ইনসাইড আর্টিকেল

আমেরিকা যেভাবে বিশ্বনেতা হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/07/2020


Thumbnail

বিশ্ব মোড়ল বললে শুরুতেই যে দেশটির নাম চলে আসে সেটি হলো আমেরিকা বা যুক্তরাষ্ট্র। শুধুমাত্র আমেরিকার প্রভূত্ব না মানায় ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে এমন দেশ আছে ভুড়ি ভুড়ি। বর্তমানে  ৮০০০ মিলিটারি বেস ও পৃথিবীর মোট মিলিটারি খরচের ৩৭ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। তাদের বিরুদ্ধে গেলেই ধ্বংস যেন অনিবার্য। কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই আমেরিকা করে ফেলতে পারে যেকোনো কিছু। কিন্তু এক সময়কার দাসরাষ্ট্র আমেরিকা কীভাবে এত শক্তিশালী হলো, কীভাবে তারা বিশ্বনেতা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করলো? আজ আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে তাদের বিশ্বনেতা হওয়ার পেছনের ইতিহাসটাই একটু দেখে নেওয়া যাক- 

স্বাধীনতা পাওয়ার প্রথম ৭০ বছর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কোনো মতেই বিশ্বের বড় শক্তির মধ্যে পড়তো না। এই সত্তর বছরে তারা শুধুমাত্র তাদের রাজ্য বড়ই করেছে। তাদের রাজ্য প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিলো। এরপর সে দেশের মানুষজন দু’ভাগে বিভক্ত হতে থাকে যার এক ভাগ ছিল রাষ্ট্র বিস্তৃতির পক্ষে এবং অন্য ভাগ প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্তই রাষ্ট্র রাখার মত দেন। মূলত আমেরিকা সিভিল ওয়ার-এর পরেই দেশটির জনগণ এই বিতর্কিত বিষয়ের উপর দুই ভাগে অবস্থান নেয়। ১৮৬৫ সালে আমেরিকার সিভিল ওয়ার এরপর তাদের এক রাজ্যে সেক্রেটারী উইলিয়াম এইচ  শিওয়ার্ড বলেন যে, আমেরিকার এখন বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হওয়া উচিত। শুধু তাই নয় শিওয়ার্ড এ বিষয়ে সাফল্য অর্জন করেন এবং সেই সময় রাশিয়া থেকে আলাস্কা কিনে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে তার এই চেষ্টা থেমে যায় যখন আমেরিকান কংগ্রেস গ্রীনল্যান্ড আইসল্যান্ড ও ক্যারিবিয়ান কিছু দ্বীপপুঞ্জ কিনতে বাধা দেয়। কারণ, তখন ক্যাপিটল হিলের বেশিরভাগই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ছিলো। মূলত তাদের ভয় ছিলো যুক্তরাষ্ট্র সে সময় বিশ্ব রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বে।

১৮০০ সালের পর আমেরিকার শিল্প বিপ্লব শুরু হয়। এই শিল্প বিপ্লবের ফলে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে। এরপর সাম্রাজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমেরিকা ১৮৯৮ সালে কিউবা নিজেদের দখলে আনার জন্য স্পেনের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। শক্তিশালী হতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র স্পেনকে সহজেই যুদ্ধে হারিয়ে দেয় এবং ফিলিপাইন সহ আরো বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নেয়। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে তারা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ দখল করে এবং ওয়েক আইল্যান্ডসহ আমেরিকান সামোয়া দখল করে নেয়।

এরপর আমেরিকা তাদের চোখ দেয় পানামা খালের অঞ্চলে। কয়েক বছর পর তারা পানামা অঞ্চল দখল করে নেয়। এরপর ১৯১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সৈন্য পাঠিয়ে ডোমিনিকান রিপাবলিক দখল করে নেয়। এরপর ১৯১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকান ভার্জিন দ্বীপ কিনে নেয়। এ সময় আমেরিকা তাদের সাম্রাজ্যর এতো বড় করার পরে একটি বড় বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। আমেরিকার শক্তি কতটা বৃদ্ধি পেয়েছিলো তা বোঝা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাদের নেয়া অবস্থানের উপর। মার্কিনদের প্রভাবে যে শুধু যুদ্ধের ফলাফলের উপর প্রভাব পড়েছিল তা নয়, এমনকি সেই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলসনের প্যারিস শান্তি চুক্তির ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। এছাড়া প্রেসিডেন্ট উইলসন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ কিছু নিয়ম-কানুন জারি করার প্রচেষ্টা করেন। সেজন্য তার হাত ধরেই লীগ অব নেশনস এর জন্ম হয়েছিলো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলিয়ে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সেই সময় জাপান তাদের জন্য হুমকি হলে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। তারপরের ইতিহাস প্রায় সবারই জানা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সেই সময় থেকেই তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। এমনকি এর জন্য তারা আণবিক ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়াতে থাকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সেই সময় থেকেই বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে এবং পরবর্তীতে বিশ্বযুদ্ধ যাতে না হয় সেজন্য মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবেই জাতিসংঘের জন্ম হয়।

এতো কিছুর পরে ৪৪ দেশের ৭৩০ জন প্রতিনিধি মিলে হ্যাম্পশায়ারে একটি বৈঠক করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো একটি গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম তৈরি করা, যাতে করে অর্থনৈতিক অবস্থার কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে এবং কোনো বিশ্বযুদ্ধ না হয়। এই বৈঠক শেষে সকলে মিলে একটি সমঝোতায় আসে, যার নাম ব্রেটন উড এগ্রিমেন্ট। এই সমঝোতার ফলেই বিশ্ব ব্যাংক এবং ওয়ার্ল্ড মনিটারি ফান্ড-এর জন্ম হয়। এতো এতো প্রতিষ্ঠান তৈরীর পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে। তবে সেই সময়ের দ্বিতীয় বৃহত্তর শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রগতিকে দেখে অন্য চোখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তি বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের ফ্রি ট্রেডিং-এর জন্য হুমকি হতে পারে। এসব দেখে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগী বেশকিছু ইউরোপীয় দেশ মিলে ন্যাটো গঠন করে। সামরিক প্রতিষ্ঠান ন্যাটো মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো যাতে রাশিয়া অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ দখল করতে না পারে। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে আমেরিকার সামনে আর কোনো সমশক্তি উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এর ফলাফল হিসেবে আমেরিকা হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ।

বিশ্বনেতা হওয়ার পর আমেরিকা একের পর এক কৌশল অবলম্বন করেছে। মূলত ১৯৪৫ সালে আমেরিকা তাদের বিদেশ নীতি এমনভাবে তৈরী করেছিলো আর নিয়ন্ত্রণ করেছিলো, তাদের মিত্ররা কখনোই তাদের বিরোধিতা করেনি। তাছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সব প্রতিষ্ঠান তৈরী করে নিজেদের আলাদা ধরণের সুবিধা করে নিয়েছিলো তারা। এসব পদক্ষেপের ফলটাই এখনও ভোগ করে যাচ্ছে দেশটি। 

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সময় অনেক গড়িয়েছে। ৭০ ৮০ বছর আগের কিছু পদক্ষেপ থেকে আমেরিকার ফল ভোগ করে যাওয়ার দিন শেষ হয়ে এসেছে। খুব শীঘ্রই হয়তো নিজেদের ভুলেই বিশ্বনেতার তকমাটা হারাবে তারা।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭