নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 08/07/2020
দুষ্টু, শয়তান, রাজাকারের আওলাদরা নানা দিক,পথ ঘুরে এখন সরকারের ঘনিষ্ঠ হয়ে প্রতি পদে পদে সরকারকে বিপদে ফেলছে, নষ্ট করছে বিভিন্ন দপ্তরের অফিস কালচার, দলের রাজনৈতিক কর্মীদের নীতি নৈতিকতা, দেশ জুড়ে তৈরি করেছে দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য। রাজাকারের আওলাদরা শুধু স্বাস্থ্য খাত নয়, উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় আর দপ্তরেই বেপরোয়া লুটপাট উৎসবে মেতে উঠেছে। এখন দুর্নীতি দমন এতোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এ যেন “পশম বাছতে কম্বল শেষ” হবার দশায় দাঁড়িয়েছে। তবুও সময় আছে, সেটা এখনি করতে হবে।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এমনকি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেও এখন জামায়াত নেতাদের আওলাদরা আর তাঁদের দোসররা ভালোমানুষ সেজে অনৈতিক উপায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে গেড়ে বসেছেন। রাইফেলধারী রাজাকারের আওলাদরাও গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিতে নিয়োজিত। স্বাস্থ্য বিভাগ, ছাড়াও বালিশ কেলেঙ্কারি, বই কেলেঙ্কারি, গাছ কেলেঙ্কারিতে যারা জড়িত তাদের অতীত হচ্ছে পাকি পন্থি। বিচার বিভাগেও তাদের সদম্ভ পদচারণয় ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে’। পদ বাণিজ্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ছোটখাটো পদও তারা দখলে নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। জামায়াতের এমপি’র আওলাদও বিশেষ যাদুর কাঠির স্পর্শে এখন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের বড় নেতা। উনাদের অনুসারীরা মূল দলে বা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনে মাঝারী, ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে নিয়েছেন। তারা সাংগঠনিক প্রভাব আর টাকার বিনিময়ে শুধু পদোন্নতি নয়, বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি, সাপ্লাই, ইত্যাদি নানা কাজেও তারা নিজেদের কব্জায় নিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও সরকারের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ জামায়াত শিবিরের লোকেরা পাবলিসিটির কাজ করেছেন। তাঁদের শেকড় এতো দূরে সে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে যেমন, দুদকের কাছ থেকে দুর্নীতিবাজ হয়েও সৎ লোকের ছাড়পত্র নিতে সক্ষম হয়েছে তারা।
রাজাকারের আওলাদরা শুধু সরকারী বিভিন্ন দপ্তর আর আওয়ামী লীগের ও তার সহযোগী সংগঠনের বড়, মাঝারী, ছোট পদ দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা মিডিয়াতেও জেঁকে বসেছেন। ১৬,০০০ টাকা মাসিক বেতনের অনেক সরকার সমর্থক সাংবাদিক আছেন যারা ঢাকা শরে এক বা একাধিক ফ্লাটের মালিক বনে গেছেন। তারা সারা বছর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বললেও সংকট কালে একটা ছোট্ট বক্তব্য দিয়ে সরকারের সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করে ছাড়ে। এটা অবাক হবার কথা যে, যারা রাতে টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগ নিয়ে অন্ধের মত গলাবাজি করেন তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০০ ++ সাংবাদিক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকি সরকারের টাকায় পাকিস্তান সফর করে এসে নানা ভাবে পাকিস্তানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, “এক্সেলেন্সি, দুনিয়ার কোথাও যুদ্ধে পরাজিত প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নতুন প্রশাসনে আর দায়িত্ব দেয়া হয় না। বাংলাদেশে আপনার মহানুভবতায় ওরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে এই-ই তা যথেষ্ট, যুদ্ধোত্তর দেশে এ ধরনের অফিসার পুনর্বাসনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। দেখুন না সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয় হলে, মার্কিন প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মচারী এমন কি রাষ্ট্রদূতদের পর্যন্ত বিদায় নিতে হয়।“
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হলে শুধু মন্ত্রী সভাই বদল হয় না, সচিব, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী সে দেশীয় আমলা, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, বিজনেস এক্সিকিউটিভস, ডক্টরস, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ, ইত্যাদি সব পেশার নেতৃস্থানীয়দের এনে সরকারি প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দেন। এঁরা শুরুতে কিছু ভুল করে সঠিক শিক্ষা লাভ করেন কিন্তু এরা ষড়যন্ত্র করেন না। বিভিন্ন পেশায় কর্মরত দলীয় মতাদর্শের পরীক্ষিত সৈনিকদের নিয়োগ দেন। তার কাজে তুলনামূলক কম দক্ষ হলেও তারা দেশ আর সরকারের কোন ক্ষতি করেন, চেয়ার তাঁদের আস্তে আস্তে তৈরি করে নেয়, সেই পদে টিকে থাকার যোগ্য করে নেয়।
সরকারের পক্ষ থেকে ‘নাগরিক আইন ২০১৬-এর চূড়ান্ত খসড়া’ নিয়ে বহুবার অঙ্গীকার করার পরেও তা আইনে রূপ নেয় নি কারণ ঐ খসড়া আইনে বলা হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ইত্যাদি ঘৃণ্য অপরাধে অপরাধী ও মানবতা-বিরোধীদের সন্তানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করা হবে। রাজাকারের আওলাদরা সরকারি চাকরি, বিশেষ করে ক্যাডার সার্ভিস বা পিএসসি’র চাকরি’ না পায়, তাদের সন্তানেরা যাতে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে থাকে তার জন্য যা যা করণীয় সরকার সেই ব্যবস্থা ঐ খসড়া আইনে আছে। তাই ঐ খসড়াটি আইনে রূপ নিতে পারেনি। এমন অনেক আইনের খসড়া হয়ে পড়ে আছে যুগের অধিক সময়, যেমন ন্যাশনাল বিল্ডিং কোর্ড, ইত্যাদি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্র ছায়ায় থাকায় রাজাকারের আওলাদরা এদেশের নাগরিক হয়ে নানা অনৈতিক উপায়ে দেশের নীতিনির্ধারণী গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। তারা আমাদের দেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে নিজের ও নিজেদের মতাদর্শের মানুষদের আর টাকা-লোভী তথাকথিত স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে সাথে নেয়। বাংলাদেশের অস্তিত্বে যাদের বিশ্বাস নেই, এমন বহু ব্যবসায়ী, আইনজীবী, আমলা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, ইত্যাদি পেশায় আছেন যারা রক্তে পাকিস্তানী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হিসেবে চিহ্নিতরা টাকার বিনিময়ে ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধীদের পক্ষাবলম্বন করে। উন্নত দেশে আমেরিকাতে, কিংবা আমাদের এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতেও তাদের স্বাধীনতার বিরোধীদের তিন পুরুষকে সেই দেশের ২য় শ্রেণির নাগরিক করে রাখা হয়েছে বলেই তারা সার্বিকভাবে এগিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াতে ‘ছিনিল্পা’দের (জাপান-পন্থী) এখনো সরকারি পলিসি লেভেলে কাজ করার সুযোগ আছে তেমন চাকরি, দেওয়া হয় না।
কিন্তু ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামে ত্রিশ লক্ষ সাধারণ মানুষ ও দু শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা ও তিন লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি রাজাকারের আওলাদেরা, হাওয়া ভবন ঘুরে, সরকারী দপ্তরে সাপ্লাই, ঠিকাদারি সহ মিডিয়া আর বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে রেখে সরকার দলীয় কিছু অসৎ রাজনীতিকের ছত্রছায়ায় জনসাধারণের টাকা তসরুপ করে বিদেশে পাচার করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিচারের আর প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অঙ্গীকার করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলেও দৃশ্যত সরকারের বড় অংশ রাজাকারের আওলাদদের হাতের পুতুল। সরকার প্রধান দুর্নীতির বিরুদ্ধে, আর রাজাকারের নষ্ট আওলাদদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে সেই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। দুর্নীতিবাজদের নামে মামলা, কিংবা জরিমানা অথবা শুধু বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের খবর এখন আর জনমানুষের প্রত্যাশা নয়; তাঁদের প্রাণের দাবি হচ্ছে দল আর প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এসব দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক কর্মী, সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীকে অপসারণ, অনতিবিলম্বে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। বাংলার অধিকাংশ মানুষ রাজাকারের আওলাদদের জয়জয়কার দেখতে চান না।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭