ইনসাইড আর্টিকেল

ইহুদি বিদ্বেষের যত ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/07/2020


Thumbnail

ইহুদি জাতি নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের যেন জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। বহু আগে থেকেই ইহুদি বিদ্বেষের সূচনা শুরু হয়। ইহুদি-বিদ্বেষ বলতে ইহুদি জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের প্রতি যেকোনো ধরনের বৈরিতাকে বোঝানো হয়ে থাকে। এ ধরনের বিদ্বেষের মধ্যে ব্যক্তিগত ঘৃণা থেকে শুরু করে। অবশ্য এই ধারণার মধ্যে সংঘবদ্ধ জাতি-নিধনও পড়ে। ইংরেজিতে একে বলা হয় এন্টি-সেমিটিজম। যার অর্থ সেমিটীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ। সেমিটীয় একটি বৃহৎ ভাষাভাষী গোষ্ঠী যার মধ্যে হিব্রুভাষী ছাড়াও আরবি ভাষীরাও অন্তভুক্ত। কিন্তু তবুও অ্যান্টি-সেমিটিজম ইহুদি-বিদ্বেষ বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়। ইহুদি-বিদ্বেষের ইতিহাস প্রাচীন হলেও এটি চরম আকার ধারণ করে হিটলার-শাসিত জার্মানিতে।

উনিশ শতকের পূর্বে ইহুদি-বিদ্বেষ ছিল মূলত ধর্ম-ভিত্তিক। খ্রিস্টানরা ইহুদি ধর্মের ব্যাপারে নিজস্ব ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও দৃষ্টিকোণের আলোকে এই বিদ্বেষভাব পোষণ করতো। তৎকালীন খ্রিস্টান-শাসিত ইউরোপে বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্মীয়-গোষ্ঠী হিসেবে ইহুদিরা বিভিন্নসময় ধর্মীয় বিদ্বেষ, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হত। ধর্মীয় নির্যাতনের মধ্যে ছিল- ধর্ম পালনে বাধা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, দেশ থেকে বিতাড়ন, ইত্যাদি। শিল্প-বিপ্লবের পর ইহুদিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়। এসময় ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটলে ইহুদিদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষ দেখা দেয়। জাতিতত্ত্ব সংক্রান্ত অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই বিদ্বেষে ইন্ধন যোগায়। ইহুদিরা অনার্য ও আর্যদের চেয়ে হীন, এমন মতবাদ দেয়া হয় এবং জাতিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে অর্থলিপ্সা, শ্রমবিমুখতা, ধূর্ততা, গোত্রপ্রীতি ও দেশপ্রেমহীনতার অভিযোগ দেয়া হয়।

তৎকালীন ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী সমাজ ধর্মভিত্তিক বিদ্বেষকে অসংস্কৃত আচরণ মনে করলেও এই বংশানুগতিক অপতত্ত্বকে `বৈজ্ঞানিক` তত্ত্ব মনে করে এধরনের জাতিগত সংস্কারের যথার্থতা স্বীকার করে নেয়।

নাৎসিদের ইহুদি নিধন

জাতিগত বিদ্বেষ ভয়াবহ চরম আকার ধারণ করে বিংশ শতকের তৃতীয় দশকে। হিটলারের নাৎসি দল-শাসিত জার্মানিতে। ইহুদি-বিরোধী এই জাতিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের দায়ও ইহুদিদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। সেইসাথে তারা বিভিন্ন অত্যাচার এবং নিধনমূলক আইন-কানুন প্রণয়ন করে। ১৯৩৯ সালে হিটলার বিভিন্ন দেশ আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটালে ইউরোপে ইহুদি নির্যাতন ও নিধন চরমরূপ নেয়। তারা আইন করে ইহুদিদের নিজস্ব নিবাস অধিগ্রহণ করে বন্দী-নিবাসে প্রেরণ করে। এবং পর্যায়ক্রমে হত্যা করে। প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয় বলে জানা যায় ইতিহাস থেকে। ইতিহাসে এ ঘটনা `হলোকস্ট`  নামে পরিচিত। তবে জানা যায়, এই পরিমাণ ইহুদি নিধনের বিষয়ে দালিলিক কোন প্রমাণ পাওয়া যায়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, এই সংখ্যাটা অনেক বাড়ানো হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা এতো বেশি নয়। অবশ্য নব্য ইহুদি-বিদ্বেষীরা এই নিধনযজ্ঞের ঘটনাকেও সন্দেহ বা অস্বীকার করে।

মুসলিমদের ইহুদি বিদ্বেষ সম্পর্কে জানা যায়, মুসলমানদের খায়বর বিজয়ের পর ইহুদীরা বশ্যতা স্বীকার করলেও কোন কোন ব্যক্তি মুসলমানদের ক্ষতি এমনকি নবী করীম (সাঃ) এর প্রাণনাশের প্রচেষ্টায়ও তৎপর ছিল। ইহুদী বীর মারহাবের ভাই সালামের এক স্ত্রীর নাম ছিল জয়নব। সে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছিল। কিন্তু সে তার অন্তরের জ্বালা চেপে রেখে বাইরে ভাল মানুষের বেশ ধারণ করেছিল। একদিন সে বকরীর গোশত রান্না করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কতিপয় সাহাবীকে আপ্যায়নের জন্য দাওয়াত করল। এ মহিলা গোশতের সাথে ভয়ংকর বিষ মিশিয়ে রেখেছিল। সৌহার্দ ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার খাতিরে নবী করীম (সাঃ) তার কতিপয় সহচরসহ এ মহিলার গৃহে দাওয়াত রক্ষার জন্য উপস্থিত হলেন। তাদের সামনে খানা আনা হল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক টুকরা গোশত উঠিয়ে মুখে দিলেন। সাথে সাথে গোশত বলে উঠল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার সাথে বিষ মিশ্রিত আছে, আপনি আমাকে ভক্ষণ করবেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তৎক্ষণাৎ টুকরাটি ফেলে দিলেন। এবং সাথে সাথে সাহাবিদেরকে এ গোশত খেতে নিষেধ করলেন। দূরভাগ্যবশতঃ জনৈক সাহাৰী পূর্বেই কিছু মাংস আহার করে ফেললে বিষক্রিয়ায় তিনি শাহাদাত বরণ করলেন ।

অতঃপর এ মহিলাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করা হল, তুমি এ গোশতে বিষ মিশিয়ে খেতে দিলে কেন? মহিলা বলল, তা আপনি কি করে বুঝতে পারলেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আমার সম্মুখের গোশতই তা বলে দিল। এবার মহিলা বলল, আপনি সত্য নবী কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্যই আমি এরূপ করেছিলাম। এখন বুঝতে পারলাম আপনি সত্যিই আল্লাহর নবী। ইহুদী রমনী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ব্যক্তিগতভাবে তাকে ক্ষমা করলেও যেহেতু সে গোশতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ প্রয়োগ করেছে এবং একজন নিরাপরাধ সাহাবী তা ভক্ষণ করে মৃত্য বরণ করেছেন, তাই এ গুরুতর অপরাধের জন্য। এ মহিলাকে প্রাণদণ্ডের আদেশ দান করা হল।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭