেলেও এই প্রথম ভারতে এমন ধারার কাজ বেশ মুগ্ধ করলো। অসুর ছদ্মনামের এক সিরিয়াল কিলারের নিখুত কিলিং মিশন আটকে রেখেছে দর্শককে সেই টানা ৮ পর্ব ধরে। কিলারের বৈশিষ্ট্য হিসেবে পাওয়া যায় লাশের কাটা আঙ্গুল ও অসুরের মুখোশ। কমেডিতে থিতু হওয়া আরশাদ ওয়ার্সিকে সিবিআই সিরিয়র অফিসার ধনঞ্জয় রাজপুতের মতো সিরিয়াস চরিত্রে পাওয়া দর্শকদের জন্য আলাদা প্রাপ্তি। সিরিজটির অন্যতম প্রধান চরিত্র ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ নিখিল নায়ার (বরুন সবতি) যাকে খুনী তার টোপের বশে বিদেশ থেকে ভারত নিয়ে আসে। অসুর দেখে এটাও মনে হয়েছে, এমন সিরিজ নির্মানে আরো বাজেট দাবি রাখে।

পঞ্চায়েত

টিভিএফ মানেই ভিন্ন কিছু। টিভিএফের অনন্যতার অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে খুব সহজ, সাধারণ আর শিক্ষণীয় ব্যাপারটাকেই তারা খুব মজায় মজায় তুলে ধরে।টিভিএফের গল্প, চিত্রনাট্য এবং নির্মাণ নিয়ে তাই কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। একদমই সিম্পল একটা গল্পকে কি করে দারুণ আকর্ষণীয় আর বিনোদনময় করে তুলতে হয় তার প্রমাণ যেন টিভিএফ। গল্প একদমই সাদামাটা তবে হ্যাঁ চিত্রনাট্য ছিল দুর্দান্ত। বিশেষ করে সংলাপ। কেননা, সাদামাটা গল্প হলেও সংলাপ এবং চরিত্রায়নগুলো এমন মোক্ষমভাবে তৈরি করা হয়েছে যে হাস্যরসাত্মকের কারণে গল্পটার মধ্যে অনায়াসেই ডুবে যাওয়া যায়।

একদম শুরুটাই আপনাকে এত মজা দিবে যে, মজার তালে কোন ফাঁকে যে সিজন শেষ হবে তা টেরই পাবেন না। কমেডি ড্রামা হলেও সিরিজে সুখ, দুঃখ, প্রেম, একাকীত্ব, বন্ধুত্ব, সঙ্গীহীনতা এমনকি ডেয়ারিং সিন আর একশনও ছিল – সবই যেন গল্পের ভাঁজে ভাঁজে ফুটে উঠেছে এক এক করে। চিত্রনাট্যকার চন্দন কুমার তাই একটা বাহবা পাওয়ার যোগ্যই বটে।

অভিনয় বেশ ভালো। অভিষেক চরিত্রে ছিলেন জিতেন্দ্র কুমার। এই ছেলেটার অভিনয় দেখলে মনে হয় মঞ্চাভিনেতা ছিল কোন এককালে হয়তো; আর নয়তো একদম গডগিফটেড। যে কোন চরিত্রে কেমন দারুণভাবে মিশে যায়। পঞ্চায়েত প্রধানের চরিত্রে রাগুবির যাদব এবং তার স্ত্রী মঞ্জু দেবীর চরিত্রে নীনা গুপ্তা। এদের অভিনয় নিয়ে কমবেশি সবারই ধারণা আছে। বেশ জমিয়ে অভিনয় করেছেন। এছাড়া, বাদবাকি সবাইই বেশ ভালো অভিনয় করেছে। নয়তো সিরিজটা আইএমডিবিতে ৮.৯/১০ রেটিং পায় না এবং গুগলের হিসেবে প্রতি ১০০ জনে ৯৭ জন এটাকে পছন্দ করতো না।

আরিয়া

কেন দেখবেনঃ ১। সুস্মিতা সেন, ২। মেকিং ৩। চমৎকার চরিত্রাঙ্কন।

কেন দেখবেন নাঃ রিমেক শো দেখতে না চাইলে।

প্রায় দুই দশক পর হারিয়ে যাওয়া সুষ্মিতা যেই রাজকীয়ভাবে এই সিরিজ দিয়ে পদার্পন করলেন, তা আসলেই বলিউডপ্রেমীদের জন্য অভাবনীয় একটা ঘটনা। Neerja দিয়ে জাতীয় পুরষ্কার পাওয়া রাম মাদভানি এই সিরিজে শুধু সুস্মিতাই না, এমন অনেক আন্ডাররেটেড পুরানো অভিনেতাদের জড় করেছেন, যারা বহুদিন বলিউডে থেকেও জায়গা বানাতে পারেনি। তাদের এতো চমৎকারভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা একটা সাদাসিধা প্লটকেও সমৃদ্ধ করেছে।

Aariya এর গল্পে এক বড় ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির ৩ অংশীদার এক স্থানীয় মাদকচক্রের কাছ থেকে মাল চুরি করে ফ্যাসাদে পড়ে, তাদের ক্রিয়াকর্মের ল্যাঠা পরিবারকে চুকাতে হয়। একদিকে পুলিশ, আরেকদিকে কার্টেল। সবার পাওনা মিটিয়ে পরিবারকে নিরাপদে থাকতে গৃহিণী আরিয়াকে হাল শক্ত করে ধরতে হয়। এটাই কাহিনী, যা অনেকটাই নেটফ্লিক্সের Ozark কে মনে করায়, পার্থক্য সেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মিলিত প্রয়াস, আর এখানে প্রায় One-Woman-Show!

ভায়োলেন্স, রক্তারক্তিতেও দারুণ সহনশীলতা দেখেছি। যৌনতা আছে, কিন্তু কোনটাই বাড়াবাড়ি না, বরং ফ্রেশ ও রুচিশীলভাবে করা।

পুরা শো জুড়ে পুরানো দিনের চমৎকার সব মিষ্টি গান, যা শুরু থেকেই আলাদা একটা স্পর্শে মুখর রেখেছে। সাথে আবার উচ্চবিত্ত সমাজের প্রাচীনত্ব নিয়ে ফিউশান হিপহপের ছোঁয়াও আছে। কোনকিছুতেই বাড়াবাড়ি নেই।

ইউর অনার

এটি কোনো মৌলিক গল্প না, বরং একই নামের ইসরাইলী টিভি সিরিজ এর ভারতীয় সংস্করণ বলা যেতে পারে। গল্পের প্রেক্ষাপট পাঞ্জাব এর লুধিয়ানা শহর। যেখানে সারাক্ষণ ২ টি গ্যাং এর ঝামেলা লেগেই থাকে। একটি হলো পাঞ্জাবি দের গ্যাং যার প্রধান সতবির মুড়কি এবং আর একটি হলো ভাইয়া গ্যাং যার প্রধান হলো পণ্ডিত। নিজেদের ক্ষমতা জহির এর জন্য এরা খুন জখম দাঙ্গা করতেই থাকে। তো এইরকম এক সময়ে শহরের এক আদালতের জাজ বিশান খোসলা(জিমি শেরগীল) এর ছেলে আবির ড্রাইভিং টেস্ট এ ফেল করে রাগের মাথায় গাড়ি চালাতে গিয়ে অ্যাকসিডেন্ট করে বসে সৎবির মুরকির বড়ো ছেলে সতনাম মুড়কি কে। নিজের ছেলে কে বাঁচানোর জন্য বিষাণ খোসলা পুলিশ এ গিয়ে ফলস কমপ্লেইন করে এই বলে যে ওর গাড়ি টি চুরি হয় এ গিয়েছে এবং উনি ওই গাড়ি টি ওনার ই এক পরিচিত সিআরপিএফ জওয়ান কাশী কে গিয়ে বলেন যে গাড়িটি যেভাবে হোক সরিয়ে ফেলতে। কাশী তখন ওর পরিচিত এক গাড়ি চোর guddan কে ডেকে গাড়িটি দিয়ে বলে যে আজ রাতের মধ্যেই গাড়িটির রং নম্বর প্লেট সব পাল্টে ফেলতে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে guddan গাড়ি সমেত সেই রাতেই পুলিশ এর হাতে ধরা পড়ে। এর পরে শুরু হলো, নিজেকে এবং নিজের ছেলে কে পুলিশ ও মুড়কি গ্যাং এর হাত থেকে বাঁচাতে বিষাণ খসলার একের পর এক মিথ্যে এবং ক্ষমতার অপ্যবহারের খেলা।

Bishan Khosla এর ভূমিকায় জিম্মি সেরগিল খুব ভালো কাজ করেছেন। মূলত পুরো ওয়েব সিরিজ টি একার কাধেই টেনে নিয়ে গেছেন। তাকে যোগ্য সঙ্গত করে গেছেন পুলিশ অফিসার এর ভূমিকায় মিতা বশিষ্ঠ এবং সিআরপিএফ জওয়ান এর ভূমিকায় বরুণ বাদলা। বাকিরাও ঠিকঠাক। ছেলের ভূমিকায় আবির কে দেখে মাঝে মাঝে রাগ লাগবে। মনে হবে এরকম ছেলের জেল হলেই ভালো হয়। সব মিলিয়ে কিছুটা দুর্বল চিত্রনাট্য হলেও জিমি সেরগীল এর জন্য একবার দেখে নেওয়াই যায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭