ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

এবার ব্ল্যাকহোল থেকে আলোর ঝলক দেখল নাসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/07/2020


Thumbnail

ব্লাকহোল মানেই যেন রাক্ষুসে অন্ধকার। এবার এই অন্ধকারই উগরে দিল আলো! এই প্রথম আলো বেরিয়ে আসতে দেখা গেল ব্ল্যাকহোল থেকে। আলোর ঝিলিক! নাসা জানায়, সান ডিয়েগোর কাছে পালোমার অবজারভেটরিতে বসানো জুইকি ট্রানসিয়েন্ট ফেসিলিটি টেলিস্কোপেই ধরা পড়েছে এই বিরল দৃশ্য। আর এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্র বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’-এ।

ব্ল্যাকহোল

ব্ল্যাকহোলের রং ঘুটঘুটে কালো। সে কৃষ্ণগহ্বর। তার নাগালে যা আসে, তাকেই সে রাক্ষসের মতো গিলে নেয়। তার অসম্ভব জোরালো অভিকর্ষ বলের নাগপাশ এড়িয়ে এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। তাই কোনও টেলিস্কোপেই ব্ল্যাকহোল দেখা যায় না। সেই ব্ল্যাকহোল থেকেই এ বার ঠিকরে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল আলো। তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ। এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, তার তাত্ত্বিক পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু সংঘর্ষের সময় কোনও ব্ল্যাকহোল থেকে আলোর মতো তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ বেরিয়ে আসার প্রমাণ এত দিন মেলেনি।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানায়, এই আলোর ঝিলিক দেখা গিয়েছে। একে অন্যের চার দিকে ঘুরতে ঘুরতে কাছে এসে পড়া দু’টি ব্ল্যাকহোলের মধ্যে খুব জোরে সংঘর্ষ হওয়ার পর। ওই ধাক্কাধাক্কিতে তুলনায় ছোটখাটো দু’টি ব্ল্যাকহোল মতো মিলেমিশে গিয়ে একটি বড় ব্ল্যাকহোল তৈরি করেছে। আলোর ঝিলিকটা বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে নবজাতক বড় ব্ল্যাকহোলটি থেকে। আর সেই ঝিলিকটি গত বছরের ২১ মে নজরে এসেছে। আলোরও যে মহাকাশে অনেকটা পথ পেরিয়ে আসতে হয়।

মহাকর্ষীয় তরঙ্গ

ব্ল্যাকহোলকে দেখার উপায় নেই। তাই ব্ল্যাকহোলের অজানা জগতের খবরাখবর এত দিন বয়ে আনত মহাকর্ষীয় তরঙ্গই। এই তরঙ্গই আপাতত ব্ল্যাকহোলের একমাত্র বার্তা বাহক। এবারও দু’টি ছোট ব্ল্যাকহোলের মধ্যে সংঘর্ষে একটি বড় ব্ল্যাকহোল জন্মানোর সময় মহাকর্ষীয় তরঙ্গ তৈরি হয়েছে। সঙ্গে দেখা গিয়েছে এই আলোর ঝিলিকও। ঘটনাটির নাম দেওয়া হয়েছে, জিডব্লিউ১৯০৫২১জি। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বেরিয়ে আসে যেমন দু’টি ব্ল্যাকহোলের বা একটি ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে একটি নিউট্রন নক্ষত্রের সংঘর্ষে। তেমনই সেই তরঙ্গ বেরিয়ে আসে দু’টি নিউট্রন নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষেও। যেহেতু এই তরঙ্গ আলোর মতো কোনও তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ নয়। তাই কোনও টেলিস্কোপে বা আলো সন্ধানী যন্ত্রে তা ধরা পড়ে না। তা ধরা পড়ে বিশেষ এক ধরনের যন্ত্রে। লাইগো’র ডিটেক্টরে।

যেভাবে ঘটনা ঘটল

গবেষকদের ব্যাখ্যা, ছোট দু’টি ব্ল্যাকহোল একে অন্যের চার দিকে ঘুরতে ঘুরতে কাছে এসে পড়ছিল। একই সঙ্গে দু’টি ব্ল্যাকহোল আবার ঘুরছিল একটি সুপারম্যাসিভ বা দানবাকৃতি ব্ল্যাকহোলেরও চারদিকে। সেই দানবাকৃতি ব্ল্যাকহোলের চারদিকে ছিল গ্যাসের পুরু চাদর। যা ভরা অসংখ্য কণায়। ক্রমশই কাছে আসতে আসতে এক সময় দু’টি ছোট ব্ল্যাকহোল একে অন্যকে খুব জোরে ধাক্কা মারে। তার ফলে, তারা মিশে গিয়ে তৈরি করে বড় একটি ব্ল্যাকহোল। যার ভর মোটামুটিভাবে ১০০টি সূর্যের সমান। গবেষকরা মনে করছেন, নবজাতক ব্ল্যাকহোলটি এর পরেই কিছুটা দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে চত্বর ছাড়ার চেষ্টা করে।

আবার ফিরে আসবে

বিজ্ঞানীদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, এই ব্ল্যাকহোলটি আবার ফিরে আসবে। ফলে, লাইগো ডিটেক্টর ও টেলিস্কোপের মাধ্যমে যথাক্রমে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ও তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ, দু’ভাবেই ব্ল্যাক হোলটিকে দেখার সুযোগ আমাদের আরও বাড়বে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭