ইনসাইড বাংলাদেশ

সামাজিক সঙ্কটের ৪ মাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/07/2020


Thumbnail

প্রাণঘাতী করোনা সংকটের চার মাস পূর্ণ হল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দেওয়া নানা পূর্বাভাসের পরও এখনো বাংলাদেশে করোনা পিক টাইমে। করোনাকালে অনেকেই অনেক রকম ক্ষতির কথা বলছেন। সকলেই যেন এক আর্থিক খতিতে মগ্ন। অন্য কোন ক্ষতির দিকে যেন কেউ তাকাতেই নারাজ। আর এভাবে সকলের অগোচরে করোনাকালে আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে গেল সামাজিক ক্ষেত্রে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এটা যে কেউ বিতর্ক ছাড়া মেনে নিবে।

মানুষকে স্বার্থপর করে তুলছে এ করোনা। মানুষ মানুষের পাশে না থেকে মৃত্যুভয়ে অমানবিক আচরণ করছে। মাকে জঙ্গলে ফেলে যাওয়া, বাসা থেকে বের করে দেয়া। কোনো কোনো হাসপাতাল রোগীর চিকিৎসা দিতে রাজি হচ্ছে না। বাড়ছে সামাজিক সংকট। দীর্ঘদিন লকডাউনে বেড়েছে দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক অশান্তি। এমনকি অভাবের তাড়নায় চট্টগ্রামের পটিয়ায় বাবা তার দুই সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করে নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টা করার মত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। যা করোনাকালে সম্ভবত প্রথম ঘটনা। আমাদের দেশের মানুষ ঘরে আবদ্ধ থাকতে অভ্যস্ত নয়। দীর্ঘ সময় ধরে আটকা থাকায় স্নায়ু চাপ বাড়ছে ফলে তুচ্ছ ঘটনায় সহিংসতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমনে একদিকে মানসিক যন্ত্রণা অন্যদিকে কাজ না থাকায় অর্থনৈতিক স্থবিরতা মানুষের জীবনে বিশাল প্রভাব পড়ছে। আইএলও বলছে, করোনা ভাইরাসের কারণে ১৬০ কোটি মানুষ জীবিকার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আর বাংলাদেশ আছে উচ্চ ঝুঁকিতে। বেকারদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়বে সামাজিক সংকট। কেননা ক্ষুধার্ত মানুষ হয়ে উঠবে অপরাধপ্রবণ। হানাহানি বাড়বে। অস্থিরতা তৈরী হবে।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষ সহিংস হচ্ছে। এরপরও আমরা বলতে চাই, মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। পৃথিবীতে যুগে যুগে এমন মহামারি দেখা গেছে। সামনের দিনগুলোতেও যে আসবে না তা নয়। এখন উচিত আমাদের এই মহামারি থেকে শিক্ষা নেয়া। মানুষ নিজেদের শক্তির দম্ভে এতটাই বিভোর ছিল যে, প্রকৃতি বলে কিছু আছে ভুলতে বসেছিল। করোনা দেখিয়ে দিল মানুষের সীমাবদ্ধতা। এখন সময় এসেছে অন্তত আমাদের মত দেশে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার প্রতি নজর দেয়া। এ কাজগুলো সরকারকেই করতে হবে। প্রতিটি মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার দায় সরকারের উপরই বর্তায়।

শহর ছেড়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার গ্রামে চলে গেছে।  মধ্যবিত্ত গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। ঢাকায় এসে রোজগার করে মধ্যবিত্ত হয়। এদের ছেলেমেয়েরা ভালো লেখাপড়া করে। এখন সব স্বপ্ন ভঙ্গ করে গ্রামে ফিরতে হচ্ছে। মধ্যবিত্তের গ্রামে যাত্রা! রীতিমতো দুর্ভাবনার বিষয়। যেই মধ্যবিত্ত ঢাকার প্রাণ, যেই মধ্যবিত্ত অর্থনীতির প্রাণ, তারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে। প্রথমদিকে খবর ছিলো, শ্রমিক শ্রেণির লোকেরা, গার্মেন্টসের কর্মচারীরা গ্রামে যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, এমন মধ্যবিত্ত ঢাকা ছাড়ছেন যিনি ১৫ হাজার টাকায় ঢাকাতে এক বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সঞ্চয় ফুরিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই কর্মচ্যুত হচ্ছেন। অনেকের কোনো কাজ নেই। তাই ফিরে যাচ্ছে গ্রামে। বহু ভালো ভালো পরিবার গ্রামে চলে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে খবর পেলাম এক অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকরিজীবী মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বিনা কাজে রেখে শেষ পর্যন্ত তার ড্রাইভারকে বিদায় দিয়েছেন অতি কষ্টে। দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত হচ্ছে। ভোগ কমাচ্ছে। শিশুদের জন্য গরুর দুধ রাখত তা বন্ধ করেছে। দুই কেজি চিনির বদলে এক কেজি চিনি খাচ্ছে। সব খরচে মিতব্যয়ী হচ্ছে। এটা নতুন ঘটনা নয়। অর্থনৈতিক সকল সংকটে মধ্যবিত্তরা তা-ই করে। তবে কখনো সে ঢাকা ছাড়েনি। এবার ছাড়ছে। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত হচ্ছে। নিম্নবিত্ত দরিদ্র হচ্ছে। দরিদ্র হচ্ছে অতিদরিদ্র, আর অতিদরিদ্র আশ্রয় নিচ্ছে পথে-প্রান্তরে। এই যে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া, একটা গভীর সামাজিক সঙ্কট অপেক্ষা করছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭