ইনসাইড থট

হোলি আর্টিজান হামলার না বলা কথা 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/07/2020


Thumbnail

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে নানা সময়ে নানা অপচেষ্টা করেছে বাংলাদেশ বিরোধীরা। দেশ স্বাধীন হবার পরে বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে যে অপচেষ্টা শুরু হয় তারই ধারাবাহিকতায় আসে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা। এই হামলার পিছনে অনেক না জানা খবর রয়ে গেছে যা এখনো জন সম্মুখে প্রকাশ হয় নি। কীভাবে এতবড় একটা হত্যাকাণ্ডের পরেও উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশে ফিরে এসে তাঁদের উন্নয়ন কাজ পুনরায় শুরু করেন, তার পিছনে কত শ্রম, মেধা গেছে তার খবর এখনো অনেকের অজানা।  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ফাইভ আইস (FVEY) গঠিত হয়। এটি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্ত রাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত একটি গোয়েন্দা জোট। এই দেশগুলি নিজেদের মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদান করে থাকে। মার্চ ২০১৬ সালের শেষ দিকে FVEY এর মাধ্যমে খবর পাওয়া যায় যে, আই এস জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে হামলা চালাবে। কূটনৈতিক সূত্রে খবর পাওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একজনের নিউজ পোর্টালে ছোট্ট একটা খবর ছাপা হলে সরকার সচেতন হয়ে নড়ে চড়ে বসেন।  

এটা নিয়ে নীরবে চলে অনেক কাজ। গুলশান বনানী, বারিধারা এলাকায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। এই ঘটনায় প্রয়োজনে থানার সীমানার বাইরে গিয়ে অন্য এলাকায় কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এটা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ডিএমপি কমিশনার, পুলিশের গুলশান জোনের ডিসি, চ্যান্সেরি পুলিশের ডিসি, গুলশান বনানী থানার ওসিকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। তাঁরা ২৪ ঘণ্টা সতর্ক হয়ে থাকতে শুরু করেন।    
     
এ কারণে ১লা জুলাই রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে যখন গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালায়। এর পরেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোলাগুলিতে আহত হন বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন, পরে মারা যান তিনি। ঘটনাস্থল গুলশানের কিন্তু বনানী থানার ওসি কেন সেখানে গেলেন! আসল খবর হচ্ছে সবাই জানতেন এসময় একটা জঙ্গি হামলা হতে পারে, যার সম্ভাবনা খুব বেশি, তাই সবাই প্রস্তুত ছিলেন।  

হোলি আর্টিজান রেস্তোরাটিতে জঙ্গিদের হামলায় ১৮ জন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে নয় জন ইতালির, সাত জন জাপানের, তিন জন বাংলাদেশি, যাদের একজনের দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল এবং এক জন ভারতীয় নাগরিক। এছাড়া দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হয়েছিলেন জঙ্গিদের গুলিতে। বাংলাদেশিদের মধ্যে ফারাজ হোসেইন (২০) নামের ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতিও নিহত হন। যার একাধিক হাস্যজ্জল ছবি ছিল জঙ্গিদের সাথে।  এরা বন্ধুদের নিয়ে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নৈশভোজে গিয়ে নিহত হন।

গুলশানের জঙ্গি হামলায় অভিযান কালে নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছাড়াও নিহত হয়েছিলেন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিম। তিনি ছিলেন ঢাকা মহানগর (উত্তরের) গোয়েন্দা পুলিশের অ্যাডিশনাল কমিশনার। উনারা জঙ্গিদের অস্ত্র সামর্থ্যের আন্ডার এস্টিমেট করেছিলেন, এ কারণেই তাঁদের প্রাণ ঝরে যায়।  

ঐদিন রাতেই ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা বলে পরিচিত `আমাক`এ গুলশান হামলার দায় স্বীকার করে ২০জন নিহত হবার কথা জানায়। আইএস এর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের `সৈনিক` বলে দাবি করে, হামলার দায় নেয় তারা।

ঢাকার মেট্রোরেলে কর্মরত সাত জন জাপানী নাগরিক নিহত হবার পরে জাপানী জনগণের চাপে জাপান সরকার বাংলাদেশে জাইকার মাধ্যমে তাঁদের সকল সহায়তা স্থগিত করেন। তখন ডিএমপি কমিশনারের পরামর্শে পুলিশের গুলশান জোনের ডিসি, জাইকা অফিসের জাপানী বাঙ্গালী মিলে ৪ জন কর্মকর্তার অক্লান্ত পরিশ্রমে বহু চেষ্টার পরে এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, এই ঘটনায় সরকারের কোন গাফিলতি ছিল না, জাইকা বাংলাদেশ অফিসের চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এরও কোন গাফিলতি ছিল না। এটা প্রমাণ করা না গেলে জাইকা বাংলাদেশের চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভকে তার কর্তব্যে অবহেলার জন্য বড় ধরণের শাস্তি ভোগ করতে হতো।

অবশেষে  জাইকা বাংলাদেশের চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভকে তার দায় থেকে মুক্তি দিয়ে তার বাংলাদেশে পদায়নের মেয়াদ পূর্তির মাত্র ৩ দিন আগে বদলি করা হয়। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাইকার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সফল আলোচনা করে আবার তাঁদের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। নতুন করে আরও বেশি প্রকল্প নিতে থাকেন। জাপান সরকার বলেন যে, এই অবস্থায় বাংলাদেশে সাহায্য বন্ধ করা মানে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করা, সন্ত্রাসীদের কাছে হেরে যাওয়া; যা তাঁরা কখনোই করবেন না। ফলে অন্য দাতারাও ফিরে আসেন আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে।    

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ৪ বছর পূর্ণ হল। হোলি আর্টিজানে ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। পরদিন অর্থাৎ ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডোদের উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর একজন পাচক নিহত হন। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধর জিম্মি দশা। রেস্তোরাঁর আটক আরেক কর্মী জাকির হোসেন শাওন পরে হাসপাতালে মারা যান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭