নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 04/07/2020
পঞ্চাশ এর দশকের কালজয়ী রিয়াল মাদ্রিদ টিম শুধু সময়ের সেরা দল ছিলো না, সর্বকালের সেরা ফুটবল দলগুলোর একটি তালিকা তৈরি করলে বেশ উপরের দিকেই থাকবে সেই দলটির নাম। সেই টিমের কান্ডারী ছিলেন অভাগা ফুটবলার। যিনি সব জিতেও যেন কিছুই জেতেননি, যাকে কেউ কেউ মনে করেন সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়- তবে খেলা হয়নি কোন বিশ্বকাপ। তবে তাকে দলে ভিড়ানোর মাধ্যমেই রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপিয়ান কাপের প্রথম আসরসহ টানা ৫টি ইউরোপিয়ান কাপ জিতে নিয়েছিলো। সব্যসাচী এই ফুটবলারের জন্মদিন আজ। শুভ জন্মদিন কিংবদন্তি আলফ্রেডো ডি স্টেফানো।
জন্মসূত্রে ছিলেন আর্জেন্টাইন। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন দেশীয় ক্লাব রিভারপ্লেটে। সেখানে থাকার সময়ই জেতেন ক্যারিয়ারের একমাত্র আন্তর্জাতিক শিরোপা ১৯৪৭’র কোপা। রিভারপ্লেট থেকে কলম্বিয়ার ক্লাব মিলোনারিওস ঘুরে আসেন যখন বিংশ শতাব্দীর সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে আসেন মাদ্রিদের তখন দুঃসময়। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের পরে প্রায় ১৫ বছর কেটে গেলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তাঁরা। এমনই সময় ডি স্টেফানো আসলেন। যে রিয়াল মাদ্রিদ আগের ২০ বছর একবারও লা লিগা জিতেনি ডি স্টেফানো যোগ দেবার পর তাঁরাই পরের ১১ বছরে জিতলো ৮ লা লিগা আর টানা ৫ বার চ্যাম্পিয়নস লীগ।
রিয়ালের হয়ে ৩০৮ ম্যাচে করলেন ৩৯৬ গোল। জিতলেন ১৯৫৭ এবং ১৯৫৯ সালের ব্যালন ডি’অরসহ অসংখ্য ব্যক্তিগত পুরষ্কার। ১৯৬৪ সালে ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলায় রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যোগ দেন বার্সেলোনার নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিওলে। সেখানে ৩ মৌসুমে ৪৭ ম্যাচে ১১ গোল বুঝিয়ে দেয় বয়স থাবা বসিয়েছে ভালোভাবেই। ১৯৬৬ সালে সকল ধরণের ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
আর্জেন্টিনার হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হলেও পরে স্পেনের নাগরিকত্ব নিয়ে খেলেছেন স্পেনের হয়েও। ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও দুর্দান্ত ফর্ম ছিল তাঁর। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে খেলেছেন কলম্বিয়ার হয়ে। আর্জেন্টিনার হয়ে ৬ ম্যাচে ৬ গোল, স্পেনের হয়ে ৩১ ম্যাচে ২৩ গোল এবং কলম্বিয়ার হয়ে ৬ ম্যাচে ৬ গোলই বলে দিচ্ছে শুধু ক্লাব ফুটবলেই না, জাতীয় দলেও আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর নামের পাশে ১৯৪৭ এর কোপা আমেরিকা ছাড়াও থাকতে পারতো আরও অনেক শিরোপা।
তবে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ১৫ টি টাইটেল জেতা ডি স্টেফানোর হয়তো এসব নিয়ে আক্ষেপ ছিল না। আক্ষেপ থাকতে পারতো অন্য একটা বিষয়ে। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার যে কখনোই বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। প্রতিবারই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো কিছু না কিছু।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আর্জেন্টিনা ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণই করেনি। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা অংশ নিলেও বিস্ময়করভাবে স্কোয়াডে ছিলেন না ডি স্টেফানো। ততদিনে রিয়াল মাদ্রিদে খেলতে থাকলেও স্পেনের নাগরিকত্ব না পাওয়ায় বাদ যায় এই বিশ্বকাপও। সেরা সুযোগ হতে পারতো ১৯৫৮’র বিশ্বকাপ। কিন্তু কুবালা-ডি স্টেফানো-জেন্টোর স্পেন স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে বাদ পড়ে বাছাইপর্বেই।
পরের বিশ্বকাপে ৩৫ বছর বয়সে স্পেনকে চিলিতে বিশ্বকাপের মূল পর্বে নিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে ইনজুরির কারণে আর খেলা হয়নি। সেই ইনজুরির পর স্পেনের হয়ে খেলতে নামেননি আর। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বেশ দুর্ভাগাই বলা যায় তাকে। এই আক্ষেপ নিয়েই ফুটবলকে বিদায় জানান স্টেফানো। অবশ্য অবসরে যাওয়ার পর ফুটবল থেকে বেশিদিন দূরে থাকেননি। বোকা জুনিয়র্সের হয়ে আবারো মাঠে নামেন, তবে এবার সাইডলাইনে কোচ হিসেবে।২৫
বছরের সাফল্যমন্ডিত কোচিং ক্যারিয়ারে মোট ৮টি ক্লাবকে কোচিং করিয়েছেন। জিতিয়েছিলেন বোকা জুনিয়র্স এবং রিভার প্লেটকে আর্জেন্টাইন লীগ টাইটেল এবং স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়াকে ইউরোপিয়ান কাপ উইনারস কাপ এবং লীগ টাইটেল। ১৯৮২ সালে ফেরেন তার ভালোবাসার রিয়াল মাদ্রিদে। কিন্তু সেই সিজন খুব একটা ভালো কাটেনি। রিয়াল মাদ্রিদ রানার্স আপ হিসেবে সিজন শেষ করে পাঁচ পাঁচটি প্রতিযোগিতায়- স্প্যানীশ লীগ, কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ, কোপা দে লা লীগা এবং সর্বশেষ ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপে আন্ডারডগ আবেরদিনের কাছে হেরে বসে মাদ্রিদ।
ডি স্টেফানো তাঁর আজীবন যুক্ত ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে। একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ‘হোয়াট ইজ রিয়াল মাদ্রিদ?’ তাঁর উত্তর ছিল, ‘ইট ইজ জাস্ট আ ফিলিং।’ ২০০০ সালে তাকে মাদ্রিদের আজীবন প্রেসিডেন্টের পদে ভূষিত করে সম্মাননা দেয়া হয় এবং ২০০৬ সালে মাদ্রিদের ট্রেনিং গ্রাউন্ডের একটি স্টেডিয়ামের নাম তাঁর নামে নামকরণ করা হয়।
কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিগত অর্জন এবং রেকর্ড
পিচিচি ট্রফি - ৫ বার
ব্যালন ডি’অর - ২ বার
সুপার ব্যালন ডি’অর - ১ বার
চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টপ স্কোয়ার - ২ বার
টানা পাঁচ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে গোল করার রেকর্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে সবচেয়ে বেশী গোল - ৭ টি
বাংলা ইনসাইডার/এসএম
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭