ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/07/2020


Thumbnail

করোনা মোকাবেলায় সরকারের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আওয়ামী লীগের কিছু ব্যক্তির মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতারা বলছেন যে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা এবং কিছু মন্ত্রী-এমপি সরকারের বিরুদ্ধে স্যাবোটাজ করছে এবং সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য কাজ করছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে গোপনে কথা হলেও এইগুলো এখন আর গোপনীয় নেই। প্রকাশ্যে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা হচ্ছে, সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতিমধ্যে এই সমালোচনায় প্রকাশ্য হয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্যের পরেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করোনা আরো ২/৩ বছর থাকবে- এমন বক্তব্যের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন। দুঃখ প্রকাশ করলেও তিনি ঐ বক্তব্যটি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেছে বলে জানা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ক্ষোভ প্রকাশ্য হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমান প্রকাশ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দায়িত্বহীন আচরণ করছে। আওয়ামী লীগের আরেক এমপি একরামুল হক চৌধুরীও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট রয়েছে বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন এবং এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেছেন যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোন কাজ করছে না, স্থবির হয়ে আছে। তাঁরা যদি ঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কিছু অপদার্থ বসে আছে তাঁরা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে।

এসমস্ত বক্তব্যগুলো আগে গোপনে হতো, এখন প্রকাশ্যে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, তাঁরা মনে করছেন এটা শুধু ব্যর্থতা নয়; বরং সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যারা আছেন তাঁরা সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের এজেন্ডা বাস্তবায়বন করছে। তাঁরা এটাও মনে করছেন যে, যদি তাঁরা ষড়যন্ত্র না করতো তাহলে একের পর এক এরকম ভুল করতেন না। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হচ্ছে এবং এই ষড়যন্ত্রগুলো হচ্ছে মূলত ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল পদক্ষেপ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরনের জন্য। আগে এই সমালোচনাগুলো বাইরে হলেও এখন এগুলো প্রকাশ্যে দলের ভেতরে হচ্ছে।

শুধু এমপি বা মাঠের নেতারা নন, আওয়ামী লীগের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, তারাও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত এবং তাঁরা মনে করছেন যে, সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বলেছেন যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সম্পর্কে যে সমস্ত তথ্য পাচ্ছি তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং তিনি আসলে কার পক্ষে কাজ করছেন সেটা নিয়ে জনমনে যেমন প্রশ্ন আছে, তেমনি আমাদের মনেও প্রশ্ন আছে।

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আমরা আগে মনে করতাম যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বোধহয় নতুন পরিস্থিতির জন্যে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে এখন দেখছি যে, তাঁরা যা কিছু করছে তা ইচ্ছেকৃত ভাবে করছে এবং এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। সেই নেতা মনে করেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং দেশকে তিনি যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তা বিষ্ময়কর। এই জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য যখন সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে তখন বাংলাদেশে বিএনপি-জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের ভেতরে একটি অংশ করোনা ষড়যন্ত্র করছে বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা আরো মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন এবং এই বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন যে, শেখ হাসিনা সবকিছু জানেন এবং দেখছেন। নিশ্চয়ই তিনি যথা সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭