ইনসাইড বাংলাদেশ

করোনায় সুস্থতার দৌড়ে যে কারণে এগিয়ে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/06/2020


Thumbnail

বাংলাদেশের করোনা সঙ্কট নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন এবং সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা আশঙ্কাও করছেন। কিন্তু এই সমস্ত আশঙ্কা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ জীবীকার তাগিদে পথে বের হচ্ছে এবং করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছে। এর প্রধান ভিত্তি হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত বেশি হলেও সুস্থতার হার-ও অনেক বেশি। বিশ্বে সবথেকে বেশি করোনা সংক্রমিত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় যে, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সুস্থতার হার অনেক বেশি। সাধারণত ১৪ থেকে ২১ দিন পর অধিকাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠছেন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুহার দেড় শতাংশের নিচে। বাংলাদেশে আজকের হিসেব পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ১০৮ জন। তাঁর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৮০ জন। অর্থাৎ ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন। এই হার সামনে আরো বাড়বে বলে মনে করছেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা। প্রশ্ন উঠেছে যে, কেন বাংলাদেশে অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় সুস্থতার হার বেশি? এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা কতগুলো সুনির্দিষ্ট কারণের কথা বলেছেন-

তরুণরা বেশি আক্রান্ত

ইউরোপে যেমন বয়স্করা বেশি আক্রান্ত, বাংলাদেশে তাঁর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। তরুণরা করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এর কারণ হলো বাংলাদেশ তরুণ প্রধান রাষ্ট্র এবং তরুণরা সামাজিক দুরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি কম মানছেন, তাঁরা কারণে-অকারণে ঘর থেকে বের হচ্ছেন।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা

যেহেতু বাংলাদেশে তরুণরা অনেক আক্রান্ত এবং তরুণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বয়স্ক, প্রবীণ এবং শিশুদের থেকে বেশি, সে কারণে তরুণরা আক্রান্ত হলেও করোনা তাঁদেরকে খুব একটা কাবু করতে পারছে না। বরং তাঁরা করোনার সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হয়ে উঠছেন। অনেকে মৃদু উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই আপনা আপনি সুস্থ হয়ে উঠছেন।

বিসিজির টিকা

যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবুও দেখা যাচ্ছে , যে দেশগুলোতে বিসিজি টিকা দেওয়া হয় সেই দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যুহার কম রয়েছে। বাংলাদেশে বিসিজি টিকার কার্যক্রম চলে আসছে বহু আগে থেকেই এবং এই কারণে দ্রুত সুস্থ হচ্ছে মানুষ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানসিক শক্তি

করোনায় আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার পেছনে মানসিক শক্তি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা। কারণ এর কোন সরাসরি ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই মানসিক শক্তির উপর নির্ভর করেই অনেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকে মানসিক অস্থিরতার কারণে গুরুতর অবস্থার দিকে চলে যান। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের এমনিতেই প্রতিদিন নানা রকম লড়াই করতে হয়, যুদ্ধ করতে হয়। জীবন-জীবীকার জন্য আমাদের প্রতিদিন সংগ্রাম করতে হয়। এজন্য আমাদের মানসিক দৃঢ়তা অনেক বেশি। আর এই মানসিক দৃঢ়তার কারণে বাংলাদেশে সুস্থতার হার অনেক বেশি বলে মনে করছেন অনেকে।

খাদ্যাভ্যাস

যেকোন দেশে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে যারা কাঁচা ফল, কাঁচা সবজি, কাঁচা মাংস ইত্যাদি বেশি খায় তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। আমরা রান্না করা খাবার বেশি খাই এবং হালাল খাবারের দিকে আমাদের বেশি মনোযোগ রয়েছে। যে কারণে আক্রান্ত হলেও করোনা আমাদের খুব বেশি কাবু করতে পারেনা।

এই কার্যকারণগুলো থেকেই মনে করা হচ্ছে যে করোনায় সুস্থতার দৌড়ে যে কারণে এগিয়ে বাংলাদেশ। আর আক্রান্ত ব্যক্তি ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত করোনার ভয়ে মানুষ ঘরে থাকবে না তা বলাই বাহুল্য।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭