ইনসাইড বাংলাদেশ

‘করোনা টেস্টে ২০০ টাকা ফি আপাতত স্থগিত করা জরুরী’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/07/2020


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেছেন, ‘আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি, তারা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে করোনা টেস্টের জন্য ২০০ টাকা ফি নেওয়াটা আপাতত স্থগিত করুক। বাড়িতে যেয়ে টেস্টের নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে ৫০০ টাকা ফি ধার্য করেছে, সেটা নেওয়া যেতে পারে। কারণ বাড়িতে যারা নমুনা নিতে ডেকে পাঠায়, তাদের সেই টাকাটা দেওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য ২০০ টাকা ফি টা আপাতত বন্ধ রাখা জরুরী।’ ‘বাংলা ইনসাইডার’ এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এতদিন বাজেট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সদ্যই বাজেট পাস হয়েছে। এখন আমি বিশ্বাস করি যে, তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরও উদ্ভাবনীমূলক দিক নির্দেশনা দিয়ে একটা পর্যায়ে আনতে পারবেন, যেখান থেকে আমাদের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, `করোনার কারণে অনেক গরীব মানুষ আরও গরীব হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ২০০ টাকা ফি ধার্য করলে অনেকে টেস্ট করবে না। এর ফলে জনগণের মধ্যে সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকবে। তাতে আমরা লকডাউনের সুফল পাবো না। সুতরাং আমার কাছে মনে হচ্ছে, যারা এই সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করেছে, তারা খুব চিন্তা করে এই সিদ্ধান্তটা নেয়নি।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটা বিরাট ভুল হচ্ছে করোনার প্রথম থেকে শুরু করে তারা একের পর কমিটি করছে। অথচ তারা কোনো কমিটির পরামর্শই তেমনভাবে শুনছে না। মিডিয়াতে দেখছি বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা এক ধরনের কথা বলছে, আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্য কাজ করছে। একের পর এক কমিটি করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটা নোবেল পেতে পারে। কিন্তু আমাদের এখন এই নোবেল প্রাইজের দরকার নেই, আমাদের দরকার হচ্ছে করোনার সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনা।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন, সেগুলো যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, আমরা সঠিক পথে এগুচ্ছি। কিন্তু কিছু মানুষের ভুল ভ্রান্তি, অনিয়ম এবং কাজের প্রতি আন্তরিকতার অভাবের কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘জাফরুল্লাহ ভাই (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) যে কথাটা বলেছেন যে, অন্ধকার ঘরে কালো বিড়াল ধরার কাজ চলছে। আমি বলবো যে, শুধু আমরা না পৃথিবীর সবাই-ই এই কাজটা করছে। কোনো দেশেরই কোন অভিজ্ঞতা নেই। কারণ এ রকম মহামারী গত ১০০ বছরে আসেনি। সুতরাং সবার কাছেই এটা অজানা একটা সমস্যা। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও অন্ধকার ঘরেই কালো বিড়াল হাতড়ে বেড়াচ্ছে। তারা একে্ক বার একের ধরনের কথা বলছে। একবার বলছে মাস্ক ততটা দরকারি নয়, আবার সেই মন্তব্য থেকে সরে আসছে। করোনার ওষুধ নিয়েও একেক ধরনের কথা বলছে।’

তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সবার আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। যদিও গবাদি পশু থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে যে, আমরা সাধারণ সময়েই স্বাস্থ্যবিধি মানি না, সামাজিক দূরত্ব মানি না। কোরবানির সময়ে তো এটা আরও মানা হবে না। গরুর হাটে, গরু জবাইয়ের সময় দেখা যাবে যে, অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মানবে না। এ অবস্থায় অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন। আর এই সময়টায় ২০০ টাকা করোনা পরীক্ষার জন্য ফি ধরা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। এটাকে আমি পুরোপুরি বন্ধ করতে বলছি না, কিন্তু এটা আপাতত স্থগিত করা যেতে পারে। এখন  যে হারে টেস্ট করা হচ্ছে, তার ফলে অবস্থাটা কী দাঁড়াচ্ছে, সেটা দেখে এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। কারণ টেস্টে টাকা ধরা হলে অনেকেই টেস্ট করবে না। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, `শত সমস্যার মধ্যেও আমরা আশার আলো দেখছি। আমাদের দেশেই ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো খবর। আমাদের প্রত্যেকের যে যার জায়গা থেকে কাজ করে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো মানতে হবে। কাজের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। তাহলে করোনাকে হারিয়ে দেওয়া আমাদের জন্য অসম্ভব কিছু হবে না।` 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭